পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড রাশিয়ার আবিস্কৃত করোনাভাইরাসের টিকা ‘স্পুটনিক ভি’ এর ১ কোটি ডোজ আমদানি করতে চায়। পাশাপাশি কোম্পানিটি এই টিকা উৎপাদনেও আগ্রহী।
কোম্পানিটি এই বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে।
অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এম এ মোমেন কোম্পানিটিকে আলোচিত বিষয়ে অনুমতি দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে একটি আধাসরকারি চিঠি দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ গত ৩০ মে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠিসহ একটি সুপারিশপত্র পাঠিয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড ১০ মিলিয়ন ডোজ (১ কোটি) টিকা রাশিয়া থেকে আমদানি ও তাদের নতুন প্রতিষ্ঠিত সর্বাধুনিক কারখানায় শুধুমাত্র কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব পেশ করেছে। ওরিয়ন ফার্মার প্রস্তাবটি কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে দেশের সকল জনগণকে টিকাদানের আওতায় আনতে সরকারের প্রচেষ্টার সাথে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেহেতু কোভিড অতিমারি সহজে এবং কয়েক মাসের মধ্যে চলে যাবে বলে মনে হয় না, তাই এই টিকা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে পারলে দেশের ও দশের মঙ্গল হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। Orion Pharma Limited এর প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।’
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা: মোঃ শিবির আহমেদ ওসমানী স্বাক্ষরিত এই চিঠির অনুলিপি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি-আ তা জানা যায়নি। তাছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে জটিলতার পর থেকে সরকার বেসরকারি উদ্যোগের পরিবর্তে সরকারিভাবে টিকা আমদানি করতে আগ্রহী। বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে ৩ কোটি ডোজ টিকা বিক্রির চুক্তি এবং দেড় কোটি ডোজের টাকা নিয়েও সময়মত টিকা দিচ্ছে না সেরাম ইনস্টিটিউট। এ কারণে সরকারের গণ টিকাদান কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়ছে। টিকার অভাবে কর্মসূচিটি স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছে সরকার। এদিকে সেরামের প্ল্যান্টে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণকারী প্রায় ১২ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে টিকা আমদানির মতো ঝুঁকি আর নিতে চায় না সরকার।
উল্লেখ, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জরুরিভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য এখন পর্যন্ত ৬টি টিকার অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে স্পুটনিক ভি-ও আছে। গত এপ্রিল মাসের শেষভাগে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
রাশিয়ান সরকার বাংলাদেশে টিকা বিক্রির পাশাপাশি তাদের টিকা উৎপাদনের প্রযুক্তি হস্তান্তরেও আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে। অন্যদিকে সরকার স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনে সক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলোর মান যাচাইয়ে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি গঠনের সময় জানানো হয়, দেশের ৩টি ওষুধ কোম্পানির প্ল্যান্টে করোনার টিকা উৎপাদনের মতো সক্ষমতা রয়েছে। কোম্পানি তিনটি হচ্ছে- ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। তখন সরকারের তালিকায় ওরিয়ন ফার্মার নাম ছিল না। তাছাড়া কোম্পানিটির নতুন প্ল্যান্টে টিকা উৎপাদনের অভিজ্ঞতার বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। তাই সরকার স্থানীয়ভাবে করোনার টিকা উৎপাদনের অনুমতি দিলেও ওরিয়ন ফার্মার এই অনুমতি পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
এদিকে স্পুটনিক ভি আমদানি ও উৎপাদনের অনুমতি চাওয়ার খবরেই বাজারে উর্ধমুখী হয়ে উঠে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ারের দাম। আজ বুধবার (১৬ জুন) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এই কোম্পানির শেয়ারের দাম প্রায় পাঁচ শতাংশ বেড়ে ৫৪ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৫৭ টাকা ২০ পয়সায় উন্নীত হয়।