বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষা করি, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসি” বন অধিদপ্তর, বন ও জলবায়ু পরিবর্তরণ মন্ত্রণালয় যে অংগীকার সারাদিন মুঠোফোনে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছে। সেই প্রত্যয় সত্যি আমাদের বন, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসনের জন্য অতি জরুরি একটি পদক্ষেপ। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কনভেনশন সেন্টার দিবসটির প্রতিপাদ্য কর্মসূচী নিয়ে সবসময়ই এগিয়ে আসছে। কেননা, বন ও জীবিকা একই মুদ্রার যেন দুই পিঠ। বন ও জীবিকা মানুষ ও প্রাণীকে একই পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখে। এই গ্রহে জীবনের অস্তিত্ব বজায় রাখে। বিশেষ করে কয়েক মিলিয়ন মানুষের জীবিকা টিকিয়ে রাখতে বন, বনের প্রজাতিকেও আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। এর কোন বিকল্প পথ খোলা নেই। আমরা জানি, আমাদের উপজাতি,আদিবাসী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ভূক্ত নাগরিকের দেশ। যাদের সাথে বন এবং বন-সংলগ্ন এলাকার সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক খুব গভীর। জাতিসংঘের উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর একটি বিশেষ দিকও এটি। বিশেষ করে দারিদ্র দূরীকরণ, সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং প্রাকৃতিক ভূমিতে জীবন সংরক্ষণের বিষয়ে যা প্রতিশ্রতিবদ্ধ।
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজর তালিকায় জলবায়ু অঞ্চলভেদে বিভিন্ন দেশ আজ বিপন্ন বন্য প্রাণীকূলের মতই বিপন্ন! জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত বনাঞ্চল হলো- বোরিয়াল বন, নাতিশীতোষ্ণ বন, উপক্রান্তীয় বন এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন, ম্যানগ্রোভ বন উল্লেখযোগ্য। আমাদের বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু, জলবায়ু পরিবর্তনও কিন্ত এই শ্রেণীর বনাঞ্চল থেকে ব্যত্যয় নয়। একটি জরিপে উঠে এসেছে, দক্ষিণ আমেরিকার ১৮ হেক্টর থেকে ৫.৮ মিলিয়ন হেক্টর বনাঞ্চল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ফরেস্ট সাইটগুলির মোট ৭৫ মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি, যা পৃথিবীর সংরক্ষিত বনের তালিকাভুক্ত। আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায়ও বাইরের দেশের মত বনাঞ্চল ও বনের প্রতিবেশ নিয়ে জরিপ ও বিভিন্ন কর্মসূচী, কার্যক্রম চালু রাখতে হবে।
বিশ্বের বনাঞ্চলের তালিকায় প্রতীকী বনজ প্রাণী সহ মানুষের চলাচলের স্থানও অন্তর্ভূক্ত আছে বিধায়, জীব জগত এখন হুমকীর মুখে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কঙ্গোর ওকাপির বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে উত্তর-পূর্ব কঙ্গোর ইটুরি বনের কথা। যার এক-পঞ্চমাংশই দখল করে আছে মানুষ। দেখা যায় কঙ্গো নদীর অববাহিকা, যার মধ্যে সংরক্ষিত বন হিসেবে একটি ন্যাশনাল পার্কের কথাও আমরা পড়েছি। তারপরও তাদের বন ও বন্য প্রাণী পশু পাখির রিজার্ভ অকল্পনীয় ! যাদের বেশিরভাগই বিপন্ন প্রজাতির। ৩০ হাজার ওকাপির মধ্যে ৫ হাজার বন্য প্রাণি এসব বনাঞ্চলে এখনও বেঁচে আছে। এমনকি দক্ষিণ পশ্চিম উগান্ডায় সমতল, পাহাড় এর সাথে বনের সংযোগে ৩২ হাজার হেক্টর জুড়ে রয়েছে জাতীয় উদ্যান। ভাবতেও অবাক লাগে, বিপন্ন গরিলাসহ ব্যতিক্রমী জীববৈচিত্রের জন্যই তাদের এমন কষ্ট ক্লেশ ও নানান উদ্যোগ। কাহুজি-বিয়েগা ন্যাশনাল পার্কও এই শ্রেণীর বিপন্ন প্রাণী রক্ষায় অনন্য উদারহরণ।
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় বনাঞ্চল সাধারণত বড়সড়ই হয়। এবং অক্ষত স্থান সন্নিবেশিত। কার্বন সিল্কের ইকোসিস্টেম পরিসেবায় তারা ফরেস্ট লাইফস্টাইল নিয়ে কাজ করে। মানুষ ও জীবজগত টিকিয়ে রাখতেও সহায়তা করছে। আমরাও বিস্তৃত এসব পরিকল্পনাকে শিক্ষণীয় সেবায় বিনিয়োগ করে, জীব ও জীবিকার নিরাপত্তা ও হুমকী মোকাবিলা করতে পারি। কেননা, বন, বনজ প্রজাতি এবং তাদের উপর নির্ভরশীল জীবিকাও অনেক সময় জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়েও ভূমিকা রাখে। জীববৈচিত্র্যেও ক্ষতি, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবেও মানুষ ও জীবজগত আজ বন, বন্য পরিবেশের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। উন্নত দেশগুলো সাধারণত এই ধরণের আশঙ্কায় * নানান সহযোগিতার মাধ্যমে বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।
দিবস নিয়ে স্লোগান প্রচারণার পাশাপাশি আমাদের অধিদপপ্তর, মন্ত্রণালয়কে – বন ভিত্তিক জীবিকার গুরুত্বের সাথে বন্যপ্রাণীর জীবনের গুরুত্বের কথাটিও মনে রাখতে হবে। সেই সাথে বন,বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনার মডেল অনুশীলন ও প্রচারণার সাথে বন্যপ্রাণীর নিরাপদ জীবন সংরক্ষণের কাজও আমাদের এগিয়ে নিতে হবে।
তবেই বন, বন্য প্রাণী এবং উদ্ভিদের নিরাপদ সংরক্ষণের মাধ্যমেই আমাদের জীবন হয়ে উঠবে ভারসাম্যময়।
তথ্যসূত্র: ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কনভেনশন সেন্টার, ইউনেস্কো, (ছবি: ইন্টারনেট থেকে)
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি