সংস্কার বিষয়ে সমাধান এখনও লেজেগোবরে অবস্থায়। দায়িত্ব নিয়ে মেয়াদ ৬ মাস না যেতেই নতুন একটি সমালোচনার সৃষ্টি করল ড.ইউনুস সরকার। প্রায় শতাধিক পণ্যের ওপর উৎস কর বৃদ্ধি করে-ভ্যাট নিয়ে দেশ এখন আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
সরকারের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদ রয়েছেন এখনও উপদেষ্টা পরিষদে। কোনরূপ আগাম পূর্বাভাস ছাড়াই কেন হঠাৎ এমন আক্রমণাত্মক সিদ্ধান্ত নিতে হলো- বিষয়টি ঘোলাটে বটে! তবে- বড় বড় ব্যাবসায়ীরা এখনও নিরব থাকলেও গলা ছেড়ে সরব আছেন দেশের ক্ষদ্র ব্যবসায়ী মহল। অনেকেই বলছেন- নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট বসিয়ে সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের পথেই হাঁটছেন অন্তবর্তী সরকার। কিন্তু ভ্যাট বৃদ্ধি নিয়ে ড.ইউনুস সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলছেন ভিন্ন কথা। প্রেস সচিব বলেন- “ আমরা বলছি না যে ট্যাক্স বাড়ালে মানুষের ওপর প্রভাব পড়বে না। তবে আমরা মনে করছি সেটা খুব মিনিমাম হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ট্যাক্স-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে হবে। এরই প্ররিপ্রেক্ষিতে কিছু পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন- ‘ দেশের মানুষের ভালোর জন্য এবং প্রবৃদ্ধি বাড়াতেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ’
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন-স্ট্যাবিলিটি বাড়ানোর জন্য ট্যাক্স-ডিডিপির অনুপাত বাড়াতে হবে। ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি করাটা যে কোন সরকারকেই নাজুক অবস্থায় ফেলে দেয়। এ ধরণের সিদ্ধান্ত দুর্বল অবস্থার প্রতিফলন ছাড়া কিছু না। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে গিয়ে দেশের মানুষকে কোনঠাসায় ফেলে দেয়ার কোন মানে হয় না বলেই মন্তব্য করছেন বেশিরভাগ মানুষ। অনেকেই বলছেন আপামর জনসাধারণকে বোঝার সক্ষমতা না থাকলে সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আগের সরকার ও এখনকার সরকার কোন সরকারই যে আইএমএফ-এর প্রভাবমুক্ত নয়। এটাই এখন প্রতিফলিত হলো।
জানা যায়; বিগত ৫ মাসে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি দেখানো হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটটি মূলত সরকারকে মেটাতে হবে। সরকারের কালেকশন টার্গেট ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। যা সম্পুন্ন হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার একটু বেশি। আমাদের ট্যাক্স জিডিপির যে আনুপাতিক হার তা বিগত কয়েক বছর ধরেই নিচের দিকে। সেখান থেকে ৫-৬ মাসের মেয়াদে এই সরকারের ট্যাক্স ঘাটতিও ঠিক আগের মতই! বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট- বাংলাদেশের গ্রোথের -স্ট্যাবিলিটি বাড়াতেই ট্যাক্সকে একটা বিশেষ জায়গায় নিতেই সরকারের আকস্মিক ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত।
তবে মূল্যস্ফীতির ঠিক এই সময়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ কতটা ন্যায়সঙ্গত এটা নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা ও জনমণে ক্ষোভ চলছেই। বোঝাই যাচ্ছে- নতুন বছরের শুরুতেই হঠাৎ করে প্রায় শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে জাতীয় রাজস্ববোর্ড (এনবিআর) ভোক্তাদের ওপর আরও কঠিন রকমের চাপ সৃষ্টি করেছে। এতে যেমন ব্যবসায়ী শ্রেণী বিপাকে পড়েছে, স্বল্প আয়ের লোকদের জীবনও পড়ে গেল আরও কঠিন অবস্থায়। দেশবাসীর কথা- ‘ভ্যাট একটি প্রত্যক্ষ কর। যা ভোক্তারা প্রদান করেন। যার জন্য এটা ভোক্তাকর। ভ্যাট দেন ভোক্তারা বলেই তো এর চাপ সরাসরি ভোক্তার পিঠে একটা বোঝার মতো চাপিয়ে দেয়া হলো! আর বর্ধিত ভ্যাটের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়া মানেই কিন্তু ধুরন্ধর ব্যবসায়ীরা আরও জুলুমবাজী শুরু করবে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় পণ্যের দাম ও সেবা বাড়িয়ে দিবে। এতে করে ভোক্তা বা জনগণকেই তো পড়তে হবে বিপাকে। আগের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিন্তু জনগণকে কি পণ্য ক্রয় ও সেবা গ্রহণ করতে হবে।’ এই বিষয়টাই নিয়েই এখন দেশবাসী বেশি চিন্তিত। আর আসন্ন মাহে রমজানের আগেই এমন দ্রুত ভাবনাহীন একটি সিদ্ধান্ত জনমনে হতাশা আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলো।
দেশের বেশিরভাগ মানুষ এমনিতেই মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট। সরকারের এই জটিল সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগেই জনগণের বিষয়টা অন্তবর্তী সরকারের ভেবে দেখা উচিত। ভ্যাট না বাড়িয়ে কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা ঠেকানো বেশি জরুরি। কর ফাঁকি রোধ করতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান চলে আসবে।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি