বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবুল কালামসহ ৭ পুলিশ সদস্য এবং সমাজসেবা অফিসারকে বরখাস্তের আদেশসহ গত ১৩ জুন দেওয়া হাইকোর্টের পুরো রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও অভিযুক্তদের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর ঘটনায় ওই রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট, যা চেম্বার আদালতে স্থগিত হয়ে গেল। একইসঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ১ আগস্ট দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন আদালত।
রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের আদালত এই আদেশ দেন।
আদালতে পুলিশের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন ফকির। অপরপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট জামিউল হক ও ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার শিউলী।
ছয় বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুকে আসামি করে গত বছরের ৬ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ওইদিনই চার শিশুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৭ অক্টোবর তাদের যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ। এ নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়।
৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার ৮ থেকে ৯ বছরের ৪ শিশু। প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় তাদের বুকফাটা কান্না এবং কারাগারে পাঠানো নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করে একটি টেলিভিশন। এ প্রতিবেদন দেখে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীম স্বপ্রণোদিত হয়ে ৮ অক্টোবর রাতে ভার্চুয়ালি আদালত বসান। ৪ শিশুকে দ্রুত মুক্তির নির্দেশ দিয়ে রাতেই শিশুদের এসি মাইক্রোবাসে করে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলেন হাইকোর্ট। পরদিন ৯ অক্টোবর শিশুদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় মায়ের কোলে। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশকে। ভুল স্বীকার করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তা উচ্চ আদালতে ক্ষমা চান।
এরপর ১১ অক্টোবর চার শিশুর বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণের মামলা স্থগিত করেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। পাশাপাশি এ বিষয়ে রুল জারি করেন আদালত।
চলতি বছরের গত ১৩ জুন বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রেরণের ঘটনায় মামলা বাতিল এবং বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবুল কালামসহ ৭ পুলিশ সদস্য ও সমাজসেবা অফিসারকে বরখাস্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দিতে বলা হয়। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন।
পরে ওই রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের ওপর রোববার (২০ জুন) শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া পুরো রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেন চেম্বার আদালত।