মারুফ আহমেদ
বিশেষ প্রতিনিধি
ভারত বাংলাদেশের ক্রিকেট দিয়ে লেখাটা শুরু করা যাক …
ভারতের সমর্থকদের ন্যক্কারজনক ঘটনা বিশ্বের ক্রিকেটমোদীদের সবসময় অবাক করে! আমরা কয়দিন আগে হয়েছি ! বাংলার ফ্যান-টাইগার রবি’র ওপর ওরা আক্রমণ করেছে। রবি তার মায়ের কসম দিয়ে বলেছে- “ওরা আমাকে আঘাত করেছে।’ কতটা বেহায়া দর্শক ওরা এটা সারা বিশ্বের মানুষ-ই জানে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা নিয়েই কি শুধু আক্রোশ?
সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারত আর বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্মাদনা নিয়ে হরহামেশাই দুই দেশের নাগরিকেরা কটাক্ষ্য ও বিদ্রুপ ছুঁড়ে মারছে। আমরা মোটেও এই ধরনের ব্যবহার ভারতীয়দের কখনও করতাম না। কলকাতার বাঙালীদের সাথেই এসব ঘটছে বেশি। বিগত ১৫ বছর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বেশ কিছু ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে। মাঠের লড়াই এর আগের থেকেই নেট দুনিয়ায় শুরু হয়ে যায়। আইসিসির কয়েকটি ক্রিকেট আসরে বাংলাদেশের প্রায় জেতা ম্যাচে ভারতের সাথে পরাজয় বরণকে কেন্দ্র করে এক ধরনের এই মৌণ লড়াই। ক্রিকেটপ্রেমিরা কয়েকবার হতাশাজনক এমন পরাজয় সহজে মেনে নিতে পারেনি। অথচ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় থেকেই আমরা জানি, ভারত আমাদের সবচেয়ে বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র। এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তথাপি ওরা মোটেও নমনীয়তা দেখায় না বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে। আমাদের ক্রিকেটারদের মনোবল নষ্ট করতে তাদের বড় বড় মাথাওয়ালা ক্রিকেটার খেলার পূর্বেই যেন আমাদের পরাজয়টাকে জাহির করে যায় কথার বুলিতে। সবসময় ওরা এটা করে থাকে। এসব বুলিং তাদের ফেসবুক পাঠকরা করে যায় আরও নগ্নভাবে! গো এহেড বাংলাদেশ। ফুটবলেও এর ব্যতিক্রম নয়। এ তো গেল খেলার জগত। এরপর খেলা থেকে চোখ ফেরাই। রাজনীতিতে আসি। কি দেখা যায়? আওয়ামী লীগ সরকারের পনেরটি বছর। মোদি সরকারের কাছে নতী স্বীকার করে যাওয়ার রাজনীতি মুখর ছিল দেশটিতে। ভারতের জন্য যা না চাইতে মেঘের বেশে বাংলাদেশের সুবিধা হাতিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাই ঘটেছে পেছনের পনেরটি বছর। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শেখ হাসিনা সরকার ভারতকে যেভাবে সুযোগ সুবিধা দিয়ে গেছে, বিশ্বে যা বিরল! বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে মাথা ঘামানো-র সুযোগও শেখ হাসিনা সরকারের থেকে আদায় করে নিয়ে ষোলকলা পূর্ণ করেছে। বিশ্বের আর কোন দেশ থেকে ভারত এমন ফায়দা নিতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই। ক্রিকেট আর স্পোর্টস্ ডিপার্টমেন্ট তো সেখানে খেলার পুতুলের নামান্তর। আমাদের বিষয়ে তারা নাক গলিয়েছে। কেননা অতি ভারতপ্রীতিতে বিগত সরকার নাকটা বর্ডারের ওপারে পেতে দিয়েছে বলেই! যার রেশ এখনও চলছে! কাকতালীয় বিষয় তো এখানেই। বিগত সরকার প্রধান আছেন ভারতে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে পরাজিত হয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। ক্যাবিনেটের মন্ত্রী এমপি ও