গত তিন বছরের মধ্যে চালের দাম এখন সর্বোচ্চ। চাল কিনতেই নাভিশ্বাস মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের। আমনের ভরা মৌসুমেও চালের এমন আকাশছোঁয়া দাম, দিন গড়ালে কি হবে?- এ ভেবেই কপালে চিন্তার ভাঁজ তাদের। চালও কি পেয়াজের পথেই হাঁটছে- এমন শঙ্কাও ক্রেতাদের মনে। অবশ্য সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য কমিয়েছে আমদানি শুল্ক। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যে প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু এরপরও চালের বাজারে দাম কী নিম্নমুখি হবে? ক্রেতাদের ভাষ্য, দেশে একবার কোন জিনিসের দাম বাড়লে তা আর নামে না।
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বশে চলে আসে দায়িত্বশীলরাও। গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তারা। অন্যদিকে, অতিরিক্ত এই মজুদ এবং আমদানির কারণে, কৃষকের ধান বিক্রির মৌসুমে দামে দরপতন হয়। এ যেনো উভয় সংকটে ক্রেতা সাধারণ, দেশের মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষ।
আমনের এই ভরা মৌসুমেও ধান ও চাল- উভয়ের দামই গত বছরের তুলনায় বেশি। সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর ইরি বা স্বর্ণার মত মোটা চালের দাম ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। মাঝারি মানের চাল পাইজাম বা লতার দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
২০১৭ সালের পর দেশে এবারই চালের দাম সর্বোচ্চ। বাজারে বিআর-২৮ চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায়। কোথাও তারও বেশি। আর মিনিকেট ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে এই দাম কয়েক দফা লাফিয়েছে। কেজিতে ৫-৭ টাকা আবার কোনো কোনো এলাকায় খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত।
দেশে বছরে প্রায় তিন কোটি ৪০ লাখ মেট্রিক টন ধান। তবে এবার আমনের উৎপাদন ১০ লাখ টন কম হয়েছে। তবে এখনই চালের দাম বাড়ার কোনো পরিস্থিতি দেশে তৈরি হয়নি। আগাম পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই তাই চালকল মালিক এবং বড় কৃষকরা ধান বা চাল বাজারে ছাড়ছেন না। বেশি দামের আশায় মজুত করেছেন, যা বাজারে সংকট তৈরি করেছে।
চালের এই দাম বাড়ার পেছনে সরকারের কর্তা ব্যক্তিরাও ব্যবসায়ীদেরকেই দুষছেন। রোববার এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের মিলাররা, আড়তদাররা, জোতদাররা, যারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে, তারা চালের দাম বাড়ায় এবং এবারও তারাই সেই কাজ করছে। মৌসুমের সময় তারা এখনও ধান কিনছে এবং ধান ও চালের দাম দুটোই বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির সঙ্গে সরকারের মজুত ঘাটতিও চালের বাজারে প্রভাব ফেলেছে। গত বোরো-আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। দাম ও বাজার ঠিক রাখতে যেকোনো পরিস্থিতিতে সরকারের মজুত সব সময় ১০ লাখ টন থাকার কথা, সেখানে এবার মজুত আছে ৫ লাখ টন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সরকার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে না পারার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।