আগামী দিনের করণীয় চূড়ান্ত করতে ফের সিরিজ বৈঠকে বসছে বিএনপির হাইকমান্ড। আজ থেকে তিন দিনব্যাপী এ বৈঠক শুরু হচ্ছে। এবার নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা সভাপতির মতামত নেওয়া হবে। এসব বৈঠকেও মূল এজেন্ডা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন। এ ছাড়া আগামী নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দল গোছানোসহ সমসাময়িক নানা ইস্যুতে নেতারা তাদের মত তুলে ধরবেন। আলোচনায় আসবে আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচনে জোটবদ্ধ রাজনীতিও। তবে বিগত সিরিজ বৈঠকের মতো এবারও রাজপথের আন্দোলনে যাতে বিএনপির নেতৃত্ব থাকে সে ব্যাপারে জোরালো মত দিতে পারেন নেতারা।
আন্দোলনের করণীয় চূড়ান্তে এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিন দিন সিরিজ বৈঠক করে বিএনপির হাইকমান্ড। সেখানে প্রথম দিন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, দ্বিতীয় দিন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সহসম্পাদক এবং শেষ দিনের বৈঠকে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। তিন দিনের ধারাবাহিক বৈঠকে মোট ২৮৬ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন; যাদের মধ্যে ১১৮ জন বক্তব্য দেন। প্রথম সিরিজ বৈঠকেও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনের পক্ষে জোরালো মত দেন নেতারা। দলে আন্দোলনমুখী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, জোটের রাজনীতি, আন্দোলনে বিএনপিকে নেতৃত্ব দেওয়াসহ আরও নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন তারা।
এদিকে দ্বিতীয় দফা সিরিজ বৈঠকের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। বৈঠক সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তিন দিনের সিরিজ বৈঠকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা সভাপতি মিলে মোট ৩৬৩ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের চলতি দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স যুগান্তরকে বলেন, বৈঠকগুলো হবে বিভাগভিত্তিক। ইতোমধ্যে সবাইকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে প্রতিদিন বিকাল সাড়ে তিনটায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। উপস্থিত থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও।
জানা গেছে, বৈঠকের প্রথম দিন আজ ঢাকা ও ফরিদপুর বিভাগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা সভাপতিরা (জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নয়) অংশ নেবেন। আজকের বৈঠকে মোট ১২৬ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কাল বুধবার বৈঠক হবে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও রংপুর বিভাগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা সভাপতিদের সঙ্গে। এদিন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ১২৯ জনকে। শেষদিন বৃহস্পতিবার খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা সভাপতি মিলে ১০৮ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সিরিজ বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিগত মতবিনিময় সভায় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয় আলোচনা হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, একদলীয় শাসন প্রবর্তনের প্রচেষ্টা, বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেওয়া, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা ইত্যাদি বিষয়ও আলোচনা হয়েছে। মঙ্গলবার (আজ) থেকে শুরু হওয়া বৈঠকেও এসব বিষয়ে মতামত আসবে। ধারাবাহিক বৈঠক শেষ হওয়ার পর আমাদের পরবর্তী করণীয় জানিয়ে দেওয়া হবে।
আজকের বৈঠকে অংশ নিতে যাওয়া বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ সিরিজি বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। দলীয় সরকারের অধীনে মানুষ তাদের সেই অধিকার ফিরে পাবে না এটা এখন প্রমাণিত। জনগণের সেই অধিকার ফিরে পেতে প্রয়োজন নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। সেই দাবি আদায়ে দলের হাইকমান্ড প্রস্তুতি নিচ্ছে। গণতন্ত্র পনরুদ্ধারের সেই আন্দোলন কীভাবে কার্যকর করা যায় তা নিয়ে আজকের বৈঠকে মতামত তুলে ধরা হবে।
তিনি বলেন, বৈঠকে আন্দোলন ও নির্বাচন ছাড়াও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সবাই গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবে বলে আশা করি। দল পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটাকে কীভাবে আরও গতিশীল করা যায় সেই মতও আসতে পারে।
নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন যুগান্তরকে বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসবে। এ আন্দোলন জোরদার করতে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক প্রস্তুতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে।