২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ৮:৩৬
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ৮:৩৬

ওমিক্রন’ ভ্যারিয়েন্টে উপসর্গ কেমন, জানালেন দ. আফ্রিকার চিকিৎসক

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে প্রথম সতর্ক ঘণ্টা বাজানো দক্ষিণ আফ্রিকার একজন চিকিৎসক বলেছেন, তার কাছে চিকিৎসা নেওয়া সন্দেহভাজন কয়েক ডজন ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর শরীরে কেবলমাত্র মৃদু উপসর্গ দেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়াই তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকা মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি ফরাসি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, গত ১০ দিনে তিনি অন্তত ৩০ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন; যারা করোনা পজিটিভ ছিলেন। তবে তাদের শরীরে তিনি কিছু ‘অপরিচিত উপসর্গ’ দেখতে পেয়েছেন।

ডা. অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজি বলেন, ‘আমার কাছে চিকিৎসা নেওয়া বেশকিছু ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমতি রোগীর শরীরে মৃদু উপসর্গ দেখেছি। হাসপাতালে ভর্তি ছাড়াই তারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৮ নভেম্বর আমার ক্লিনিকের সাতজন রোগীর মধ্যে অপরিচিত উপসর্গ ছিল। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ধরনের থেকে যার পার্থক্য খুবই কম। ওইদিন একজন রোগী আমাকে অত্যন্ত ক্লান্তি অনুভব করার কথা জানান। তার শরীরে ও মাথায় হালকা ব্যথা অনুভব করছেন বলেও উল্লেখ করেন।’

ডা. কোয়েটজি বলেন, ‘রোগীদের মধ্যে যে উপসর্গ ছিল, তা সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে যেহেতু আমরা বিগত ৮-১০ সপ্তাহ করোনার সংক্রমণ সেভাবে পরীক্ষা করে দেখিনি, তাই তাৎক্ষণিক আমরা তাদের নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাতে ওই রোগী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের পজিটিভ রিপোর্ট আসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একই দিনে আমরা একই উপসর্গের আরও কিছু রোগী পেয়েছিলাম। তখনি আমরা ভেবেছিলাম, ভিন্ন কোনো কিছু দেখতে যাচ্ছি আমরা। সেদিন আমি নতুন এ ধরনে সংক্রমিত দুই থেকে তিনজন রোগী দেখেছিলাম।’

অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজি বলেন, ‘ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই পুরুষ, যাদের বয়স ৪০ বছরের নিচে। আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে অর্ধেকই করোনা টিকার পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন। তরুণ রোগীদের ক্ষেত্রে ওমিক্রন খুবই অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। তাদের সতর্ক হওয়া জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সময়ে আমরা অসংখ্য ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমিত রোগী দেখেছিলাম। তবে নতুন এ ধরনটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্লিনিক্যাল যে চিত্র, তার সঙ্গে তেমন মিল নেই। ওমিক্রন আক্রান্তদের অধিকাংশই অতি মৃদু উপসর্গে ভুগছেন। আক্রান্তদের পেশীতে মৃদু ব্যথা, গলায় খুসখুস ভাব এবং শুকনো কাশি হচ্ছে। অল্প কয়েকজনের শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বেশি পাওয়া গেছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত এই ধরনকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ভ্যারিয়েন্টটির আচরণ বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

স্পাইক প্রোটিনে ৩২ বার রূপ বদলে ফেলা এই ভ্যারিয়েন্টকে অত্যন্ত সংক্রামক এবং টিকাপ্রতিরোধী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। যদিও ভ্যাকসিনের সুরক্ষাকে এই ভ্যারিয়েন্ট ফাঁকি দিতে পারে কি-না সেটি নিয়ে এখনও পর্যালোচনা চলছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, বতসোয়ানা, হংকং এবং ইসরায়েলসহ বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।

আফ্রিকা মহাদেশে করোনাভাইরাস মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটিতে দৈনিক কোভিড-১৯ পজিটিভের হার বুধবার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হলেও শনিবার তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছেছে।

তবে বিশ্বের অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকার করোনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে প্রায় ২৯ লাখ মানুষ আক্রান্ত এবং ৮৯ হাজার ৭৯১ জন মারা গেছেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn