সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক সোহেল তানজিম রানা ও তাঁর স্ত্রী মাইশা ইসলাম হাফসা নিখোঁজের ঘটনায় গত ২৬ জুলাই এনায়েতপুর থানায় হয় সাধারণ ডায়েরি (জিডি)। শনিবার ভোরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় এ দম্পতির ‘অস্তিত্ব’ মেলে। এর মধ্যে স্ত্রী হাফসা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও আস্তানা থেকে পালান চিকিৎসক সোহেল। এ চিকিৎসক কুলাউড়ায় ‘সালমান’ পরিচয়ে অবস্থান করছিলেন। ওই অভিযানে ১০ জনকে আটক করার পর বেরিয়ে আসে নিখোঁজ চিকিৎসকের স্ত্রী হাফসার পরিচয়। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ও সিরাজগঞ্জ পুলিশের দু’জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মাস চারেক আগে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে যোগ দেন সোহেল। হাসপাতালের পাশেই একটি বাসায় স্বামী-স্ত্রী বাস করতেন। নিখোঁজ জিডির পর তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, হঠাৎ একদিন অল্প কিছু মালপত্র নিয়ে বাসা ছেড়ে চলে যান এ দম্পতি।
হাফসার ভাই ওমর ফারুক বলেন, ‘আমার বোন স্বামীসহ গত ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন। আমাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরের চাঁদপুরে। স্বামীর সঙ্গে কিছু দিন তিনি সিরাজগঞ্জে অবস্থান করছিলেন।’
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে কুলাউড়ায় কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের একটি বাড়িতে শনিবার ভোর থেকে ‘অপারেশন হিলসাইড’ নামে সাড়ে চার ঘণ্টার এই অভিযানে নামে সিটিটিসি। অভিযানের আদ্যোপান্ত জানাতে রোববার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করবে সিটিটিসি। এর আগে ২০১৭ সালের মার্চে মৌলভীবাজারের বড়হাট ও নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাসখানেক আগে যমুনা নদীর ভাঙনে ঘর হারানো টাঙ্গাইলের কিছু মানুষ কুলাউড়ার পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের নির্জন বাইশাআলীর টিলায় বসত স্থাপনের জন্য ওই এলাকার রফিক মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর ৫০ শতক খাস জমি তারা কিনে সেখানে কাঁচাঘর নির্মাণ করে বাস শুরু করেন। কর্মধা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও তাদের চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নসহ আসার পরামর্শ দেন। এরপর তারা আর যোগাযোগ করেননি।
কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ বলেন, জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের সার্ভেয়ার চেরাগ মিয়া জানান, ‘আমাদের এলাকা শান্তির জনপদ। এখানে জঙ্গি আস্তানা গড়ে ওঠায় স্বাভাবিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।’
জানা গেছে, গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল মৌলভীবাজারের কোনো পাহাড়ি অঞ্চলে নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠন আস্তানা তৈরি করেছে। এমন খবরের ভিত্তিতে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম ৫-৬ দিন ধরে বিভিন্ন পাহাড়ে অনুসন্ধান চালান। এর মধ্যে মৌলভীবাজারের আস্তানায় অবস্থান করা এক জঙ্গি তাঁর পরিবারকে আনতে গত শুক্রবার ঢাকায় গিয়ে আটক হন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় কুলাউড়ার কর্মধা ইউপির পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের বাইশাআলীর টিলায় আস্তানার খোঁজ মেলে। এরপর থেকে সিটিটিসির সদস্যরা ওই এলাকা ঘেরাও করে রাখেন। ঢাকা থেকে সিটিটিসি ও সোয়াট টিম শনিবার ভোর থেকে অভিযানে নামে।