নিজের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বাংলাদেশে ফেলেই গিয়ে আশ্রয় নিলেন পার্শ্ববর্তী প্রিয় দেশ ভারতে। যেই ভারতের জন্য দেশের সব সুযোগ সুবিধা উদার রাজনীতির কর্তব্য ভেবেই সব নিঃস্বার্থভাবেই দিয়ে এসেছিলেন। সেই মানুষটিকে ক্ষমতা ছাড়ার পর-আমেরিকা ইউরোপের বাঘা বাঘা দেশ আশ্রয় দিতে চায়নি। ভারতের জন্য মানুষটি এতটা উদার হওয়ার প্রেক্ষিতেই ভারত যেন সেই ঋণ শোধের মৌখ্যম সময় পেয়ে গেল শেখ হাসিনাকে সেদিন নিজেদের ভূখণ্ডে রাজনৈতিক (স্বসন্মানে) আশ্রয়দান করে।
বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যা ও রাষ্ট্রীয় অর্থ-পাচারের অভিযোগে ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনা সরকার জাতির বিবেকের কাছে দন্ডীত! তাদের সকল প্রকার দুর্নীতি দেশবাসীর জেনে গেছে। শেখ হাসিনা এতটাই ঘৃণীত এক নাম দেশের মানুষের কাছে- মামলা-ই দিয়েছে এদেশের মানুষ যার নামে প্রায় ২০০ টি। ডাবল শতক ছাড়িয়ে মামলার রেকর্ডের দিকেই ছুটছে! যা কোন সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে মামলার নথিতে বিশ্বের অনন্য রেকর্ড। এর ভেতর হত্যা মামলা রয়েছে সব্বোর্চ। শেখ হাসিনা এতটাই স্বৈরাচারী ছিলেন, যে কারণে ভারতে পালাতে বাধ্য হয়েছেন শেষ পর্যন্ত। তবে, এই দেশনেত্রীর মতো কলঙ্কজনক দেশত্যাগের বিষয়টা আর কখনও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঘটেনি! ফলে বিষয়টা নিয়ে আওয়ামী লীগ মতাদর্শে লালিত অনেক সাধারণ নেতাকর্মীকেও হতাশ করেছে। ঘটনাটা শুধু আওয়ামী লীগ কে প্রশ্নবিদ্ধ-ই করেনি, নিজের দল, নেতাকর্মী, মন্ত্রী পরিষদের সবাইকে ফেলে চুপিসারে ভারতে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক মেরুকরণে সৃষ্টি করলেন নতুন এক মাইলফলক! রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন:- “শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে কঠিন এক ভুল করল ভারত। এবং এ জন্য ভারতকে পস্তাতে হবে।”
দুই দেশের জনমনের জল্পনা কল্পনায় এখন শুধু শেখ হাসিনার ভারতের রাষ্ট্রীয় আতিথেয়তাকে ঘিড়েই এক চাপা গুঞ্জণ বিরাজ করছে। সবার একটাই আলোচনা- বাংলাদেশের সাবেক সরকার প্রধানকে আশ্রয় দিয়ে ভারত আসলে কি সুবিধা নিচ্ছে। কি চাইছে দেশটি?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তবর্তী সরকার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অন্তবর্তী সরকারের একটি মাসও অতিবাহিত হয়ে গেল। এদিকে শেখ হাসিনা দিল্লীতে যে বিবৃতি দিলেন, সেই বিবৃতি বাংলাদেশের মানুষ সাদরে গ্রহণ করেনি। পালিয়ে যাওয়া সরকার প্রধানকে গণহত্যাসহ নানান অপরাধের বিচারের মুখোমুখি করতে চায় অন্তবর্তী সরকার। এটাই নাগরিক জনতার দাবী। শেখ হাসিনা ভারতে থাকাকালীন ভারতের ডিম্বুর বাঁধের পানিতে বাংলাদেশের ১১ টি জেলা তলিয়ে যায়! এবং দুর্বিষহ বন্যায় ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতিসহ ৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। তারপরও বাংলাদেশের মানুষ বন্যাটাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মেনে নিয়েছে। নিজেদের যথাসাধ্য চেষ্টা করে ১১ জেলাকে পুনঃ-সংস্কারে কি না করল। দেখেছে পুরো বিশ্ব। অথচ বাংলাদেশে এত বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও ভারত বাংলাদেশের অতিথিকে নিয়েই