মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্যক্তি একই সাথে কোভিড-১৯ এবং মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। একই সাথে দুটি ভাইরাসে আক্রান্তের এই ঘটনা বিশ্বে প্রথম বলে দেশটির বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
দুই ভাইরাসে আক্রান্ত মিচো থম্পসন নামের ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা। মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসিকে থম্পসন বলেছেন, তিনি জুনের শেষের দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কয়েক দিন পর তিনি পিঠ, পা, হাত এবং ঘাড়জুড়ে লাল ক্ষত দেখতে পান। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাকে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন।
একই সময়ে করোনা এবং মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের ব্যাপারে এনবিসিকে থম্পসন বলেন, চিকিৎসকরা একেবারে নিশ্চিত করেন যে, আমার মাঙ্কিপক্স এবং করোনা— উভয় ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। দুই ভাইরাস তাকে এমন করে ফেলেছিল যে, তিনি ‘ইনফ্লুয়েঞ্জার গুরুতর সংক্রমণে’ ভুগছেন বলে ধারণা করেছিলেন।
এদিকে, ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের কারণে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস নিয়ে শনিবার বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস নিয়ে ডব্লিউএইচওর জরুরি কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সতর্কতা জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৭৫টিরও বেশি দেশে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
আগামী কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে ২ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো দুই শিশুর মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে।
ভাইরাল সংক্রমণজনিত এই রোগটি পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকায় সাধারণত সবচেয়ে বেশি দেখা গেলেও চলতি বছর সেই গণ্ডি পেরিয়েছে। গত ৭ মে প্রথম একজন ইউরোপীয় নাগরিকের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। নাইজেরিয়া থেকে ওই ব্যক্তি ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছিলেন।
শনিবার গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্স প্রাদুর্ভাবে অন্তত ৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। মাঙ্কিপক্সের সতর্কতা ছাড়া বিশ্বজুড়ে বর্তমানে করোনাভাইরাস মহামারি এবং পোলিও নির্মূলের অব্যাহত প্রচেষ্টা নিয়ে এ ধরনের দুটি জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি রয়েছে।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাসজনিত অসুখ। স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির একটি ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। ভাইরাসটির দু’টি রূপান্তরিত ধরন রয়েছে— মধ্য আফ্রিকান ও পশ্চিম আফ্রিকান।
রোগটির বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। প্রথম পর্যায়ে রোগীর জ্বর আসে, পাশাপাশি শরীরে দেখা দেয় ফোস্কা ও অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি ওঠে। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাত ও পায়ের তালুতে।
১৯৭০ সালের পর থেকে আফ্রিকার ১১ দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের পর নাইজেরিয়ায় এবার সবচেয়ে বেশি এ রোগের প্রকোপ দেখা গেছে। দেশটিতে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের দেহে উপসর্গ দেখা গেলেও ১৫ জনের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।