[অভিযোগ ট্যাবলয়েড -এ প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদন ]
দেশে কিডনি রোগী আকস্মিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বছরে বাড়ছে দিগুণ। বর্তমানে কিডনি ও কিডনিজনিত রোগে ভুগছে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। যা খুব উদ্বেগজনক। দেশের চিকিৎসামান ও চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে এখন ভয়াবহ একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিশেষকরে বেসরকারি চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে জনমনে খুবই নাজুক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। চিকিৎসা খরচ কমার কোন প্রাণান্ত প্রচেষ্টা না থাকার কারণেই মূলতঃ কিডনি রোগীর এক বছরে দিগুণ বেড়েছে। বিগত দুই বছরে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। এবং কিডনি বিকল হয়ে মারা গেছে ধরুন; আরও তিনগুণ। এমন ভয়াবহ একটি নির্দিষ্ট রোগ যদি ক্রমাগত বেড়েই চলে, কম আয়ের এই দেশের মানুষের মৌলিক চিকিৎসার অধিকার পুরোপুরি ক্ষুন্ন হবে। দেশের চিকিৎসা সেবা’ও প্রশ্নের মুখে পড়বে স্বাভাবিক। এখনই এই বিষয়টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের আমলে না আসলে এই রোগও মহামারীর পর্যায় চলে একদিন।
সেই দিনটি হয়ত বেশি দূরে নয় …
অধিকাংশ হাসপাতালেই কিডনি রোগীরা বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় এসে ভর্তি হয়। অনেকে আসেন লাষ্ট স্টেজে। এটা প্রধানত গ্রামের রোগীর ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। জীবন বাঁচাতেই তো মানুষ কোন উপায় না পেয়ে ছুটে আসেন হাসপাতাল-ক্লিনিকে। হোক সরকারি অথবা বেসরকারি। প্রাথমিক পর্যায়ের রোগীরা চিকিৎিসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফিরে যাচ্ছেন বাসায়। কিন্তু যারা সিরিয়াস অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন, এমন রোগীর সু-চিকিৎসা মাঝপথেই থেমে যাচ্ছে। যা আরও হতাশাজনক একটি বড় ধরনের শঙ্কা। এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যায়; চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় আশি ভাগ রোগীই শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে পারছে না। কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয় খুব বেশি। আর্থিক অচ্ছল রোগীদের ক্ষেত্রে এটা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক থেকে কম খরচের হাসপাতালের সন্ধানে ছুটছেন।
