আজ পয়লা বৈশাখ। দেশের মানুষের প্রাণের উৎসব বাংলা ১৪২৯ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর পর এবার বর্ণিল আয়োজনে উদযাপন করা হবে পয়লা বৈশাখ। তবে এবার রমজানে বৈশাখ হলেও উৎসব পালনে রমজানের পবিত্রতা নষ্ট হয় এমন কোনো কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। এতে ধর্মপ্রাণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এ ধরনের নির্দেশনা থাকা উচিত ছিল। তারপরও পবিত্র মাসের মর্যাদা রক্ষা করেই বর্ষবরণের সব আয়োজন শেষ হবে এমনটাই তাদের প্রত্যাশা।
বর্ষবরণের বিষয়ে আয়োজকরা জানান, দিনের শুরুতে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার সাথে ভোরে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বড় আয়োজনে বরণ করা হবে বাংলা বছরকে। এবারের বর্ষবরণের প্রতিপাদ্য হলো ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’। সঙ্গীত পরিচালক রজনীকান্ত সেনের লেখা গান থেকে এই অংশটুকু নেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, এবার নববর্ষের শোভাযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রতি বছর শোভাযাত্রা চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ ও টিএসটি মোড় ঘুরে ফের চারুকলার সামনে গিয়ে শেষ হয়। কিন্তু এবার ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর সংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তন হয়ে আবার টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে।
নববর্ষ উদযাপন কমিটি জানিয়েছে, নববর্ষের দিনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা যাবে না। বহন করা যাবে না কোনো ধরনের ব্যাগ। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার সব অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। ৫টার পর বের হওয়া গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করা যাবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধু নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন। মেট্রোরেল প্রকল্প চলমান থাকা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া নেয়া হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। নববর্ষের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে নিরাপত্তা মনিটরিং করার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা জানিয়েছেন, ‘নব আনন্দে জাগো’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সকাল ৬টায় রমনার বটমূলে রাগালাপ ও সঙ্গীতে শুরু হবে ছায়ানটের বর্ষবরণ আয়োজন। প্রতিবারের আয়োজনে ১২৫ জনের মতো শিল্পী অংশ নেন কিন্তু এবার স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি বিবেচনা করে শিল্পীর সংখ্যা অল্প কয়েকজন কমানো হয়েছে।
তবে কয়েক বছর ধরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে ধানমন্ডিতে রবীন্দ্র সরোবরে বৈশাখ উদযাপন করা হলেও এবারের এই আয়োজন থাকছে না। সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফের নাগরিক স্মরণসভা হবে মে মাসে। তার আগে কোনো আনন্দ আয়োজন করবে না সাংস্কৃতিক জোট।
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এ সময় বিকল্প পথ ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) থেকে বলা হয়েছে, বর্ষবরণের দিন রাজধানীর বাংলামোটর-হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-কাকরাইল-মৎস্য ভবন-প্রেস ক্লাব সংলগ্ন কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন-শাহবাগ-কাটাবন, পলাশী-শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোর্ট ক্রসিং, বকশীবাজার-শহীদ মিনার-টিএসসি, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং-দোয়েল চত্বর ও নীলক্ষেত-টিএসসি এসব রুটে যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
রাষ্ট্রপতির বাণী : রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেছেন, বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান অঙ্গ পয়লা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে গতকাল এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। তিনি এ উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে জানান শুভ নববর্ষ। রাষ্ট্রপতি বলেন, পয়লা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় জীবনে পরম আনন্দের দিন। এ দিনে চির নতুনের বার্তা নিয়ে আমাদের জীবনে বেজে উঠে বৈশাখের আগমনী গান। দুঃখ, জরা, ব্যর্থতা ও মলিনতাকে ভুলে সবাই জেগে ওঠে মহানন্দে।