২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ৩:২৫
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ৩:২৫

এবারও বসছে না লালন মেলা

আগামী ১৭ অক্টোবর (১লা কার্তিক) আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩১ তম তিরোধান দিবস। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া লালন আখড়াবাড়িতে শত শত ভক্ত-অনুসারীরা দূর-দুরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন। কালি নদীর পাড় ঘেঁষে লালন মাঠে প্রায় ৪০টি অস্থায়ী থাকার জায়গা ও কয়েকটি দোকান বসেছে। তবে তিরোধান দিবস উপলক্ষে এবার লালন মেলা হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কুষ্টিয়ার জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা সুজন রহমান।

মরমি সাধক ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে ১৮৯০ সালের পহেলা কার্তিক মারা যান। এখানে পরবর্তীতে লালন মেলার আয়োজন শুরু করে লালন একাডেমি।

রোববার (৩ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ফকির লালন শাহের ১৩১ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে শত শত ভক্ত-অনুসারীরা দূরদূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন লালন শাহ এর আখড়াবাড়িতে। কালি নদীর পাড় ঘেঁষে লালন মাঠে প্রায় ৪০টি অস্থায়ী থাকা-বসার জায়গা ও কয়েকটি দোকান বসেছে। কেউ সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে গান গাইছেন, কেউ রান্না করছেন। তারা ঢাকা, চাঁদপুর, মাদারীপুর সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা জড়ো হচ্ছেন ছেঁউড়িয়ায়।

শফি পাগল নামের এক ব্যক্তি বলেন, গত ৫দিন আগে আমি এখানে এসেছি। আমি একজন লালন ভক্ত। লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস উপলক্ষে আমি এখানে এসেছি। আমার মতো শত শত ভক্ত-অনুসারীরা এখানে এসেছেন। প্রতিদিনই লোকজন আসছে বিভিন্ন জেলা থেকে।

সাথি-সঙ্গী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসা সুফিয়া খাতুন বলেন, আমরা চাঁদপুর থেকে গত কয়েকদিন আগে এসেছি। রান্নার ব্যবস্থা করেছি। থাকার ব্যবস্থাও করেছি। লালন ফকিরের তিরোধান দিবস উপলক্ষে এসেছি।

স্থানীয় চায়ের দোকানদার জালাল ও চটপটি বিক্রেতা রিপন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লালন ভক্তরা এসে জড়ো হচ্ছেন। তারা তিরোধান দিবস উপলক্ষে এখানে আসছেন। এতে আমাদের বেচা-কেনা মোটামুটি আগের তুলনায় ভালো হচ্ছে।

লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গত বছরে লালন মেলা বন্ধ ছিল। এবারও লালন মেলা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আরও দুসপ্তাহ পরে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩১ তম তিরোধান দিবস। কিন্তু ইতিমধ্যে দূর-দুরান্ত থেকে ছেঁউড়িয়ায় আসতে শুরু করেছেন অনেকেই। যারা গাজা সেবন ও বিক্রি করছে।

জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা সুজন রহমান বলেন, করোনার কারণে গতবারের মতো এবারও ১ কার্তিক ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণে লালন শাহের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান হবে না। মেলা হবে না এটা কনফার্ম। সাধুদের দাবি আছে যে, এবার অন্তত তাদের মাজারের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সাধুদের ঢুকতে দেওয়া হবে। তবে সেটা কিভাবে, কোন প্রসেসে হবে সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামকে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ডিসি) শারমিন আখতার বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অফিস-আদালত সবকিছু খুললেও করোনা সতর্কতায় সব ধরনের সমাবেশ বন্ধ। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক স্যার পদক্ষেপ নিবেন। 

প্রসঙ্গত, ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর স্মরণে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন এই স্মরণোৎসব চালিয়ে আসছে। প্রতিবছর ১ কার্তিক আড়ম্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় লালন শাহের তিরোধান দিবস পালন করা হয়। কিন্ত গতবার আয়োজনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনা। স্থগিত করা হয় তিরোধান দিবসের সব আয়োজন। 

Facebook
Twitter
LinkedIn