ছাতকের সাংবাদিক শাহ্ আক্তারুজ্জামান শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা মা’কে নিয়ে সিলেটে এসেছেন। আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই আইসিইউ’র জন্য ছোটাছুটি করলেন। কিন্তু মায়ের জন্য কোথাও পেলেন না আইসিইউ বেড। নানা তদবির করেও আইসিইউ খুঁজে ব্যর্থ হয়ে সিলেটের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল শামসুদ্দিনেই মা’কে ভর্তি করিয়েছেন। অক্সিজেন সাপোর্টের মাধ্যমে আইসিইউ’র অপেক্ষায় দিন পার করছেন। গতকাল বিকালে জানালেন- ‘দুদিন ধরে শামসুদ্দিনে আইসিইউ বেডের অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু সিট খালি নেই।ক্রমেই তার মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কী করবেন বুঝতে পারছেন না।’ শুধু সাংবাদিক আক্তারই নন, সিলেটে অনেক রোগীই আইসিইউ পাচ্ছেন না। এই অবস্থা গত এক সপ্তাহ ধরে। সিলেটে আইসিইউ’র জন্য হাহাকার চলছে। আইসিইউ না পেয়ে মারা যাচ্ছেন অনেক রোগী। টাকা দিয়ে, তদবির করেও পাচ্ছেন না আইসিইউ। এমন পরিস্থিতিতে শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীদের নিয়ে সিলেটের শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন আরও ১০ থেকে ১২ জন স্বজন। রোগী ভর্তি আছে শামসুদ্দিনে, এ হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই। এ অবস্থায় সিলেটের মাউন্ট এডোরা, রাগীব-রাবেয়া, নর্থইস্ট, উইমেন্স, পার্কভিউ সহ কয়েকটি হাসপাতালে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছোটাছুটি করলেও স্বজনরা একটি আইসিইউ বেড জোগাড় করতে পারছেন না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- সিলেটের আইসিইউ বেডের জন্য শুধু সিলেট জেলারই নয়, আশপাশের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের রোগীরাও প্রতিদিন ভিড় করছেন। এ কারণে করোনার জন্য নির্ধারিত ৭০টি বেডে স্থান সংসকুলান হচ্ছে না। রাতারাতিও আইসিইউ বাড়ানোর সুযোগ নেই। সিলেটে কোভিড রোগীদের জন্য আইসিইউ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতের সিলেটে রোগী নিয়ে দৌড়ঝাঁপ বেশি। ভোর হলেই সরকারি- বেসরকারি সব হাসপাতালেই আইসিইউ পেতে নতুন রোগীদের লম্বা লাইন পড়ে। সিলেটে সরকারি- বেসরকারি সব হাসপাতাল মিলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য মোট ৭০টি বেড রয়েছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত অন্তত একশ’র মতো রোগী ছিলেন আইসিইউ’র অপেক্ষায়। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগে আইসিইউ বেড ছিল ৬টি। এখন সেটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮টি। কিন্তু ৮টি বেডই রোগীতে পরিপূর্ণ। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আইসিইউ বেড সংখ্যা ১৬টি। করোনায় আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ রোগী আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই হাসপাতালে আইসিইউ পাওয়া যেন সোনার হরিণ। গতকাল বিকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকা ১২ জনের মতো রোগী আইসিইউ’র জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সিলেটের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৪৫টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এসব বেডও রোগীতে পরিপূর্ণ। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- আইসিইউতে জায়গা নেই। একটি খালি হলে সেখানে অধিক ঝুঁকিতে রাখা রোগীকে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ওয়ার্ডে বা কেবিনে রেখে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান। সিলেটে আইসিইউতে রোগী সংকুলান না হওয়া নিয়েও চিন্তিত স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে- পর্যাপ্ত অক্সিজেন ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মোজয় দত্ত জানিয়েছেন- করোনা রোগীদের চিকিৎসার বেলায় কোনো গাফিলতি হচ্ছে না। চিকিৎসা পরিধি বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে- সিলেটে যখন আইসিইউ সংকট রয়েছে সে অবস্থায় রোগী মৃত্যুও বেড়েছে। গতকাল সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ জন। মারা যাওয়াদের চারজনই সিলেট জেলার। সিলেট বিভাগের মধ্যে সিলেট নগর ও আশপাশের এলাকাকে করোনার হটস্পট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ- সিলেট নগর ও আশপাশ এলাকায় করোনার সংক্রমণ খুব বেশি। গত দু’দিনে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে রোগী বেড়েছে কয়েকগুণ। এখন করোনায় আক্রান্ত রোগী কেবল শহরকেন্দ্রিকই নয়, গ্রামে গ্রামে চলে গেছে করোনার বিস্তৃতি। আর গ্রামে করোনার বিস্তৃতি ঘটার কারণে এখন করোনা আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর আইসিইউ সাপোর্টের জন্য তারা সিলেটের হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছেন। সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘আমরা বসে নেই। সিলেটের নর্থইস্ট হাসপাতালের সাধারণ রোগীদের জন্য রাখা আরও ১৫টি আইসিইউ বেডকে কোভিড আইসিইউ বেড করা হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি হাসপাতালেও সাধারণ আইসিইউকে কোভিড আইসিইউ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তিনি জানান- ‘সব সময় তো ব্যবসা করা যায় না। কিছু কিছু সময় মানববিকতা দেখাতে হয়। এই সময়ে আমরা মানবিকতাকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। বেসরকারি পর্যায়ে আরও আইসিইউ বেড বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।’