করোনা ভ্যাকসিন দেশেই তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এবিষয়ে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ গ্রহন করেছে। প্রধানমন্ত্রীও ভ্যাকসিন তৈরিতে অত্যন্ত আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন বাংলাদেশেই করোনার ভ্যাকসিন তৈরি হোক এবং ভ্যাকসিনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হই। অন্যান্য ঔষধের মতো ভ্যাকসিনও যাতে বিদেশে রপ্তানী করতে পারি সেই স্বপ্ন আমরা দেখি।
রবিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে গাজীপুরে কাশিমপুর সুরাবাড়ী ডিবিএল ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে ও দিকনির্দেশনায় আমরা করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগসহ দেশের সকল মানুষ কাজ করেছে। তাঁর সহযোগিতায় চিকিৎসক-নার্সসহ হাসপাতাল সার্ভিস, অক্সিজেন, ঔষধ, ভ্যাকসিন চিকিৎসা সামগ্রী প্রাপ্তির কারণেই দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমে এসেছে। এ দেশে একজনের মৃত্যু দিয়ে করোনা শুরু হয়েছিল। করোনায় প্রায় পৌণে তিনশ’ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা আনন্দিত যে গতকালই মৃত্যুর হার সেই একজনে নেমে এসেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বিধায় দেশের জীবন যাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আমরা এটা স্বাভাবিক রাখতে চাই। এটা সম্ভব হবে যদি আমরা সবাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলি। তাহলেই অল্প সময়ের মধ্যেই মৃত্যুর হার শুণ্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে আমি আশা করি। তিনি এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, করোনা প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই আমরা করোনা ভ্যাকসিনের প্রায় ৭কোটি ডোজ টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি। এটা দেশে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমার অন্যতম কারণ। প্রত্যেক মাসে ভ্যাকসিন কার্যক্রম আরো জোরদার করা হচ্ছে। এ মাসেই আরো ৩ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া যাবে বলে আমি আশা করছি। তিন কোটি ডোজ টিকা দিতে পারলে আরো প্রায় দুই কোটি লোক টিকা পেয়ে যেতে পারে। ২১ কোটি টিকা ক্রয় করা হয়েছে। সিরিঞ্জও বিদেশ থেকে ক্রয় করেছি। আমরা সিডিউল অনুযায়ী সেগুলো পাচ্ছি। নতুন করে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম গ্রাম পর্যায়ে পৌছে গিয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। দেশের হাসপাতালগুলোতে জনবল সংকট রয়েছে। আমরা নতুন করে আরো চার হাজার ডাক্তার ও আট হাজার নার্স নিয়োগ দিচ্ছি। ইতোমধ্যেই টেকনেশিয়ান নিয়োগের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। প্রথমে ২হাজার ও পরে আরো ১১ হাজার টেকনেশিয়ান নিয়োগ দেয়া হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবিএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ ওয়াহেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ জব্বার স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বালাদেশ ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাফায়েত উদ্দিন আহমেদ, ড. হাবিব-ই-মিল্লাত, ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. আবুল বাশার, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এস এম আব্দুর রহমান প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জব্বার বলেন, টেকসই উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষই ডিবিএল গ্রুপের মূলমন্ত্র। এখানে বিশ^মানের ঔষধ উৎপাদনের মাধ্যমে কেবল দেশবাসীর জন্য নয়, উন্নত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী অনুষ্ঠানিকভাবে ঔষধ কারখানাটির উদ্বোধন করেন। পরে তিনি কারখানাটি পরিদর্শণ করেন এবং কারখানা চত্বরে একটি ঔষধি গাছের চারা রোপন করেন। এসময় ডিবিএল গ্রুপের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গাজীপুরে কাশিমপুরের সুরাবাড়ী এলাকায় প্রায় ১২ একর জমির উপর প্রায় ৭শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগে ডিবিএল গ্রুপের এ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রায় দুই বিলিয়ন ইউনিট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এ প্রকল্পটিতে টেবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ, ইনজেকশন, ইনহেলারসহ প্রায় সব ধরনের ঔষধ উৎপাদন করা হবে।