একপ্রকার সন্তুষ্ট আছে বলে মনে হচ্ছে। সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে বাংলাদেশ ভারতের বিশেষ কিছু আচরণে কড়া প্রতিবাদও জানিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যতই তিক্ত অবস্থা বিরাজ করুক! সেদিকে কোন দৃষ্টি তাদের আপাতত নেই। সেভেন সিস্টারস নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস- তাদের সাংবাদিকের একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে। সেই থেকেই তাদের যেন ঘুম হারাম। ঐ বিষফোঁড়ার ব্যথা থেকেই ভারত এখনও মনে হয় সুস্থ হতে পারছে না। এরপর মোদির সাথে ফোনালাপ হলেও সরাসরি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে কোন বৈঠক হয়নি ড. ইউনূসের। সাধারণ অধিবেশনে মোদী কেন জানি ড.ইউনূসের সাথে মুখোমুখি বসতে অনিচ্ছুক। এর পেছনের কারণটাও স্পষ্ট। নেট দুনিয়ার প্রত্যেকেই এখন কম বেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সবাই বুঝতে পারছে বিষটা। বাংলাদেশের জুলাই-আগস্ট সরকারবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকান্ডে প্রধান আসামী করে শেখ হাসিনাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চায় অন্তবর্তী সরকার। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার যে দাবি উঠেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এনডিটিভিকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকার ভারতকে আরও বেশি উদ্বেলিত করে তুলেছে। কেননা, আমরা জানি শেখ হাসিনা ভারতের জন্য কতটা উদার ছিলেন। বিগত ১৫ বছর দুই দেশের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক যে কতটা ঘনিষ্ট ছিল, তা অকল্পনীয়! মোদীর কাছে হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে শাস্তির মুখোমুখিতে নরেন্দ্র মোদী হয়ত তা চান না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কোন প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার ভয় থেকেই নরেন্দ্র মোদির হয়ত এভাবে এড়িয়ে চলা।
শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের এই অনঢ় অবস্থান-ই বিশ্ববাসীকে জানান দেয়, মোদি সরকার ও শেখ হাসিনা সরকার একজন আরেকজনের কতটা আস্থাভাজন ছিল। ভারতও অবগত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কারণে বাংলাদেশের সাথে সু-সম্পর্কটা নষ্ট হবে। এমনকি ড. মুহাম্মদ ইউনূস শেখ হাসিনাকে নয়, ভারতকেই একটি মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে বলেন: “দিল্লীতে অবস্থান নেয়ার সময় শেখ হাসিনাকে যেন রাজনৈতিক বিবৃতি প্রদান থেকে বিরত রাখা হয়। আর ভারত যদি তাকে রাখতে চায়, তাহলে শর্ত, তাকে চুপ থাকতে হবে।’’ বলাই যায়- নিজ দেশ ছেড়ে ভারতে দেশত্যাগের বিষয়টি শেখ হাসিনার জন্য নিরাপত্তার শতভাগ সফলতা আসলেও দুই দেশের সম্পর্কে যে ‘শেখ হাসিনা’ চিড় ধরিয়েছেন, সেটা পরিস্কার। সদ্য ইউনূসের বক্তব্য ও বিবৃতিকে ভারত “মেগাফোন কূটনীতি” হিসেবে অভিহিত করেছে। যা দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘোলা করেছে বলেই মনে হচ্ছে। ভারতের কারেছ শেখ হাসিনা মেহমান। পনের বছরের বন্ধুর প্রতি ভারত মৌলিক সৌজন্যতা দেখাতেই পারে। সে কারণে এই আশ্রয়কে তারা গুরুত্বের সাথে দেখছে। এবং যতদিন না শেখ হাসিনা অন্য কোন