করোনার প্রভাব থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ৭টি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৬৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ দ্রুত বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হবে বিশেষ তাগিদ।
আজ বধুবার ব্যাংকার্স সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হবে। এছাড়া বৈঠক থেকে আরও কিছু বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে। ব্যাংকার্স সভার কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাড়ে ৬ মাস পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা এতে যুক্ত থাকবেন। এর আগে ২৭ জানুয়ারি এ সভা হয়েছিল। সাধারণত প্রতি মাসে এ সভা হতো। করোনার কারণে এখন নিয়মিত হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, আজকের বৈঠকে ৭টি প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা হবে।
এগুলোর আওতায় ৬৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ দ্রুত বিতরণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে বড় শিল্প ও সেবা খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের জন্য ৫৭ ব্যাংককে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ শুরুর পর গত বছরের এপ্রিলে এ খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়ছিল। পরে তা দুই দফায় বাড়িয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এর মধ্যে ৭ হাজার কোটি টাকা ছিল বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য। এর মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি। ওই ৩৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৩২ হাজার ৩৬৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা গত জুন পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে। বাস্তবায়নের হার ৯৮ দশমিক ০৮ শতাংশ। বাকি ৬৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা চলতি বছরেও বিতরণ করা যাবে। এর বাইরে নতুন বছরে ৩৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে গত অর্থবছরে যারা ঋণ পায়নি, তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার মধ্যে জুন পর্যন্ত ১৫ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বাকি রয়েছে ৪ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত অনুমোদিত ঋণ চলতি বছরেও ওই তহবিল থেকে বিতরণ করা যাবে। ওই তহবিলের অর্থ যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শতভাগ বিতরণ করতে পেরেছে, তাদেরকে আজকের সভায় প্রশংসাপত্র দেওয়া হবে।
এর মধ্যে ১২টি ব্যাংক ও ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর আগে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণে ব্যর্থ হওয়ায় ১২টি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের জন্যও ৫৭টি ব্যাংক ও চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বিতরণের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে।
নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুটি স্টার্টআপ তহবিল তৈরি করেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল। এ তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের ৪ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়া হবে। অপরটি হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের বার্ষিক নিট মুনাফা থেকে ১ শতাংশ নিয়ে স্টার্ট আপ তহবিল গঠনের জন্য। গত বছর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১০ হাজার ৭৭৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে। এর মধ্যে ১ শতাংশ বাবদ ১০৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা তহবিলে স্থানান্তর করা হয়েছে।
গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক রপ্তানি খাতে সহজ শর্তে ঋণ দিতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রি শিপমেন্ট ক্রেডিট স্কিমের আওতায় একটি তহবিল গঠন করে। এর সুদের হার কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু এর ব্যবহার খুবই কম। এজন্য ব্যাংকগুলোকে এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হবে।
বৈঠকে ঘোষিত মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনা হবে। গত অর্থবছরে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জিত হয়নি। চলতি অর্থবছরে যাতে অর্জিত হয়, সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। গত অর্থবছরের মুদ্রানীতি বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত জুন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হবে।
করোনার এই সময়ে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার বাড়ায় এ খাতে ঋণ বিতরণের নীতিমালা শিথিল করা হবে। বর্তমানে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার. ট্যাবসহ অন্যান্য ডিজিটাল সামগ্রী কিনতে ৭০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়। বাকি ৩০ শতাংশ দিচ্ছে গ্রাহক। এ হার আরও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে সামাজিক দায়বদ্ধতার খাতে ব্যয় বাড়ানোর জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হবে।