করোনার ডাবল ডোজ টিকার সনদ না থাকায় দেশ ছেড়ে উড়াল দেওয়া সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান কানাডা ঢুকতে পারেননি বলে জানা গেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট ও কোভিড প্রোটোকল না মেনে মুরাদ কীভাবে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কানাডায় গেলেন?
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসানকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী শাহজালাল এয়ারপোর্ট পরিদর্শন করতে যান। পরিদর্শন শেষে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিমানবন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এ সময় শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদ-উল আহসানও কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তৌহিদ-উল আহসান বলেন, বিমানবন্দর দিয়ে যেসব যাত্রী বাইরের দেশে যান, সেসব বহির্গমন যাত্রীদের স্বাস্থ্য সনদ চেক করা, ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট চেক করার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নয়। আমরা ইমিগ্রেশন করি, যাত্রীদের সেবা দিই। ইমিগ্রেশন শাখা ইমিগ্রেশন করবে, স্বাস্থ্যের কাজ স্বাস্থ্য করবে। মুরাদ সংক্রান্ত তথ্য জানতে হলে আপনাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করলে তারা ভালো উত্তর দিতে পারবে।
ডা. মুরাদের ভ্যাকসিনেশন সনদ ছাড়াই দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়টি আপনাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এই বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পারলাম।
এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট কাজ করে। ইমিগ্রেশনের কাজ করে পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি দেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কোভিড আসার আগেও কিন্তু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি ফরম পূরণ করতে হতো। এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এনবিআর কাজ করে কাস্টমসের। এ বিষয়টা যদি আমরা ক্যাব-এর পক্ষ থেকে করতে চাই তাহলে তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। সদ্য অব্যাহতি নেওয়া সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের বিষয়ে আপনাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যারা আছেন তারা দিতে পারবেন।
এদিকে, ডা. মুরাদ হাসান কানাডা ও দুবাইয়ে ঢুকতে না পেরে দেশে ফিরেছেন। রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে দুবাই থেকে ৪ ঘণ্টা ২১ মিনিটের যাত্রা শেষে এমিরেটসের ইকে-৫৮৬ নম্বর ফ্লাইটটি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। অবতরণের নির্ধারিত সময় এদিন বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিট হলেও ৫টা ৭ মিনিটের দিকে ফ্লাইটটি ঢাকায় পৌঁছেছে।
এর আগে ডা. মুরাদ দুবাই থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ( ইকে-৫৮২) বিমানে দেশে ফিরছেন সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটের ফ্লাইটে এমন খবরে সাংবাদিকরা ভোর থেকেই ভিড় করেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
কিন্তু নির্ধারিত বিমানটি ল্যান্ড করলেও ওই ফ্লাইটে ডা. মুরাদ হাসান বাংলাদেশে আসেননি।
নারীর প্রতি অশোভন মন্তব্য করে বিতর্কিত হওয়া সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় ১টা ৩১ মিনিটে টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন।
পরে বাংলাদেশে নারীদের হয়রানি, অপমান এবং নির্যাতনের কারণে তাকে ইমিগ্রেশন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই সঙ্গে তার কাছে বিভিন্ন ভিডিও, ছবি ও সংবাদ এর বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি কী কারণে কানাডায় এসেছেন, সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়।
এ সময় কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ দেখাতে ব্যর্থ হন ডা. মুরাদ। তার সরকারি ও ব্যক্তিগত পাসপোর্ট জটিলতার বিষয়েও কানাডা ইমিগ্রেশন জানতে চাইলে কোনো সঠিক উত্তর দিতে না পারায় তাকে কানাডা পিয়ারসন এয়ারপোর্ট থেকে পুনরায় দুবাইয়ে ফেরত পাঠানো হয়।
অশালীন, শিষ্টাচারবহির্ভূত, নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর বক্তব্য প্রদান এবং এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে অশালীন ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর গত সোমবার জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মঙ্গলবার তিনি পদত্যাগ করেন। সেদিন রাতেই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় বুধবার তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে মুরাদ হাসানকে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।