দেশে প্রবেশের অনুমোদন পাচ্ছে, তিনি ততোদিন ভারতেই থাকবেন, এটা ভারতীয় পররাষ্ট ও হাইকমিশনারদের বক্তব্য থেকেই সু-স্পষ্ট। তবে বিক্ষোভের সময় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে- বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কথাটিও অমুলক নয়। তিনি বলেন : “ যেহেতু তাকে (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশের গণহত্যার প্রধান আসামি করা হয়েছে, আমরা তাকে আইনিভাবে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করব। ” তবে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করলেও শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণ করার সম্ভাবনা এক প্রকার ভারতের নেই বললেই চলে। ভারত মনে করছে তাদের প্রিয় বন্ধু শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। এই জায়গা থেকেই ভারতকে মূলত সরে আসতে হবে। তা না হলে দুই দেশের সম্পর্ক তিক্তই থাকবে। এই বিষয়টা ড. ইউনূসও ভারতকে পরিস্কারভাবে জানিয়েছেন। ভারত যদি শেখ হাসিনাকে নিয়ে পরে থাকে তবে এটা তাদের বুঝতে হবে বাংলাদেশের সাথে তাদের অর্থনৈতিক বাণিজ্যে ধ্বস নেমে আসবে। তাদের জীবন ও জীবিকার ওপর ইতিমধ্যে এর প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। খবরটা হাস্যকর। তবু সত্য। শেখ হাসিনার জন্য যখন দুই দেশেই চলছে আলোচনা সমালোচনা। তখন-ই বাংলাদেশে ভারতের ভিসা হয়ে গেল বন্ধ! অদ্ভুত ব্যাপার। এর রি-এ্যাকশনে নাকি কলকাতায় কমে গেছে বাংলাদেশী পর্যটক। আর এর প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তাদের পকেটমার নাগরিকের ওপর। সেখানে নাকি ৬০% পকেটমার কমে গেছে এখন! হা হা হা! আর ইলিশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কান্নাকাটি চলছে সারা ভারতজুড়ে মনে হচ্ছে; অনেক ভারতীয় বুঝি এবার ইলিশের শোকেই হার্ড এ্যাটাক করবে! পশ্চিম বঙ্গের মাছের বাজারে রীতিমত শুরু হয়ে গেছে ইলিশের জন্য হাহাকার। শেখ হাসিনার আমলে দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারেনি। কিন্তু ভারতীয়রা টনকে টন ইলিশ খেয়ে পুুঁজোর ছুটি কাটিয়েছে! ২০১২ সালের পর অন্তবর্তী সরকার আসার পর এবারই প্রথম ভারতে ইলিশ পাঠানো বন্ধ রয়েছে। আগের দেশের মানুষ ইলিশ খাবে। পড়শী দেশের চিন্তা। এই ভারতীয়রাই তো বলেছিল একটু ত্রাণ যেন বর্ডার ক্রস না করে? এখন ইলিশের জন্য তাদের কেন উতলা। এই দেশের মানুষ এখন জেনে গেছে। শেখ হাসিনার পাঠানো বড় বড় ইলিশ খেয়ে ওদের জিবটা কত বড় হয়েছে! সেই লালসটুকু তো আর ধরে রাখা যাচ্ছে না। প্রতিবছর আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অন্য দেশে ইলিশ পাঠানো বন্ধ থাকলেও শুধুমাত্র ভারতে ইলিশ বিক্রির সংস্কৃতিটা চালু করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। ভারতীয়দের ইলিশপ্রীতি ছিল না। ছিল শেখ হাসিনার এটা অতিমাত্রা ভারতপ্রীতি! যা ‘ইশিল কূটনীতি’ নামে ইতিমধ্যেই সমালোচিত হয়েছে। এটা ভারতের মন্দ ভাগ্য বলা যায়। না হলে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পলায়ন আর এই মৌসুমের ইলিশের সময় একই সময় ঘটে না। এখনই আসছে তাদের পুজোর সময়। আর বাংলাদেশ থেকে কোন ইলিশ ভারতের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে না। অবৈধ উপায়ে তারা ইলিশ নেয়ার চেষ্টা