২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / ভোর ৫:৩৫
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / ভোর ৫:৩৫

গ্যাসের বর্ধিত দাম কার্যকর পেছানোর আভাস

বৈশ্বিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলার সংকট, উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে নানা প্রকার বাধার কারণে শিল্পখাত স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার গ্যাসের নতুন বর্ধিত দামের প্রয়োগ দুই মাস পেছাতে পারে। ইতিপূর্ব ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাসের নতুন দাম কার্যকরের কথা থাকলেও তা এখন এপ্রিল থেকে কার্যকরের কথা ভাবছে সরকার। যদিও এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।

গেল ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান রাজধানীর একটি হোটেলে টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ইতিমধ্যেই মার্চ পর্যন্ত গ্যাসের বর্ধিত দাম পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে আমরা এটি আরও এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছি। একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পর এবিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।’

গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে নিরাপত্তা আমানতের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিল্পপতিদের জন্য বাধ্যতামূলক সিকিউরিটি ডিপোজিট নিয়েও আলোচনা করেছি। মালিকদের তাদের গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে কোনো অতিরিক্ত অর্থ জমা করতে হবে না।’

গত ১৮ জানুয়ারিতে প্রকাশিত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কটি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হঠাৎ করেই ভর্তুকি কমানো এবং রাজস্ব ঘাটতি কাটানোর লক্ষ্যে গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন দামগুলো কার্যকর হওয়ার কথা ছিল আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে।

এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৫.০২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা (১৭৯% বৃদ্ধি) করা হয়েছে। এছাড়াও, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য গ্যাসের দাম ১৬ টাকা (৮৮% বৃদ্ধি) থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। ভারি শিল্পের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ১১.৯৮ টাকা থেকে ৩০ টাকা (১৫০% বৃদ্ধি) হয়েছে।

মাঝারি শিল্পের জন্যও নতুন দাম ১১.৭৮ টাকা থেকে থেকে ৩০ টাকা (১৫৫% বৃদ্ধি) নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ২৬.৬৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০.৫০ টাকা (১৪% বৃদ্ধি) করা হয়েছে।

তবে আবাসিক খাতসহ সার ও চা উৎপাদনের কাজে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড আমাদের কাছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা অর্থ দাবি করবে না। যদি তারা সেই টাকা নেয়, তাহলে প্রতিটি মিল মালিককে অতিরিক্ত ৮-১০ কোটি টাকা জমা দিতে হবে।’

তিনি আরও জানান, ‘গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের একটি বৈঠকে, আমরা একটি ইঙ্গিত পেয়েছি যে বর্ধিত দাম মার্চ পর্যন্ত পেছানো হবে।’ তবে ব্যবসায়ীরা লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাসের (এলএনজি) নতুন কার্গো না আসা পর্যন্ত দাম না বাড়ানোর যুক্তি দেখিয়েছিলেন।

আট মাসের বিরতির পর সরকার এখন যেকোনো সময় গ্যাসের বিশ্ববাজার থেকে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানি পুনরায় শুরু করতে প্রস্তুত।

মোহাম্মদ আলী খোকন আরো বলেন, ‘একই সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতারা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে গ্যাসের শুল্ক কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।’

ফেডারেশন অব চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিনও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির তারিখ এপ্রিল পর্যন্ত পেছানোর অনুরোধ করেছেন এবং মাঝখানের সময়টুকুতে এলএনজি আমদানির জন্য নতুন এলসি খোলার সুযোগের অনুরোধ জানিয়েছেন।

গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জ্বালানি বিভাগ বলেছে, স্পট মার্কেট থেকে বেশি দামে এলএনজি আমদানি করে বর্ধিত গ্যাসের চাহিদা মেটাতে হবে।

বাড়িতে গ্যাসের সংকট এবং শিল্পকারখানায় গ্যাসের নিয়মিত সরবরাহের জন্য ব্যবসায়ীদের বারবার আবেদন করলে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে বলেছিলেন যে, উদ্যোক্তারা নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পেতে চাইলে সরকার বিশ্ববাজার থেকে যে দামে জ্বালানি ক্রয় করে, সেই দাম দিতে হবে।

এদিকে মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ‘সাম্প্রতিক ১৭৯ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধিও শিল্পকারখানাগুলোতে নিয়মিত গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয় না।’

Facebook
Twitter
LinkedIn