ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে মিরপুর শেরে বাংলা মাঠে আজ মুখোমুখি হবে তামিম ইকবালের ‘বাংলাদেশি ব্র্যান্ড’। এরই মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে নয়া অধিনায়কের হিসাবনিকাশও। কতটা সফল হতে পারবেন দলনেতা? পারবেন কি মাশরাফি বিন মুর্তজার ওয়ানডে সাফল্যের মশাল বহন করতে? উত্তরটা দিলেন তামিম নিজেই। বললেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করার আগে আমি দুইটা টুর্নামেন্টে ক্যাপ্টেন্সি করেছি। মহামারির কারণে দুর্ভাগ্যবশত আমরা বেশকিছু সিরিজ মিস করেছি। দু’টো টুর্নামেন্টই আমার জন্য কঠিন ছিল। অবশ্য তাতে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। যদি ভালো করে থাকি তাহলে সেটা সামনে এগিয়ে নেবো।
আর স্টাইল অব ক্যাপ্টেন্সি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হবে। এখন যদি আমি একটা কথা বলি আর সিচুয়েশন মাঝখানে ভিন্ন হয় এটার কোনো মূল্য নেই। আমার কাছে মনে হয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বুঝতে পারবে, আর আমিও বুঝতে পারবো আমি কোন দিকে যাচ্ছি।’
বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপ এরপর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্বে দিয়েছেন তামিম। ১২ ম্যাচে দলনেতা হিসেবে অর্জন মাত্র ৪ জয়। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে ২০১৯ এ শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে সিরিজে ৩ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দলনেতা শুরুটা হয়েছে ওই সিরিজে হোয়াইটওয়াশের মধ্যদিয়ে। শেষ ১৫ ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে টাইগার ভক্তকূলের আস্থা অর্জন করতে অনেকটাই ব্যর্থ তামিম। শুধু কি তাই? স্ট্রাইক রেট নিয়েতো সমালোচনা তুঙ্গে। গতকাল এমনই এক প্রশ্নে খানিকটা মেজাজও হারান টাইগার অধিনায়ক। পরক্ষণেই জানিয়ে দেন তিনি প্রস্তুত। তামিম বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে যত ক্রিটিসিজম আমি শুনেছি আমার মনে হয় না বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার শুনেছে। তো ওইদিক থেকে আমি পুরোপুরি তৈরি। যেটা আমার সঙ্গে হয় কিছু কারণে আবার কিছু অকারণে হয়। আমি ভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। আপনি যখন অধিনায়কের দায়িত্বটি গ্রহণ করেন তখন এটার সঙ্গে অনেক কিছু আসবে। এখানে ক্রিটিসিজম আসবে, রিঅ্যাক্টও আসবে। আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় নিজের দায়িত্বে ঠিক থাকা। আমি আগামীকাল থেকে সামনে এগিয়ে যেতে মুখিয়ে আছি।’
তামিমের নেতৃত্ব নিয়ে এতটাই সন্দেহ যে, ২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত দলে থাকবেন কিনা সেটিও রয়েছে প্রশ্ন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড
(বিসিবি) তাকে নেতৃত্ব দিলেও তিনি যে সে পর্যন্ত অধিনায়ক থাকবেন তারও নিশ্চিয়তা দেয়নি। এ বিষয়ে তামিম বলেন, ‘২০২৩ পর্যন্ত থাকলে একটা ব্যাপারে ধারাবাহিকতা দলের জন্যই ভালো। এটা একটা কয়েকজন খেলোয়াড় কিংবা নেতৃত্বের ক্ষেত্রে হতে পারে। আমি মনে করি, যদি আমি ভালো করি, দল ভালো করে তাহলে ২০২৩ বিশ্বকাপে আমার
অধিনায়কত্ব করতে না পারার কোনো কারণ দেখি না। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে উপভোগ করা। এমন হতে পারে আমি ভালো করছি না কিংবা দল ভালো করছে কিন্তু আমি উপভোগ করছি না, তখন ব্যাপারটা ভিন্ন হতে পারে। এই মুহূর্তে আমি খুব রোমাঞ্চিত। সামনের ম্যাচ, সামনের সিরিজের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। কি হবে সময়ই এটা বলে দিবে।’
তবে দলনেতা হিসেবে তামিম ইকবাল এরই মধ্যে তার লক্ষ্য স্থির করেছেন। তিনি এই দেশের ক্রিকেটকে বিশ্বে ব্র্র্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। তিনি বলেন, ‘যেটা আমি সবসময় প্রায়োরিটি দিই যে, আমাদের বাংলাদেশি ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট ডেভেলপ করতে হবে। আমি সবসময় একটা কথা বলেছি যে, প্রত্যেকটা দেশের নিজের নিজের স্টাইল আছে। সুতরাং আমার মনে হয় না আমাদের অন্য কাউকে ফলো করা উচিত। আমরা হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো স্ট্রং না, বা অস্ট্রেলিয়ার মতো বিল্ডআপ না। তবে আমাদের এমন অনেক অ্যাডভান্টেজ আছে যা অন্যদের টিমে নেই। আমি যেটা তৈরি করতে চাই সেটা হলো- বাংলাদেশি ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট, যেটা আমরা খেলি। আমরা অন্যদের ফলো না করে ওটাতেই ফোকাস করতে চাই। আমাদের যেখানে স্ট্রেন্থ, যেগুলো দিয়ে আমরা ভালো খেলতে পারি সেটা দিয়ে ব্র্যান্ড। সেখানেই আমরা ফোকাস করছি।’
তবে ঘুরে-ফিরে প্রশ্ন আসছে মাশরাফির ধারাবাহিকতা তামিম ধরে রাখতে পারবেন তো। তবে আত্মবিশ্বাসী নয়া অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘মাশরাফি ভাই দলের জন্য অনেক কিছু করেছেন। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি আমার সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করবো। আর খেলোয়াড়দের কথা ধরলে আপনি কার কথা বলছেন। কিছু খেলোয়াড় আছে যাদের মনে হয় আমি কাছে গিয়ে একটু বুঝাই আবার কয়েকজন আছে যাদের নিজেদের জায়গা প্রয়োজন হয়। তো এটি বুঝতে হবে আপনি কোন খেলোয়াড়ের বিষয় নিয়ে ভাবছেন। সেভাবেই কাজ চালাতে হবে।’