মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি
গতকাল ২৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) টিলাগাঁও ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী কৃষকদল আয়োজিত ১ ও ২ নং ওয়ার্ডে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়। এলাকার কৃষক সমাজ, সাংবাদিক ও জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের নেতা- কর্মীরা ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।
বর্ষার আগমনে নতুন ধান রোপনে প্রেরণা যোগাবে এই কর্মসূচী।
অত্র ইউনিয়নে ১৫-১৬ বছর এ ধরণের কৃষিসেবা আওয়ামী দুঃশাসনে দলটিকে করতে দেয়া হয়নি। আওয়ামী দোসরদের বিদায়ে অনেকদিন পর এমন একটি মহতি কাজে মিলিত হওয়ার সুযোগ পান অত্র ইউনিয়নের কৃষক-জনতা। সার ও বীজ নিতে এসে সবাই আবেগে আপ্লুত ছিলেন। কৃষকদলের জন্য দিনটি ছিল আরও বেশি আনন্দের।
অনুষ্ঠান আয়োজন ও পরিচালনায় ছিলেন টিলাগাঁও ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সিনিয়র সভাপতি, জনাব মোঃ ইউনুস আলী। তিনি জানালেন: ” দেশ বাঁচলে কৃষক বাঁচবে। তারেক জিয়ার নির্দেশ, কৃষকদলের বাংলাদেশ”। এই প্রেক্ষাপটে আমরা কৃষকদের জন্য বিনামূল্যে সার ও ধান বীজ বিতরণ করছি। সম্পুর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সবাইকে কৃষি উপকরণ দেয়া হবে। আওয়ামী দোসরদের বাদে সব সাধারণ কৃষকভাইরা আসবে, বিনামূল্যে সবকিছু নিয়ে যাবে। তবে আওয়ামীলীগ করা অসহায় কৃষকদের বিষয়েও আমরা নমনীয়। তারা এই সেবা গ্রহণ করতে আসলে আমাদের দিতে কোন কার্পণ্যতা থাকবে না। ১ ও ২ নং ওয়ার্ডে বিনামূল্যে সার ও ধান বীজ দেয়া হবে। কৃষকরা ১০ জন করে এসে নিয়মিত সার ও ধানবীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। আমি আশা করি এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলনে টিলাগাঁও ইউনিয়নের কৃষকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তবেই এই আয়োজন সফল হবে।”
টিলাগাঁও ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সেক্রেটারী মোঃ রুবেল শাহ্ বলেন: ” আমরা এই সিজনে নিয়মিত পটাশ, বাংলাদেশী সার (টিএসপি), আমন (৪৮) বীজ বিতরণ করব। কৃষকরা কেন এখন নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে পারেনি? তারা ধানের ন্যয্য দাম পায়নি কখনও। আমরা এই জটিল বিষয়টি নিয়ে এবার কাজ করব। ধানের সঠিক দাম পাওয়া কৃষকভাইদের অধিকার।”
১ নং ওয়ার্ড, বিজলী গ্রামের কৃষক আঃ বাসিতের আক্ষেপ; ধানের দাম আমরা কখনও ১ হাজার টাকার ওপরে পাই না। আমরা এতই অভাগা! একজন চাল ব্যবসায়ী এক বস্তা চাল যদি ৩৫০০ টাকায় বিক্রি করতে পারে, ধানের মহাজন কেন আমাদের ধানের মন ১৫০০ টাকা দিতে পারবে না?”
কে দেবে কৃষক আঃ বাসিতের উত্তর…
টিলাগাঁও ইউনিয়ন কৃষকদলের ২ নং ওয়ার্ড সেক্রেটারী আঃ বারেক বলেন, আমরা প্রতি কৃষককে ২০ কেজি সার ও ৫ কেজি ধান বীজ দিচ্ছি। তবে, টিলাগাঁও ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড সভাপতি জুনায়েদ আহমেদ বললেন ভিন্ন কথা, ” আমরা শুধু বিতরণই করব না, আমাদের মনিটরিং অব্যহত থাকবে। এই সেবার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাটা জরুরি। সেবা নিয়ে কেউ বাজারে এসব বিক্রি করতে পারবে না। প্রতিটি জমির খোঁজ নেয়া হবে। জাতীয়তাবাদী কৃষকদলকে সহযোগিতা করবেন- টিলাগাঁওয়ের সহকারী কৃষি অফিসার (এডি) সুকান্ত পাল।
সেবা সহযোগিতা পাওয়া কৃষক ফুরকান মিয়ার অভিমত: জমির পরিমাণ বেশি হলে সার আরও বেশি দরকার হয় আমাদের। তারপরও টিলাগাও ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী কৃষকদল থেকে ২০ কেজি সার ও ৫ কেজি ধানের বীজ পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত। ২ নং ওয়ার্ডের কৃষক আঃ বাসিত এর ভাষ্য: বিনামূল্যে পাওয়া সার ও বীজ দিয়ে আমরা এবার ধানের ফলন আরও বাড়াতে পারব।
বিশেষ সাক্ষাৎকারে- টিলাগাঁও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি মোঃ হুমায়ুন মিয়া কৃষক দলের সব কর্মীদের সাধুবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন; কৃষকদের সাথে সবার আত্মার সম্পর্ক থাকা উচিত। উনার কষ্ট করলেই আমরা খেতে পারব পেট ভরে। আমাদের সবার দল মত নির্বিশেষে দুস্থ ও অসহায় কৃষকদের পাশে থাকতে হবে। আমরা বিএনপির কাছে অনুরোধ জানাই- শুধু এই বর্ষায় নয়, সব সময় আমাদের কৃষক ভাইদের প্রতি আপনারা এগিয়ে আসুন। দলের পক্ষ থেকে আমাদের কৃষকদের জন্য সবসময় অনুদান অব্যাহত রাখলে আমরাও এ ধরণের মহতি ও সেবাকাজ অব্যাহত রাখতে পারব। “
টিলাগাঁও ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ৯ টি ওয়ার্ডে ৫১ জন করে সদস্য আছে। ১০ জন সবলচাষী আর ৪১ জন অসহায়। যাদের জমি জিরাত নেই। অধিকাংশই বর্গা চাষ করে থাকে অন্যের জমিতে। অন্তবর্তী সরকারের এসব গরীব চাষীদের কৃষি ঝণ দিয়ে পাশে থাকাটা জরুরি। এই ইউনিয়নে আগে কোন ইউনিট ছিল না। ছিল না কোন কৃষক নেতা। ২০১৩ সালো এখানে প্রথম কৃষকদের ভাগ্যেন্নয়নে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল প্রতিষ্ঠিত হয়। ৯ টি ওয়ার্ডে ১৫০০ কৃষক চলে আসে একটি পরিবারের ভেতর! ৩৫’শ ভোটারের এই ইউনিয়নে কৃষি উন্নয়নে তাই সরকারী সহযোগিতা খুব প্রয়োজন।
ছবি: রাজিব আহমেদ