কারিশমা তোতা বুঝে, আমরা এখনও অবুঝ !
আষাঢ় মাসে ফলটা পরিপক্কতা পায়। আশ্বিন-কার্তিকে পাকা সুমিষ্ট ফল বাজারে চলে আসে। ফলের গায়ে থোকা থোকা কারুকাজ দেখেই চিনবেন, এটা আতাফল। বর্ষা ও শরৎকালের ফল।
আপনার বাড়িতে কি একটি আতা গাছ আছে ? আপনি অবশ্যই হবেন, সৌভাগ্যবান। কেননা, বাজারের এখন আতাফল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দর কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও আরও বেশি ! বাড়িতে গাছ না থাকায়, বিদেশী আপেলের দামের চেয়েও বেশি দামেই খেতে হবে আতাফল ? আমি সেদিন কিনলাম, মাত্র ২ টা। ইলেকট্রিক পাল্লায় দাম উঠল, ৭৮ টাকা । বোঝাই যাচ্ছে, দেশে আতাফলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আছে। দেশীয় আতাফলের অপ্রতুলতা থাকায়, ভারত থেকেও এই ফল আমাদের দেশে আসে। ভারতের আতাফল আকারে আমাদের দেশীয় আতার চেয়ে অনেক বড় হয়। কিন্তু স্বাদে ও উপকারে আমাদের ছোট আতার কার্যকারীতা অনেক অনেক বেশি। ভারতীয় আতার দামও অনেক বেশি। বাজারে যারা দেশী ফল বিক্রি করছে, এদের ফলের ঝুড়িতেই আপনি এখন দেশী আতাফল পাবেন। দেশী আতাফল টাটকা ও সতেজ। এই ফল বেশিক্ষণ রাখা যায় না। ফলটা পাকলেই নরম হয়ে যায়। ফলে জলদি জলদি খেয়ে ফেলতে হয়। বর্তমানে আতাফলের প্রতি মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি ও ফলের দাম চড়া হবার কারণ, ‘ক্যান্সার ফ্রি’ আরও একটি টক আতার প্রচলন। যার নাম- ‘করোসল’। করোসল আমাজন উপত্যকা বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে পাওয়া যায়। ইদানিং ব্রাজিল থেকেও কাটিং সংগ্রহ করে দেশিয় নার্সারীগুলো বেশ চড়া দামে এই ফলের চারা বিক্রি করছে। যার ফলে এই আতাটিও সৌখিন বাগানীদের একটি প্রিয় গাছের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। তবে এখনও সেইভাবে ‘করোসল’ আমরা খাওয়ার জন্য পাচ্ছি না বলেই, ‘মিরাকিউরল করোসল’ ফলের বিকল্প হিসেবে আমরা ‘আতাফল’ খাওয়ার চেষ্টা করছি। করোসলে ‘অ্যানোনাসিয়াস-অ্যাস্টোজেনিন’ উপাদান আছে। যা ক্যান্সার, লিভার সমস্যা, আর্থরাইটিস, প্রস্টেটেট সহ বহুমাত্রিক রোগের মহৌষধ হিসেবে গবেষকরা প্রমাণ করেছেন। আতাফলেও করোসলের মত বহু গুণের সমাহার ঘটায়, এই ছোট্ট নরম ফলটিকে আমাদের পাশ কাটানোর উপায় নেই।
আতাফলও পরীক্ষীত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ একটি উপকারী ফল। উচ্চ রক্তচাপ কমানো ছাড়াও আতাফলের উচ্চমাত্রার ম্যাগনেসিয়াম হার্টের সুরক্ষায় অন্যতম একটি উপাদান। করোসল’র মতো আতাফলেরও আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালা। আতার বিদেশী নাম চেরি মোয়া বা কাস্টার্ড আপেল। আমাদের দেশীয় শরীফা বা নোনা ফলও সমগোত্রীয় ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম- Annona squamosa.
আতাফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এর ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান ক্যান্সার জাতীয় দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করে। মস্তিস্কের প্রখরতা বৃদ্ধিতেও এর পাইরিডক্সিন চমৎকার একটি উৎস। যা শরীরে ভিটামিন বি যোগান দিয়ে থাকে। এতে আমাদের মেজাজ মর্জিও শীতল রাখে। দূর করে বিষন্নতার মতো ভয়াবহ একটি রোগ।
একটি আতায় লুটেইনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এই লুটেইন সবার চোখের সুরক্ষায় কাজ করে। ছানিপড়া রোধ থেকে শুরু করে দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতেও আতাফল তুলনাহীণ। হজম শক্তিতেও আতাফল বেশ কার্যকর। পাইলস রোগে যাদের বাথরুম জনিত ভয়, আতাফলের ‘ফাইবার’ সেই ভয়টাকে জয় করতেও একটি মূল্যবান ‘বন্ধুফল’ হিসেব গণ্য হতে পারে।
আতার বিশ্বস্থ একটি উৎস হলো ‘ভিটামিন সি’। যার ফলে আমাদের শরীরে এন্টি বডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করছে। এমনকি গ্রীষ্মপ্রধান দেশে অনেক ‘হারবাল চিকিৎসক’ পারকিনসন রোগের মত জটিল রোগের বিরুদ্ধে আতাফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
একটি মাঝারী আতাফলে ৩৭ থেকে ৪০ টি বিচ পাওয়া যায়। খেয়ে বিচগুলো ফেলবেন কেন ? রোদে শুকিয়ে- ছাদ বাগানে, পাড়া প্রতিবেশীর উঠোনে, নিজের বাড়ির আঙিনায় আতার বিচ রোপন করুন। বলা তো যায় না, যেভাবে আতাফলের দাম বেড়ে চলেছে। নিজ বাড়িতে একটা আতা গাছ যদি মাথা তুলে দাঁড়ায়। সে আপনার রোগ বালাই ‘প্রতিরোধী বন্ধু’ হয়েই বেঁচে রবে। ফলও পেলেন, ফ্রি অক্সিজেনও পেলেন, লাভ আপনার সমান সমান।
মনে রাখবেন:
সুস্থ মানুষের জন্য দৈনিক একটির বেশি আতা খাওয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা, আতাফলে আছে অত্যধিক ‘টক্সিন’। যা স্নায়ুতন্ত্রের উপকারের চেয়ে ক্ষতির ঝুঁকিও বাড়িয়ে ফেলতে পারে।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি