হঠাৎ বাজার থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে আটা ও ময়দা। অনেক দোকানে এখন বেশি দামেও পাওয়া যাচ্ছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দুটি পণ্য। তবে যেখানে আটা-ময়দা পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। সীমিত আয়ের ও সাধারণ মানুষের পক্ষে এ দামে এ দুটি পণ্য কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাজধানীতে খোলা ময়দা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এ ময়দার দাম ছিল ৬৮ টাকা কেজি। বাজারে শুধু আটা-য়দাই নয়, আরও কিছু পণ্যের সরবরাহেও সংকট দেখা দিয়েছে। প্যাকেটজাত চিনি ধিকাংশ দোকানে নেই। বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও মুদি দোকানিরা বলছেন, ঘাটতি আছে। দুই সপ্তাহ ধরে অধিকাংশ তেল পরিশোধনকারী কোম্পানি নতুন করে সয়াবিন তেল সরবরাহ করেনি। দ্রুত সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
আটা-ময়দার এ সংকটের পাশাপাশি হু-হু করে বাড়ছে চালের দামও। গত সপ্তাহে যে সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকা কেজি দরে, এ সপ্তাহে সেই একই চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৪ টাকা কেজি দরে। শুধু তা-ই নয়, গরিবের মোটা চালের দামও বেড়েছে কেজিতে তিন টাকার মতো। টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে যে মোটা চাল ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা সম্ভব ছিল, এ সপ্তাহে সেই একই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে।
বাজারে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে কোনো পণ্যেই স্বস্তি মিলছে না। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য নিয়ে। তারা বলছেন, চালের দাম বাড়লেও বাজারে চালের সরবরাহে ঘাটতি নেই। কিন্তু চিনি, সয়াবিন তেল, আটা ও ময়দা বাজার থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানগুলোয়ও দেখা গেছে, এক দোকানে চিনি আছে তো সয়াবিন তেল নেই, আরেক দোকানে সয়াবিন তেল আছে তো আটা ময়দা নেই। কাক্সিক্ষত পণ্য পেতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কেউ আবার বাধ্য হয়ে বেশি দামে পণ্য কিনছেন। সীমিত আয়ের মানুষেরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের ঘোষণা আসার পর বাজারে পণ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা মো. মাহফুজ ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘পণ্য সরবরাহ ঠিকমতো না করে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে জিম্মি করে রেখেছে কিছু কোম্পানি।’
মিরপুর-১০ এলাকার মুদি দোকানি মাইনুল আহম্মেদ বলেন, ‘আটার দাম বেড়ে গেছে। দোকানেও প্যাকেট আটা ছয়-সাতটি আছে। এখন এক কেজির প্যাকেট ৬৫ টাকা এবং দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি। কাল হয়তো আরও বেড়ে যেতে পারে।’ আটা নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আটার দাম বেশি, তাই রাখি না। আবার কোম্পানিও ছোট দোকানে দিতে চায় না। কখন আসে বোঝা যায় না। এসে বড় দোকানগুলোয় আটার ১২-২৪টি বস্তা দিয়ে চলে যায়। আমাদের দোকান ছোট বলে তাদের আগ্রহ কম।’ খোলা আটার দামই এখন প্যাকেটের আটার দামের সমান হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, ৭০ টাকা কেজির চিনি এখন ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। স্থানীয় বড় দোকান ‘গোল্ড স্টার বিপণী বিতান’। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু তীর মার্কা দুই কেজি আটার প্যাকেট রয়েছে, দাম ১৩০ টাকা। স্থানীয় কয়েকটি ছোট দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে দোকানে আটা রাখেন না। এ বিষয়ে ‘মায়ের দোয়া’ নামে এক দোকানের কর্মী বলেন, ‘পুঁজি কম। আটা রাখলে অনান্য জিনিস রাখার টাকা থাকে না।’
রামপুরা কাঁচাবাজারের গলিতে ছয়টি মুদি দোকানের মধ্যে দু-একটি দোকান বাদে অধিকাংশ দোকানেই সংকট সয়াবিন তেলের। মাত্র একটি দোকানে ভোজ্যতেল পাওয়া গেলেও সেখানে বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে। নেই খোলা কোনো সয়াবিন বা পাম তেল।
মুদি দোকানিরা বলছেন, কয়েক দিন থেকে কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা আসছেন না। মাঝেমধ্যে এলেও কাক্সিক্ষত পণ্য দিতে পারছেন না। বিশেষ করে তেল দেয়া প্রায় বন্ধ রেখেছে কোম্পানিগুলো।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। কোথাও রূপচাঁদার দুই লিটারের তেলের বোতল ৩৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে, আবার কোথাও একই তেলের দাম ৩৮৪ টাকা। একই পরিমাণ তেল বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের দাম ৪১০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে। তীর ব্র্যান্ডের এক লিটার বোতলজাত তেল ১৭৮ টাকা, আবার কোথাও একই তেল ১৯২ টাকাও লেখা বোতলের গায়ে। ক্রেতাদের বড় দানার মসুর ডাল কিনতে কেজিতে ৫-১০ টাকা বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে বড় দানার মসুর ডালের কেজি ছিল ৯৮-১০৫ টাকা। আর চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকায়।
এছাড়া এক মাস আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০-৪৫ টাকা। বর্তমানে ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা চীনা রসুনের দর বেড়ে প্রতি কেজি ১৩০-১৪০ টাকা হয়েছে। মাসখানেক আগেও দাম ছিল ১১০-১৩০ টাকা কেজি। আবার গত মাসে মানভেদে আদার কেজি ছিল ৯০-১৮০ টাকা। আর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকা কেজি দরে।