করছে। সদ্য সুনামগঞ্জ সীমান্তে ২৭৫ কেজি ইলিশ জব্দ হয়েছে। অবৈধ পথে ভারত যেসব ইলিশ সংগ্রহ করছে শেখ হাসিনার সময়কার পানির দামে এখন আর ইলিশ পাচ্ছে না তারা। নিজেরাই যেগুলো আগে ৮০০ টাকায় কিনেছে। এখন কেজিতে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা দরে কেজিতে গচ্চা দিতে হচ্ছে। তাও চোরাকারবারীদের খুঁজে বের করে। দুটি দেশের এটা বন্ধ কর ওটা বন্ধ কর। এসব তো বাচ্চাদের খেলার মতো অবস্থা! ওরা ভিসা বন্ধ করলে আমাদের ইলিশ পাঠানো কেন বন্ধ করতে হবে? ওদের বন্ধ দুয়ার খুলেনি বটে। আমরা জিতে গেছি। অন্তবর্তী সরকার তাদের দুর্গাপূজার কথা বিবেচনা করে প্রাথমিক ভাবে ৩ হাজার টন ইলিশ পাঠাচ্ছে। দুটি দেশের বাণিজ্যি মিত্রতা কেন শত্রুতে পরিণত হবে। কার স্বার্থে? ব্যক্তি স্বার্থ আগে না দুটি দেশের জনগণের স্বার্থ আগে? সেটা এখন মোদী সরকারকে বুঝতে হবে। তাদের লসের পাল্লা কিন্তু ভারী হতে থাকবে। এই তো ঔদিন ভারতের এক্সপোর্ট ডিভিশনের হেড অজয় সাহা বললেন: ‘‘ রাজনৈতিক সংকটে দেশটির ৬০০ মিলিয়ন ডলারের মূল্যের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেখানে বাংলাদেশ থেকে রোজ ৩০ মিলিয়ন রপ্তানি করা হয় সেখানে এখন কিছুই হচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে ভারত সবচেয়ে বেশি অর্থোপার্জন করে থাকে মেডিক্যাল ট্যুরিজম থেকে। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এসোসিয়েশন ( বিপিএমসিএ) তথ্যানুসারে- বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে ভারতে ২১০০ রোগী চিকিৎসা জনিত কারণে ভারতে যায়। বছরে প্রায় ৫ লাখ। আমাদের থেকে তারা এই সেক্টরে আয় করে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা। বিগত ৩ বছরে এই সংখ্যা ছিল ৮৩% কিন্তু এখন কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে ৫৫%। দুই দেশের ভাবমূর্তি এভাবে ক্ষুন্ন হতে থাকলে এই খাতে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা আরও শোচনীয় হবে। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজের সাথে নির্ভর করছে পর্যটন শিল্প। কেনাকাটা। থাকার হোটেলসহ আরও বেশ কিছু বাণিজ্যিক কর্মকান্ড। যার সবই নির্ভর করছে বাংলাদেশীদের কেন্দ্র করে। এখনই তো সব চাহর হচ্ছে তাদের বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্মে। পর্যটক না আসায় ধুকছে কলকাতা। মাসখানেক আগেও কলকাতা নিউমার্কেট, মার্কুইজ স্ট্রিট বাংলাদেশী পর্যটকে ভরপুর থাকত। বিগত জুলাই মাস থেকে শুরু করে-শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে ভারতে আসার পরই কলকাতার দৃশপট পাল্টে গেল! কলকাতা বলতে গেলে এখন পর্যটক শুন্য! ভারত বাংলাদেশীদের ভারতে যাওয়ার ভিসা প্রদান বন্ধ দিয়েছিল। এখন চিকিৎসার ভিসা চালু করেছে। তবু না পারতে। নিজেদের রুটি রুজি কমে যাচ্ছে ভেবেই। ভারত কতদিন দেশটি বর্তমানে শত মামলার আসামীখ্যাত সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে খুশি রাখবে? নিজেদের রপ্তানি আর বিনিয়োগের সুবিধা পাশ কাটিয়ে? ভারত সরকারের উচিত নয় কী- ব্যক্তি কেন্দ্রিক এই ধরণের অমূলক উদারতা থেকে বেরিয়ে আসা? বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণ কি এক শেখ হাসিনার আনুগত্য থেকে বড় কিছু নয়? বাংলাদেশের মানুষ তো জরুরি