প্রাইভেট ক্লিনিক-হাসপাতালে সামান্য আয়ের একজন কিডনি রোগী বেশিদিন চিকিৎসা করাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছেন। চিকিৎসার মাঝপথে মানুষের আর্থিক সঙ্গতির অভাবের এই বিষয়টা অনেক সময় চিকিৎসকদেও বিবেককেও নাড়া দেয়। রোগীর অভিভাবকের কাছে টাকা পয়সার সংকুলান না হলে হাসপাতাল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ এমন রোগীদের দায়িত্ব নিতে চায় না। অনেক সময় সরাসরি অপারগতা প্রকাশ না করে; রোগীকে সরকারি হাসাপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সাধ্যে কুলালেও রোগীর শাররিক অবস্থা থাকে সঙ্কটাপন্য। ডায়ালাইসিস স্টেজের একজন মানুষকে নিয়ে এক হাসপাতাল থাকে আরেক হাসপাতালে ছুটোছুটি যে কতটা অমানবিক একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, তা এই দেশের ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না। কাকে আপনি কিভাবে বিষয়টা বুঝাবেন। সবকিছুর প্রধান অন্তরায়, প্রথমেই জগৎ সংসাওে গরীব ও মধ্যবিত্ত হয়ে জন্ম নেয়া। এই কথাটাই বলে থাকেন অধিকাংশ রোগীর পরিবার। দ্বিতীয় বিব্রতকর পরিস্থিতিটা হচ্ছে গিয়ে ভাগ্যেও কোন অভিসম্পাতে না বুঝে একটা বেসরকারি হাসপাতালে কিডনি রোগীকে নিয়ে যাওয়া। মূলতঃ সবই তো করার তাগিদ থাকে একজন মানুষকে সুস্থ করার আপ্রাণ ইচ্ছে থেকে। আবেগের তাড়নায়। আকাশ-পাতাল খরচের বিষয়টা নিয়ে তো অনেক সুনামধন্য প্রাইভেট হাসপাতাল কথাই বলতে চায় না। একবার শিক্ষা হলে দ্বিতীয়বার আর কেউ পারতপক্ষে রোগী নিয়ে ব্যবসার লালসামার্কা হাসপাতাল ক্লিনিকে পা মাড়ান না। আর যারাই মনের অজান্তে বা ভুলে চলে যাচ্ছেন, চিকিৎসার এক পর্যায়ে উপলব্ধি করছেন, হাসপাতালের খরচ যোগানো তো খুব কষ্টদায়ক ব্যপার হয়ে যাচ্ছে।
এটাই এখন দেশের বেশির ভাগ প্রাইভেট হাসপাতালের নিত্যদিনের ঘটনা। রোগীর অভিভাবকরা আশাহুতভাবেই অপারগতার কথাটি বলছেন। যতই ভাল একটা কিডনি হাসপাতাল হোক, সেখানে রোগী নিয়ে পড়ে থাকার সামর্থ হারাচ্ছেন অনেকেই। বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে যেটা দেখা গেছে; ডায়ালাইসিস খরচ নিয়েই সবচেয়ে বেশি চিন্তা মানুষজনের। ভয় থেকে অর্থ যোগানের চিন্তার ভাজটাই বেশি দেখা যাচ্ছে। ডাক্তার ফি আর বিভিন্ন টেস্ট আর দৈনিক হাসপাতাল বিল পে করতেই দিশেহারা মানুষ। এরপর যদি আরও গলাকাটা রেট ধরা হয় সর্বশেষ ডায়ালাইসিস স্টেজে এসে, তো মানুষ কিভাবে বাঁচার আশা দেখবে। ‘কিডনি বিকলের’ মতো এতো জটিল রোগে গরীব, অসহায় ও মধ্যবিত্তরা কিভাবে এক সপ্তাহ পর পর বা দীর্ঘমেয়াদী ডায়ালাইসিসের খরচ বহন করবে। এটা পুরোই একটা বিরাট বোঝার মতো বইতে হচ্ছে দেশের এখনকার জটিল কিডনি রোগীকে। এভাবে খরচের সামর্থ রাখছে না বেশির ভাগ রোগীর পরিবার।
ডায়ালাইসিসের খরচ প্রকৃত খরচ যা হয়, সব হাসপাতালে কি সেভাবে বিল ধরা হচ্ছে। তার চার-পাঁচগুণ টাকা নেয়ার মতো ঘটনা না ঘটলে কি রোগীরা আজ ব্যয় বহনে এতটা নাজেহাল হয়? ৪০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০০০ টাকা ডায়ালাইসিসের খরচ, কোথাও কোথাও আরও বেশি নেয়ারও ঘটনা ঘটছে। সঠিক একটা নির্দেশনা দিয়ে গরীবকে উদ্ধার করা কেন হয় না হাসপাতাল প্রতিষ্ঠানগুলোতে। নাকি কিডনি রোগের মত ভয়াবহ ব্যধিতে না মেরে মানুষকে কর্তৃপক্ষ আগে টাকার চিন্তায় মারার যেন নতুন কৌশল শুরু করেছে?
