বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে গুণী নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামের চলে যাওয়ার ৭ বছর আজ। ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। কালজয়ী বহু চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সিনেমাপ্রেমীদের অন্তরে অমর হয়ে আছেন এই কিংবদন্তি।
‘ওরা ১১ জন’খ্যাত এই পরিচালক ১৯৪১ সালের ২৩শে অক্টোবর বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানার সমষপুর গ্রামে জন্মগস্খহণ করেন। চাষী মা-বাবার জ্যেষ্ঠপুত্র। তার বাবা মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন ভারতের বিহারে টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার। তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন লস্কর বংশের।
চাষীর নাম রেখেছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। তার সঙ্গে রাজনীতি করতেন চাষীর মামা চাষী ইমাম উদ্দিন। একদিন ফজলুল হককে একটা নাম দিতে বলা হলে তিনি চাষী ইমাম উদ্দিনের ‘চাষী’ আর কাজী নজরুল ইসলামের ‘নজরুল ইসলাম’ মিলিয়ে নাম দিয়েছিলেন ‘চাষী নজরুল ইসলাম’।
চাষীর শৈশব কেটেছে তার বাবার চাকরিস্থল জামশেদপুরে। সেখানে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল মুসলিম স্কুলে ফাইভ পর্যন্ত পড়েছিলেন তিনি। তারপর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি পড়েন গোলামুড়ি মাধ্যমিক স্কুলে। এরপর আরডি টাটা হাইস্কুলে এইচএসসি পাস করেছিলেন। ১৯৬১ সালে খালাতো বোনের স্বামী সৈয়দ মোহাম্মদ আওয়ালের হাত ধরে চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। একই বছর ‘আছিয়া’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে খ্যাতিমান পরিচালক ফতেহ লোহানীর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন চাষী।
এর দুই বছর পর ‘দুই দিগন্ত’ চলচ্চিত্রে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার ওবায়েদ-উল-হকের সহকারি হিসেবে কাজ করেছিলেন নন্দিত এই পরিচালক। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’র মধ্য দিয়ে তার পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটেছিল। তবে এজি অফিসের পোস্ট-সর্টার হিসেবে ১৯৬৯ পর্যন্ত চাকরি করেছিলেন।
স্বনামধন্য চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত সেরা চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘ওরা ১১জন’, ‘হাছন রাজা’, ‘সংগ্রাম’, ‘হাঙর নদীর গ্রেনেড’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘দেবদাস’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘সুভা’, ‘শাস্তি’ ইত্যাদি। জীবদ্দশায় তিনি ৩০টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্যামেরার পেছনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। চাষী চারবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৪ সালে একুশে পদক, ১৯৮৬ ও ১৯৯৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, এছাড়াও আন্তর্জাতিক কলাকার পুরস্কার, শের-ই-বাংলা স্মৃতি পুরস্কার, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু স্বর্ণপদক, জহির রায়হান স্বর্ণপদকসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।