চিকিৎসা সেবায় ভারতকে-ই বেশি প্রাধান্য দেয়। এদেশের রোগীর কথা ভারত সরকারের মাথায় রাখা উচিত। না হলে দিনদিন আমাদের রোগীরা জীবন বাঁচাতে ভারত বিমুখ হবে। সবাই বিকল্প দেশের চিকিৎসা সেবার কথা ভাববে। পর্যটন কেন্দ্রিক বাংলাদেশী রোগীর পরিমাণ বিশ্বের অন্যান্য দেশে কিন্তু কমবে না। বরং বাড়তেই থাকবে। বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর দেখা গেছে ভারতে ইতিমধ্যেই এক তৃতীয়াংশ রোগী কমে গেছে। শুধু তাই নয়। চিকিৎসা করতে যাওয়া এদেশের মানুষের কাছে ভারতের শপিংমল, খাবার, রেস্তোরা, আবাসিক হোটেল, হাসপাতাল, ক্লিনিক, মানি-একচেঞ্জ, বাস-ট্রেনসহ ভারতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থায় কিন্তু পুরোই ধ্বস নেমে গেছে। বলতে গেলে আগস্ট থেকেই সব বন্ধ। শপিংমল থেকে আমাদের কাছে ৬০% পন্যসামগ্রী বিক্রি কমে গেছে। আবাসিক হোটেল গুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। জুলাইয়ের আগে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ হোটেলেই বাংলাদেশীরা বুকিং দিতো। এই অবস্থা এখন ৩০% এর কম! ধরুন, ১০০ টি রুমের মধ্যে ৭০ টি রুমই শুন্য থাকছে। যেই রুম গুলোর অতিথি হিসেবে বেশির ভাগই বাংলাদেশী পর্যটকের নাম দেখা যাবে বিভিন্ন হোটেলের রেজিস্ট্রি খাতায়। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশীদের জন্য ভারতীয় ভিসানীতি আপাততঃ বন্ধ রাখার বিষয়ে নাখোশ হচ্ছে। কেননা-বছরে এই পূজোর সময়টিতে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অনেক বাংলাদেশী হিন্দুরা কলকাতায় এসে শপিং করে থাকে। আবার অনেক ব্যবসায়ীরাও ভারতের পোষাক, কসমেটিক্স, পন্য-সামগ্রী কিনে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে যায় ব্যবসার জন্য। এই ক্ষতি এই পূজোর মৌসুমে কতটা অপূরণীয় ক্ষতি করল বছর শেষে নরেন্দ্র মোদি অর্থমন্ত্রী সেটা বিশ্লেষণ করবেন হয়ত। অথচ ভারতের ভুলে গেলে চলবে না শেখ হাসিনা সরকারের আমল থেকে এখন অবধি যে কোন পণ্যদ্রব্যে প্রথমেই কিন্তু আমরা ভারত থেকে আমদানীর কথা বিবেচনা করে থাকি। আগেও কি এই ধরণের বাণিজ্য বন্ধ ছিল কখনও ? বরং শেখ হাসিনা সরকারের সময় থেকেই যে কোন খাবার ও নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য-দ্রব্য চাহিদার তুলনায় কম থাকলে প্রথমেই ভারত থেকে আমদানীর সিদ্ধান্ত নেয়া হতো। সে কারণেই অন্যান্য দেশ থেকে ভারতের জিনিস সহজেই বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ পেতো। বাংলাদেশ ভারতের অবাধ রপ্তানির একটি নির্ভরযোগ্য দেশ হিসেবেই বিবেচিত ছিল। এখন দুই দেশের আমদানী রপ্তানি বাঁধাগ্রস্ত হবে। এটা নিশ্চিত। এই ডিম পর্যন্ত এখন ঝুঁকির মধ্যে! অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর ভারত সাথে সাথেই ২ লাখ ৩১ হাজার ডিম। আমদানী মূল্য ১১ হাজার ১৭২.