রোগীর জীবন বিপন্ন হলেও হাসপাতালগুলো দুটো টাকা কম নেয় না। টাকা পয়সার ছাড় না দেয়ার দোষে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল উভয় যেন একই পাঠশালার ছাত্র! মানবিকতা শুধু লেকচারে জীবিত। কার্যত রোগীরা তা কমই ভোগ করছে। অভাগাদেও রোগেও মরণ। অনটনেও মরণ। একটু ভাল আয় করতে সক্ষম মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্যই নামী হাসপাতালে আসেন। পারতপক্ষে ভুলেও সরকারি হাসপাতালের মুখোপেক্ষী হতে চান না। সরকারি হাসপাতাল থেকে সেবার মান ও পরিবেশটুকু আসলে পার্থক্যটা গড়ে দিচ্ছে। বেসরকারী হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে মাসে যদি ৩০-৪০ হাজার টাকাও খরচ হয়, তবু এই শ্রেণির রোগীর বেসরকারি হাসপাতালই ভরসা। রোজ ডায়ালাইসিস করতে ২-৩ হাজার টাকা ব্যয় করেও অনেকে কিডনি রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। নামী হাসপাতালে কিডনিজনিত রোগে মধ্যম আয়ের মানুষ চিকিৎসা করাতে আসা মানে জেনেশুনে বিষপানের মতো! না জেনে বুঝে হাসপাতালে এডমিট হয়ে শেষে বিল পরিশোধের সময় সর্বশান্ত হওয়া ছাড়া আর কোন গতি থাকে না। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে এখন কিডনি রোগীর জীবনে। অনেকে চিকিৎসা শেষ করার পূর্বেই হাসপাতালের বেডে ধুকে ধুকে মরছে!
পরিবারের পক্ষে তো আর চুরি ডাকাতি করে প্রিয় মানুষের চিকিৎসা খরচ যোগানো সম্ভব না। অনন্যপায় হয়েই শেষে মাঝপথে ডায়ালাইসিস কিংবা রোগীরা চিকিৎসা বন্ধ করতে বাধ্য হয় রোগীর পরিবার। এভাবেই অনেকের কপালে নেমে আসে-অবধারিত মৃত্যু। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি মুহূর্ত।
এমন অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর দায়ভার কার ? দেশে যে প্রতি ঘন্টায় ৫ জন কিডনিজনিত রোগে মারা যায়। এই কারণটা এখন সু-স্পষ্ট।
অনলাইনেরর তথ্যে দেশে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ কিডনি রোগে ভুগছে। বছরে ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার রোগীর। বয়স এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। সব বয়সের মানুষেরই কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বছরে ১০০ জনের পরীক্ষা করলে ১৫ জনের রিপোর্টে ধরা পড়বে রোগী কিডনি রোগে আক্রান্ত। এই শংঙ্কাটা শুধু দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্যই চিন্তার বিষয় না। আন্তর্জাতিক ভাবেও এখন বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে কিডনি রোগে ১০ হাজার ৮৪১ জনের মারা যাওয়ার খবর ছিল। এখন এই হার পূর্বের সব মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ অধিদফতর বলছে; বছরে সরকারি হাসপাতালেই জটিল কিডনিজনিত রোগী ভর্তি হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার। বর্তমানে সর্বশেষ রোগী ভর্তির রেকর্ড আছে ৩৩ হাজার। আর মৃত্যুও থেমে নেই। মৃত্যুর হার প্রায় দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অথচ ২০২১ সালে বছরে মারা গেছে ৫৪১ জন। আর ২০২২ সালে মৃত্যুহার ছিল ১০২৭ জন।
দেশের ‘ভোক্তা অধিকারের’ আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে ভেজাল খাবার উৎপাদন ও বিতরণকারীদের বিরুদ্ধে। ফরমালিন আর ক্যামিকেল মিশ্রিত নানান ক্ষতিকারক ভেজাল খাবার কিডনি রোগের পাদুর্ভাব ঘটাচ্ছে। মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়; ভেজার খাদ্রদ্রব্য ছাড়াও দেশজুড়ে- কিডনি প্রদাহ, ডায়াবেটিস, উচ্চরত্তচাপ, অতিরিক্ত ধুমপান, নেশাজাতীয় দ্রব্যে আক্রান্ত, খুব বেশি পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের কারণেও মানুষ অতি সহজে কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
