গত ছয় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ফলে দেশের ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। ভোজ্যতেল ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। আবার সিন্ডিকেটের কারণেও বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে তেল আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, ২০২০ সালের আগস্ট থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ঊর্ধ্বমুখী আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের প্রভাবে স্থানীয় বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ভোজ্যতেলের মূল্য প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও বলা হয়, ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় বাজারে পরিশোধিত ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি পায়। সে সময় সরকার ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে ভ্যাট হার কমিয়ে আদেশ জারি করে। সে আদেশে আমদানি পর্যায়ে অপরিশোধিত সয়াবিন, পাম তেল ও পামওলিন আমদানিতে এর শুল্কায়নযোগ্য মূল্যের ৬৭ দশমিক ৬৭ শতাংশের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করে। যার মাধ্যমে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ বহাল রেখেও শুল্কায়নযোগ্য মূল্য এক তৃতীয়াংশ কমানো হয়। যার ফলে ভ্যাটের হারও এক তৃতীয়াংশ কমে। ভোক্তারা সুফল পাওয়ায় এই আদেশের মেয়াদ ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করে সরকার।
চিঠিতে বলা হয়, ভোজ্যতেলের সরবরাহ পর্যায়ে যাতে বিঘœ না ঘটে সে জন্য ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আদেশ জারি করা হয়। যাতে উৎপাদন ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে আরোপিত ভ্যাট শর্তসাপেক্ষে অব্যাহতি দেয়া হয়। এর ফলে ভোজ্যতেলের সরবরাহ লাইন স্থিতিশীল হয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল প্রায় এক হাজার ৫৩০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অপরিশোধিত পাম তেল প্রতি মেট্রিক টন এক হাজার ৫০৮ ডলার ও পামওলিন এক হাজার ৫২০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে; যা স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
আরও বলা হয়, বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৪৩ থেকে ১৪৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা পাম তেল ১৩৩ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে আমদানিকৃত অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল স্থানীয় মিলে পরিশোধিত হয়ে বাজারে প্রবেশ করলে প্রতি লিটার সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য আরও বাড়বে। ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনায় ভোজ্যতেলের বর্তমান মূল্য অস্বাভাবিক বলে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আমদানি পর্যায়ে ভ্যাটের বিদ্যমান কাঠামো অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সরকারের রাজস্বের পরিমাণও বাড়তে থাকে।
চিঠিতে বলা হয়, অপরিশোধিত তেলের বর্তমান মূল্য বিবেচনায় গত ৬ মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সে হিসেবে অপরিশোধিত সয়াবিন, পাম তেল ও পামওলিন আমদানিতে এর শুল্কায়নযোগ্য মূল্যের ৬৭ দশমিক ৬৭ শতাংশের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলেও এই খাতে সরকারের কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণের পরিমাণ হ্রাসের সম্ভাবনা নেই। সেই সঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় গতি সৃষ্টির লক্ষ্যে বর্তমানে উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ অথবা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট (মূসক) হতে শর্তসাপেক্ষে অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন। ভোজ্যতেলের বাজার ও সরবরাহ লাইন স্থিতিশীল রাখতে অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়।
এনবিআরের হিসাবে, প্রতি লিটার ১৬৮ টাকার সয়াবিন তেল আমদানি পর্যায়ে সরকার শুল্ককর পায় ১৭ টাকা। গত বছর প্রতি লিটারের দাম ছিল ১৩৫ টাকা। তখন প্রতি লিটারে শুল্ককর পেত ১৫ টাকা। অর্থাৎ আমদানি মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত মাসে সয়াবিন আমদানিতে শুল্ককর পেয়েছে ৬৫৯ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর একই সময় পেয়েছে ৩৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ সাত মাসে রাজস্ব বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে করহার কমাতে ব্যবসায়ীরা সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছেন।