মিয়ানমারের নতুন সেনাশাসক মিন অং লাইং বলেছেন, সেনাবাহিনী একটি নতুন নির্বাচন দেবে এবং এতে বিজয়ীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। দেশটিতে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো এমন বক্তব্য এলো।
১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর সোমবার প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন মিয়ানমারের বর্তমান শাসক ও সেনাপ্রধান লাইং। এদিন গত বছরের নভেম্বরের অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ আবারো তোলেন তিনি।
ভাষণে মিন অং লাইং বলেন, ‘আগের সময়ের চেয়ে এবারের সামরিক সরকার একেবারেই আলাদা। পূর্বের সামরিক শাসনের তুলনায় এই সামরিক সরকার ‘সত্য ও শৃঙ্খলাবদ্ধ গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করবে।’
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সু চি সরকারকে উৎখাতের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটিতে এক বছরের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং সামরিক শাসন জারি করে।
১৯৬২ সালের অভ্যুত্থানের পর এ সামরিক বাহিনী ৪৯ বছর দেশটির শাসন ক্ষমতায় ছিল।
এদিকে, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষ।
সোমবার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত এমআরটিভিতে সেনাবাহিনীর একটি বিবৃতি ঘোষণা করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, জননিরাপত্তা ও আইনের শাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, বাধা তৈরি ও ধ্বংস করার যে আক্রমণাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আইন অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অপরদিকে শনিবার থেকে শুরু হওয়া মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভের তৃতীয় দিন দেশটির বিভিন্ন শহরের রাস্তায় প্রতিবাদ করেছে বিক্ষোভকারীরা। রাজধানী নেপিডোসহ দেশটির বৃহত্তম দুই শহর ইয়াঙ্গুন ও মান্দালায়ের রাস্তায় হাজার হাজার লোক বিক্ষোভে অংশ নেয়।
বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে জনতার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভকারীরা ‘নাগরিকের জন্য পুলিশ’ স্লোগান দিয়ে মোতায়েন পুলিশ সদস্যদের ফুল, পানির বোতল, হালকা খাবার ও সিগারেট উপহার দেয়।
রাজধানী নেপিডোতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ছোঁড়ে নিরাপত্তা বাহিনী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, নেপিডোর রাস্তায় সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে হাজার হাজার লোকের বিক্ষোভ করার সময় নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে জলকামান ছোঁড়ে।
বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ডাক্তার, নার্স, শিক্ষক ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীসহ লাখো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় তারা ‘স্বৈরাচারকে না বলুন’ ও ‘আমরা চাই গণতন্ত্র’ লেখা ব্যানার বহন করেন। একই সাথে বিক্ষোভকারীরা বৌদ্ধ ধর্মীয় পতাকা ও ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) পতাকা বহন করে।