দিনদিন কিডনি রোগী বাড়ছে। কিন্তু কম খরচে মানুষের চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়ছে না। সু-চিকিৎসার নামে অতি মাত্রায় বাণিজ্যিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো কিডনি রোগী নিয়ে হাসপাতালগুলো অবৈধ বাণিজ্য রোথ করতে হবে। হাসপাতাল গুলো অর্থের বিষয়ে একটুও ছাড় দিচ্ছে না। অথচ সাধারণ রোগীদের জন্য একটু মানবিকতা প্রদর্শন করলেই, বেঁচে যেতে পারে, এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের অনেক রোগী। কমতে পারে কিডনি রোগে আক্রান্ত বাৎসরিক মৃত্যুহার। ঢাকার বাইরের রোগীদের অবস্থা আরও শোচনীয়। গ্রামের জেলা পর্যায়ে যদিও সরকারি হাসপাতাল আছে। পাশাপাশি বেশ কিছু প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিকও দেখা যায়। কিন্তু জটিল রোগীর বেঁচে ওঠার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেরকম যথেষ্ঠ হয় না। জেলা পর্যায়ের চিকিৎসা পদ্ধতিতে আনতে হবে আমূল পরিবর্তন। আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদিসহ উপকরণাদী।
ধরুন, একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন কিডনী রোগী, এই রোগীর পক্ষে ঢাকায় এসে বারবার ডায়ালাইসিসের ঝক্কি ঝামেলা সহ্য করা কি সম্ভব? তবু মানুষজন সুস্থ হওয়ার নিমিত্তে তো বারবারই আসছে। তারপরও ভাল হাসপাতালগুলো অসহায় মানুষদেও খরচের বিষয়ে একটুও সদয় না। বরাবরই থাকছে উদাসীন! রোগটা তো ‘সেনসেটিভ’। কেন প্রতিষ্ঠানগুলো বুঝতে চায় না, দ্রুতসময়ের মধ্যে চিকিৎসা না নিতে পারলে, খুব কম সময়ের মধ্যেই রোগীর দুটি কিডনিই ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে? রোগীর পরিবার তবু অনন্ত চেষ্টা করে যায়, পরিবারের প্রিয় মানুষটিকে সুস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে।
তবে খুব যে সহজে হয়ে যায়। তা না। অর্থনৈতিক একটা বাড়তি চাপ সহ্য করেই মানুষকে কিডনি রোগী নিয়ে হাসপাতালে আসতে হচ্ছে। অত্যধিক খরচ শুরু হয়ে যায় চিকিৎসার প্রথম দিনটি থেকেই। রোগীর আসা যাওয়ার খরচ, ইনজেকশন, নানান ধরেনর প্যথলজিক্যাল টেস্ট, ওষুধ, হাসপাতাল ইউটিলিটি বিল, সব মিলিয়ে একজন রোগীর পেছনে সপ্তাহে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। একজন সাধারণ অসহায় রোগী এত টাকা কোথা থেকে জোগাবে? এমনও দেখা গেছে; অনেক রোগী ইতিমধ্যেই বেঁচে থাকার আশায়- বাড়ি-ঘর, ফ্ল্যাট, দোকান, জমি-জমা, স্ত্রী-মেয়ের গহনা বিক্রি করেও হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। হয়ত কেউ সুস্থ হয়েছেন। আবার অনেকে সবকিছু নিঃশেষ করেও বাঁচতে পারেননি। শুধু টাকা পয়সাই মুখ্য নয়। একজন কিডনী রোগীর প্রথমে-‘ভয়কে জয়’ করতে হবে। এই রোগীরা ভয়েই শেষ জয়ে যায় অর্ধেক! রোগ নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন এই কথা।
ভারতের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে – “ সুস্থ থাকাটা রোগীর নিজের শরীরের যতেœর ওপর নির্ভর করছে। কিডনি সুস্থ রাখতে বিশেষ কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হয়। যেই খাবারে অতি মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে। কলা, দুধ, কিশমিশ, কমলা লেবু, ডাল, পালংশাক, আলু, টমেটো, ডিমের কুসুম, বাদাম, মুরগি, কুমড়ো, ঢেড়স, কাচামরিচ. কামড়াঙ্গা, বিদেশী ফল অ্যাভোকেডো ইত্যাদি খাবার থেকে সাবধান থাকতে হবে। এছাড়া- আপেল, আনারস, আঙুর, ফুলকপি, বেগুন, ব্রকোলি, ভাত, পাস্তা, পাওরুটি, ডিমের সাদা অংশ এই খাবারগুলো রোগী খেতে পারবেন। তবে বেশি মাত্রায় না। