আজ পবিত্র আরাফাত দিবস। এদিন ভোর থেকে হজযাত্রীরা তাঁবুর শহর মিনা থেকে সমবেত হচ্ছেন ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে। আর সমস্বরে তারা উচ্চারণ করছেন- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক্’। অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার। আজকের দিনটিকে পবিত্র হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করা হয়। এদিনই মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) এই আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে দিয়েছিলেন বিদায় হজের ভাষণ।আর এর মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে ইসলাম। সাদা কাপড়ে ইহরাম বাঁধা হজযাত্রীরা এ বছর নতুন এক নিয়মে পবিত্র হজ পালন করছেন। তাদেরকে মুখে মাস্ক পরতে হচ্ছে। রক্ষা করতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। আজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত ঐতিহাসিক নামিরা মসজিদ থেকে দেয়া হবে খুৎবা। এরপর যোহর ও আছরে নামাজ একত্রে আদায় করবেন হজযাত্রীরা। পুরোটা দিন তারা আরাফাতের ময়দানে ইবাদত বন্দেগিতে অতিবাহিত করবেন। এখানে কোনো জাতি, বর্ণ, গোত্র ভেদাভেদ নেই। সবাই এক আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে উচ্চারণ করছেন ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’। এখান থেকে সূর্যাস্তের পর হজযাত্রীরা ছুটে যাবেন মুজদালিফায়। সেখানে সারারাত ইবাদতের পর আগামীকাল ভোরে ফিরে যাবেন মিনায়। জামারায় শয়তানকে নিক্ষেপ করবেন পাথর। পবিত্র কাবা তাওয়াফ করবেন। তবে নতুন রূপে তারা এবার কাবা’কে দেখতে পাবেন। চারদিক থেকে বেষ্টন দেয়া। তারা স্পর্শ করতে পারবেন না পবিত্র কাবা ঘরকে। স্পর্শ করতে পারবেন না হজরে আসওয়াদকে।
এর আগে হজের প্রাথমিক অংশ হিসেবে প্রায় এক হাজার হজযাত্রী বুধবার মক্কার উপকণ্ঠে পবিত্র মিনা উপত্যকায় সমবেত হন। এর মধ্য দিয়ে তাদের হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। হজযাত্রীরা মিনায় অবস্থান করে প্রার্থনা করে সময় অতিবাহিত করেন। বৃহস্পতিবার সকালে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত তারা এখানে অবস্থান করেন। এরপর ভোর থেকেই ঐতিহ্যবাহী আরাফাতের ময়দানে গিয়ে সমবেত হচ্ছেন। পবিত্র নামিরা মসজিদ থেকে হজযাত্রী ও মুসলিম উম্মাহকে উদ্দেশ্য করে যোহরের নামাজের ওয়াক্তে দেয়া হবে খুৎবা। খুতবা শেষে এক আজানে দুই ইকামতে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন হজযাত্রীরা। সূর্যাস্তের পর আরাফাত থেকে মুজদালিফার ময়দানে যাবেন তারা। সেখানে হজযাত্রীরা মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে সারারাত অবস্থানের আবার ফিরে যাবেন মিনায়। সেখানে তারা জামারায় শয়তানের উদ্দেশে পাথর নিক্ষেপ করবেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন আরব নিউজ লিখেছে, মক্কায় গ্রান্ড মসজিদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে পবিত্র মিনা উপত্যকা। আজ এই উপত্যকা পরিণত হবে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ তাঁবুর শহরে। এই মিনায় আছে প্রায় ২৫ লাখ হজযাত্রী অবস্থানের মতো স্থান সংকুলান। তবে এবার করোনা মহামারির কারণে হজযাত্রীর সংখ্যা এক হাজারের নিচে রাখা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় হজ করার সুযোগ পেয়েছেন সৌদি আরবের নাগরিক এবং সৌদি আরবে বসবাসকারী বিদেশি মুসলিমরা। সৌদি আরবের বাইরে থেকে কোনো বিদেশি মুসলিম গিয়ে এবার হজ করতে পারছেন না। হজযাত্রীদের সেবায় নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। তাদের শরীরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। তারা পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর পরই কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছিল। তাদের লাগেজ স্যানিটাইজড করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক স্টাফরা পবিত্র কাবা শরীফের চারপাশ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করেছেন। কাবা শরীফকে স্বর্ণখচিত কালো গিলাফে আবৃত করা হয়েছে।