০৬ ডলার। ১৩ লাখ ৪৮ হাজার ২৪৩. ৯২ টাকা। আর এখন তো রেগুলার ডিম আনা হচ্ছে ভারত থেকে। আরও ৫০ লাখ ডিম আমদানীর কথা। তবে ডিমের ঘাটতি থাকলেই দেশে ডিমের দাম উঠবে নাভিশ্বাস! এই সূত্রধরেই ভারত ডিম নিয়ে অন্যরকম রাজনীতি করে দেখানোর সুযোগটা নিয়েছে । কাকে খুশি করেছে। সবই এদেশের জনগণ জানে। তাদের বৈদেশিক বাণিজ্য ও আর্থিক ক্ষতি এসব নিয়ে না ভেবে তাদের যদি কাউকে সন্তুষ্ট করার মতলব থাকে, সেটাও হবে অনভিপ্রেত। পেঁয়াজ নিয়েও কিন্তু ভারত আমাদের সাথে খামখেয়ালী করেছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতের ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ এসেছে। এটা ভারতও জানে, অন্যান্য দেশের তুলনায় বন্ধুপ্রতিম দেশটি পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় গ্রাহক। বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সিন্ডিকেটের সুবিধা তৈরিতেই ভারত গেল বছর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এই ভারতের কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ভারতের এই আশ্রিতা শেখ হাসিনা-ই বলেছিল এদেশের জনগণকে ভালোবেসে- “ পেঁয়াজ ছাড়াও কিন্তু রান্না হয়। পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করা খাবার খুব সুস্বাদু এবং মজাদার হয়েছে।” পেঁয়াজ নিয়ে শত সমালোচনার পরও কিন্তু বাংলাদেশ নমনীয়। দিনাজপুর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ১৬ টি ট্রাক ৪৫১ মেট্রিকটন পেঁয়াজ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। (১০ সেপ্টেম্বর-২০২৪) খবরে প্রকাশ-৪০ শতাংশ শুল্কায়নে এই পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। আর গোল আলুর কথা বলি। এই আলুর বাজারও কিন্তু বাংলাদেশের অন্যতম ভরসা প্রতিম দেশ ভারত। বাংলাদেশ ওদের খুব বড় আলুর বাজার। ২৫ সেপ্টেম্বর-২০২৪ দিনাপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আড়াই মাস পর ভারত থেকে আলু আমদানী শুরু হয়েছে। ৫ টি ট্রাকে ১০৮ মেট্রিক টন আলু দেশে প্রবেশ করেছে। প্রতি টন আলুতে ১৮০ মার্কিন ডলার আয় করেছে দেশটি। কেজি প্রতি দাম পড়েছে ২১.৬ টাকা। এই তো দেশে যেখানে ৬০ টাকায় উঠেছিল আলুর দাম। এভাবে আমদানী ও পণ্যের সহজলভ্যতা আসলে অন্তবর্তী সরকারের পক্ষে আলুর বাজার মূল্য জনগণের সাধ্যির মধ্যে আনাটা সহজ হবে। কিন্তু ভারত বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক সু-সম্পর্ক নষ্ট করলে, সেটা তাদের জন্য হবে ‘নিজের পায়ে কুড়াল চালানো’। সেই সুযোগে বসে থাকবে না চীন, পাকিস্তান, তুরস্কসহ অন্যান্য দেশ। এই দেশগুলোও বাংলাদেশের সাথে সু-হৃদ রপ্তানির সাথে জড়িত। ভারতের সাথে কোন তিক্ত খবরে সবসময় মুখিয়ে থাকে চীন। আমাদের পোশাক শিল্পের জনপ্রিয়তার অন্যতম মাধ্যম সুতা। যার প্রধান কাঁচামাল তুলা। ভারতের তুলার বাজারও ছিল বাংলাদেশকে ঘিরে। আগস্টের হিসেবে এই পণ্য রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশ বা ১ বিলিয়ন ডলার। গত বছর তারা রপ্তানি করেছে ১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের তুলা। তুলা নিয়েও দেখা যাবে ভারত সরে গেলে, এই বাজার চলে যাবে চীনাদের দখলে। ভারতের কাছে তো এই খবরটা এখন বিষফোঁড়ায় আঘাত লাগার মতো হওয়ার কথা, (১৮ সেপ্টেম্বর-২০২৪) ২০-২৫ দিনের পরিবর্তে চীন থেকে সরাসরি মাত্র ৯ দিনে ৫৫২ টি কন্টেইনারবাহী জাহাজ এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশে। তাও ১০০% শুল্কমুক্ত ঘোষণা করেছে চীন সরকার। আর এর বিপরীতে- ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর প্রতিবেদনে কি উঠে এসেছে ?
বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানিতে বড় পতনের খবর! খবর এসেছে তাদের মুদ্রার মূল্য কমার দিকেই পতিত!