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক। গবেষণায় আরও বলা হয় – ‘১৯ বছরের বেশি বয়সী একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী প্রতিদিন যথাক্রমে ৩৪০০ মিলিগ্রাম এবং ২৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু কিডনি রোগী ২০০০ মিলিগ্রামের বেশি পটাশিয়াম কোনক্রমেই গ্রহণ করতে পারবেন না। সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।’
কিডনি আমাদের শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। যেটা প্রসাব পায়খানার মাধ্যমে সংঘঠিত হয় বেশি। এ কারণেই প্রস্রাব-পায়খানা ইচ্ছে করে আটকে রাখা মানেই নিজেই নিজের মৃত্যু ডেকে আনার সামিল। এছাড়াও কিডনি মানুষের দেহের সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফেটের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ রাখে। শরীরে পটাশিয়াম বেড়ে গেলে কিডনির কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমন খাবার খেতে হবে সবসময়- যার মাধ্যমে শরীরে কোন পটাশিয়াম প্রবেশ করতে না পারে। দেহে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলেই দেখা দেয় নানান শারীরিক সমস্যা। আর তখনই কিডনির ওপর চাপ বেড়ে যায়। রোগীকে কাবু করে ফেলে। কিডনি সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যয়াম করা, স্বাস্থকর খাবার গ্রহণ করা, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা, পরিমিত পানি পান করা, ধুমপান ত্যাগ করা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খাওয়া, বিশেষ করে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যাথানাশক ওষুধ সেবন থেকে আমাদের অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। এই কাজগুলোর মাধ্যমেই মানুষের কিডনি বিকল হয়ে যাচ্ছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে- শুধু কিডনি বিকল হওয়াকেই কিডনি রোগী বলা যাবে না। কিডনির কারণে অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিডনি ফেইলিওর, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম, প্রস্রাবের সংক্রমণসহ আরও বিভিন্ন সমস্যা। দেশে বিচক্ষণ ইউরোলজিস্টরা অপারেশন, এন্ডোস্কোপি ও লিথোট্রিপসি প্রয়োগ করেই কিডনি রোগীর সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকেন। মনে রাখবেন। এই লক্ষণ দেখা গেলেই আপনি একজন কিডনি বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে ভুল করবেন না : ‘প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হলে, প্রস্রাব দুর্গন্ধ হলে, কোমরের দুই পাশে ও তলপেটে প্রচ- ব্যাথা অনুভব হলে, শরীর মুখ হাত পা হঠাৎ ফুলে গেলে। তবে ঘাবড়াবার কিছু নেই। সময়মত সু-চিকিৎসা ও নিয়মকানুন মেনে চলতে পারলে একজন মানুষের কিডনির কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলেই রোগিকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ’
সরকারিভাবে কিডনি রোগ নিয়ে সতর্ক থাকার বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেয়া উচিত। আর আমরাও নিয়মিত সবাই কিডনির কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করব। সুস্থ থাকার চর্চাটাও সাথে জরুরি। সর্বদা সুস্থ থাকার চর্চাটা ছড়িয়ে দিতে পারলেই মুক্ত মনে, সুস্থ প্রাণে, বেড়ে ওঠবে আমাদের আগামী প্রজন্ম …
মারুফ আহমেদঃ বিশেষ প্রতিনিধি
ছবি : প্রতীকি ছবি