বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে শুনতে পারছি যে উচ্চ পর্যায়ের মানুষদের ভ্যাকসিন দিতে ইতোমধ্যে তালিকা শুরু হয়ে গেছে। গুলশান ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাবের সদস্যদের নাম তালিকা করা হচ্ছে।
সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা-মন্ত্রীদের তালিকা করা হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কীভাবে কখন এ ভ্যাকসিন পাবে সে বিষয়ে সরকারের কোনো দপ্তর থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য এখন পর্যন্ত পাইনি।
রোববার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল কারও কাছ থেকে নয়, পত্র-পত্রিকায় দেখছি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রজেনের ভ্যাকসিন ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। সেখান থেকে বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকোর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসবে। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখছি সরকার টু সরকার ডিল করছে অথবা যে কোম্পানি ভ্যাকসিন বানাচ্ছে তাদের সঙ্গে সরকার সরাসরি ডিল করছে। আমরা এই কথাটা বার বার বলছি, ভ্যাকসিন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিতরণ, গ্রহীতাদের কাছে পৌঁছানো বিষয়টা অত্যন্ত প্রফেশনাল এবং টেকিনিক্যাল বিষয়। এ বিষয়ে অবশ্যই সরকারের রোডম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরা দরকার।
জনগণকে আশ্বস্ত করা দরকার যে এ টিকা তাদের কাছে কখন পৌঁছাবে। পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি, ২/১ দিন অথবা আজকেই সরকার বেক্সিমকোর মাধ্যমে ৬০০ কোটি টাকা সিরাম ইনস্টিটিউটকে পৌঁছে দেবে। তারপরে তারা ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেবে। তাতে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। একই সঙ্গে কে, কখন কীভাবে পাবে সেটাও কিছু জানতে পারছি না।
তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করোনা ভাইরাস নিয়ে তার প্রথম দিনের বক্তব্যেই বলেছিলেন সাধারণ মানুষ যেন বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পায়। সেটাই আবারও জোর দিয়ে বলছি। আমরা শুনলাম স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ৪২৬ টাকা মূল্য পড়বে ভ্যাকসিনের। এ মূল্য কী সরকার দেবে? নাকি যারা নেবেন তাদের দিতে হবে। সেটা কিন্তু ক্লিয়ার না। সেজন্য আমরা দাবি করছি এ বিষয়ে অবিলম্বে সরকারের পরিপূর্ণ পরিকল্পনা, সংগ্রহ, বিতরণ, মূল্য, কতজনকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে, কাদেরকে দেওয়া হচ্ছে এর রোডম্যাপ অবশ্যই জনগণের সামনে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে গতকাল পর্যন্ত যে হিসাব পেয়েছি তাতে বলা হচ্ছে পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ১৮৪ জন সংক্রমিত হয়েছে এবং মারা গেছেন সাত হাজার ৫১৯ জন। আমরা বার বার বলে এসেছি যে এ তথ্য সঠিক নয়। সঠিকভাবে এ হিসাব সংগ্রহ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা কোনো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। অনেক মানুষ বাড়িতে মারা যাচ্ছেন, হাসপাতালে যাচ্ছেন না। অনেকে বাড়িতেই সংক্রমিত হচ্ছেন। সরকার যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা করছে সেটা সঠিক হিসেব পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এটাকে আমরা বড় ধরনের উদাসীনতা মনে করছি। কারণ এটা মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত। আমরা মনে করি সরকার আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে হিসেব দিচ্ছে সেটা সঠিক নয়। তাই সঠিক পরিসংখ্যান দাবি করছি।
বিএনপির মহাসচিব ফখরুল বলেন, এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে আছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড্যাবের সভাপতি-সেক্রেটারি, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম। এ কমিটি অবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহ থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে জাতির সামনে তাদের পরামর্শ তুলে ধরবেন।