Search
২০শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ / ৭ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২১শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ২:০৯

অবৈধপথে বিদেশ বিভুই ‘না’ স্বপ্নের মৃত্যু…

মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি

আজকেও খবর এলো। লিবিয়ায় ২৩ লাশ উদ্ধার।
দুভার্গ যে মানুষকে এভাবে কাঁদায়। তা স্বপ্নের বিদেশের গল্পেই এখন সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। খবর প্রকাশ এই দীর্ঘ লাশের ফিরিস্তির ২৩ জনই গিয়েছিল আদম ধরে। সবার গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ টু ইতালি! আলো ঝলমলে বিদেশের স্বপ্ন তো উঁকি দেয়নি, জীবনের ঝারবাতির সলতে দালালচক্রের ফাঁদে পড়েই নিভে গেল।

অভিযোগ নিউজ বিডি ২৪ | OVIJOG NEWS BD 24


এই ২৩ যুবকের লাশের বোঝা এখন কতগুলো পরিবারকে পথে বসিয়ে দিলো। আজকের বাংলাদেশের প্রধান শিরোনামে চোখ পড়লেই সেটা বোঝা যাবে। এই দায় ভার কার? দেশ থেকে চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে হবে আদম ব্যবসায়ীদের ‘বডি কন্ট্রাক্ট’ নামের মরণঘাতী ধান্দাবাজী এই প্রক্রিয়া। বিদেশে পাঠাানোর নামে বডি কন্ট্রাক্টের খেল যে কি, কতটা ভয়ানক জাতি এখন টের পেল। ভূমধ্যসাগরে নিয়ে নৌকায় ইতালি পাঠানোর খেসারত যে অবধারিত মৃত্যু ঘটায় সামনে এইভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ বিভুইয়ের স্বপ্নে পা দেয়া যুবকরা এখন কিছুটা হলেও বুঝতে পারবে হয়ত। তবে সতর্কতার শতভাগ দায়িত্ব নিতে হবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে।
শুধু যে এখানে মানুষের জীবনের প্রদীপ নিভে যায়, এটাই তো শেষ কথা নয়। প্রতিটি ‘বডি কন্ট্রাক্টের পেছনে মানুষ জায়গা জমি ঘর বাড়ি গরু ছাগল স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে সর্বস্ব শেষ করেছে শুধু ইউরোপ যাবে বলে। আদম যে অবৈধ পথে লিবিয়ার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার মত মাইলফল সৃষ্টি করবে এটা দালালচক্র হাইড রাখে। সাধারণ গ্রামবাসী শুধু এটাই জানে তারা ইটালিতে যাবে। কয় বছর কাজ করেই নাগরিকত্ব পাবে। পরিবারের যত দুঃখ জ¦ালা কষ্ট, ঋণের বোঝা সব হালকা করবে। ইতালি পাঠাতে নয়, বলব প্রতিটি মৃত্যুর জন্য যে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা আদমব্যাপারীরা খেয়েছে এই প্রতারণার নামই হলো ‘বডি কন্ট্রাক্ট!’
আমরা অনেকেই জানি না, অবৈধ পথে এই ভূমধ্যসাগর পাড় হয়ে ইউরোতে যাওয়ার সহজ পথটিই ছিল লিবিয়া। ঢাকার বড় বড় আদমরা যাকে তীর্থস্থান মনে করে থাকে। কোন মতে লিবিয়ায় নিয়ে যায় আদম। এদেশের ঠিক করা আদমের এজেন্ট থাকে লিবিয়ায়। ওরাও সেখানে এদেশের আদমের সাথে বনিবনা না হলে এদেশের বিদেশী যাত্রীর সাথে অকথ্য নির্যাতন ও অপহরণকারীর বেশে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে। ইউটিউব দেখলে পাবেন লিবিয়ায় ওসব আদম দালাল বাহিনীর নানান লোমহর্ষক গল্পের কাহিনী। অনেকে সেখানেই প্রাণ শেষ! আর এদেশের আদমের সাথে যাদের বনিবনা মিলে যায়, ছোট ও মাঝারি নৌকায় তাদের সব যাত্রী তারা পাড় ইউরোপে পাড় করে দেয়ার কন্টাক্ট নেয়। ভাল একটি দেশের অভিভাবসন গ্রহণ করার এই রীতির নাম ‘বডি কন্ট্রাক্ট ডিড’ বলা হয়।
এদেশের টাকা খাওয়া আদম ওখানকার এজেন্টকে টাকা দিলে ওরাই বিদেশ যাত্রীর থাকা-খাওয়া, নৌকা ভাড়া ইত্যাদি দেখে থাকে। ভুমধ্যসাগরের ঢেউ দেখে তো তখনই বুকফেটে মরার কথা। কিন্তু চোখে মুখে টগবগে বাঙালী যুবকদের যখন থাকে ছোট ভাই বোনকে মানুষ করার স্বপ্ন। নিজের সন্তান স্ত্রী বাবা মায়ের ফুটফুটে মুখের প্রতিচ্ছবি। তখন আর ভূমধ্যসাগর কেন আটলান্টিক প্রশান্ত মহাসাগরও ওদের লটাতে পারে না। এভাবেই পূরণ হয় কারও স্বপ্ন। আর প্রবল ঝড়ের কবলে নৌকা ডুবিতে গহীন সাগরে ঘটে যায় অজানা কত জনের সলিল সমাধি! এখনও এমন বহু পরিবারের কত সন্তানের কোন খবর আজও মেলেনি। এমন কতই না পরিবারের স্বপ্ন ডুবে গেল অথৈ সাগরের অতলে।
তারপরও আমাদের বাংলাদেশে এখনও টিকে আছে এই মাফিয়া চক্র! যারা এদেশের সাধারণ মানুষের টাকা পয়সা লুটে নিচ্ছে মিথ্যে প্রলোভনে। আর ঐ দেশের নিজেদের জ্ঞাতিগোষ্ঠী দিয়ে প্রবল সাগরে নিয়ে মানুষ মারছে নির্বিচারে। কারওবা লাশের ভাগ্য ভাল হলে ভেসে আসছে সাগরের তীরে! অজ্ঞাত নামা বেওয়ারিশ লাশ হয়ে এভাবেই নিরবে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে তরতাজা মানুষগুলো পৃথিবী থেকে।
আদমচক্র, দালাল আর লিবিয়ার মাফিয়াচক্র সবাই-তো বাংলাদেশী। পত্রিকা টেলিভিশনে সবার নাম শোনা গেলেও কোন এক অদৃশ্য ইশারায় খুনী আদমরা এখনও থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ছবি : ইন্টারনেট

Facebook
Twitter
LinkedIn