আগস্টে তাদের রপ্তানি কমেছে ২৮ শতাংশ। ৬৮১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর যেখানে ভারত রপ্তানি করেছে ৯৪৩ মিলিয়ন ডলার পণ্য। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারতের অংশ কমেছে। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম এর মত দেশ কিন্তু এগিয়ে গেছে। ২০২২ সালে এএলটিএফ রপ্তানিতে ভারতের অংশ কমে ৩.৫ % বাংলাদেশ সেখানে ৫.৯% অর্জন করেছে।
প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি প্রকিষ্ঠানকে ভারত থেকে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেয়া দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এভাবে প্রাক্তন সরকারের সময়কে পেঁয়াজ, বেগুণ, ডিম থেকে শুরু করে শেষ অবধি- জুনের মাঝামাঝিতে মরিচের ঝাল কাকে বলে দেখেছে জাতি। কাচামরিচ এর কেজি একহাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রির রেকর্ড ছিল। জুন জুলাই-তে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি করা হয়। যে জিনিসটার-ই দাম বেড়েছে। সরকার কিন্তু আমদানির নাম উঠলেই ভারত থেকে সাথে সাথে ট্রাক ভরে মাল আনা শুরু করেছিল। ভারতের কাছে আমদানি নির্ভরতা মানে যে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় আর তাদের সেটা আয়-সেটা এদেশের জাতি বুঝলেও সাবেক সরকার সেটা বুঝেনি। দেশে লক্ষ কোটি বেকার যুবক। হাস মুরগি পোলট্রি পেশায় এদের সম্পৃক্ত করতে হবে। বিনাসুদে এদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা দানে ড.ইউনূস সরকার পাশে দাঁড়ালে ডিমের রাজনীতি বন্ধ হতে বেশি সময় লাগবে না। নিজের দেশের কৃষিজ সহজীকরণে নিত্য পণ্য উৎপাদণে দেশকে এগিয়ে নিলে প্রতি বছর আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকা কিন্তু বেঁচে যেতে পারে। আমদানী নির্ভর কৃষিজ ব্যবস্থাকে আরও ঢেলে সাজাতে নিতে হবে কার্যকরী উদ্যোগ। এটা না করতে পারলে আমরা অর্থনৈতিক ঝুঁকির ভেতর পড়ব। সিন্ডিকেট প্রথা ভেঙে ফেলতে হবে। না হলে চাল, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, ভোজ্য তেল ইত্যাদি পণ্যের দাম কমবে না কখনও। এর সুযোগ নিয়ে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোই শুধু ফায়দা লুটবে। হাতিয়ে নিবে হাজার হাজার কোটি টাকা। এসব কারসাজিতে ভারতের ইন্ধনকেও রুখে দিতে হবে। বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ে ভারত কি করবে, সেটা তাদের একান্ত ব্যাপার। ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তাকে দুরে ঠেলে দিতে না পারলে কি হয়, কি হতে পারে, এই নিবন্ধটি-ই তো হতে পারে তাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের পূর্ণ ময়নাতদন্ত! এপাড়ে দাম হাঁকিয়ে ওপারের মাল এনে হাহাকার রোধ করার কালচার মূলতঃ আমাদের দেশের বাজার ব্যবস্থা পুরো শেষ করে দিয়েছে! পরিস্কার আকাশে সাদা মেঘের মতই সেটা আজ জাতি দেখতে শিখে গেছে যে! এই জাতিকে আর ঠকানো যাবে না। জাতি এগিয়ে যাবে। বিশ্ব দরবারে সদ্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেটাই জানান দিলেন-জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে। আমরাও গর্বিত এমন একজন নেতার আবির্ভাবে। বিশ্বমঞ্চে আবার-ও মানুষ চিনলো বাংলাদেশকে। শান্তিপ্রিয় এই অভিভাবকের হাত ধরে এখনই সময় একটি নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের।
কিন্তু দুভার্গ জাতি আমরা। এখনও ভারত সরকারকে বাংলাদেশ অনুনয় করছে। কেন? সাবেক মেহমান হয়ে থাকা প্রধানমন্ত্রী যেন বেফাস কোন বক্তব্য না ছাড়ে …হা হা হা! কি যে একটা অবস্থা? জাতির সব ধ্বংস করে। দেশ শেষ করেও গলাবাজির রাজনীতির কাছেই যেন আটকে আছি আমরা?
লেখক: সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা
ছবি : অনলাইন