আর মাত্র ঘণ্টা খানেক পর ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করবেন। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) ছয় আসামিরই মৃত্যুদণ্ড হবে বলে প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষেরর। মামলায় ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ২৮ জন সাক্ষ্য দেন। রায়কে ঘিরে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির সাংবাদিকদের বলেন, অভিজিৎ হত্যার মামলাতে কোনো ধরনের ত্রুটি নেই। এই হত্যাকাণ্ডে ছয় আসামি জড়িত ছিল তা রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে তুলে ধরেছে। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পুরোপুরি সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে।
তিনি আরো বলেন, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে আসামিদের একেকজনের ভূমিকা একেকরকম। ফারাবীর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করা হয়। মেজর জিয়ার নির্দেশে অভিজিতকে হত্যা করা হয়। মামলাতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬১ ও ১৬৪ ধারায় আসামিদের জবানবন্দি, যুক্তি-তর্ক ও মামলার অন্যান্য আলামত আসামির বিরুদ্ধে গেছে।
মামলার আসামিরা হলো- মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আকরাম হোসেন ওরফে আবির, মো. আরাফাত রহমান ও শফিউর রহমান ফারাবি। এদের মধ্যে মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া ও আকরাম হোসেন ওরফে আবির শুরু থেকেই পলাতক।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, মামলাটিতে শুরু থেকেই অনেক ত্রুটি ছিল। মামলা দায়েরের পর থেকে তদন্ত, অভিযোগপত্র তৈরি, অভিযোগ গঠন ও বিচারিক পর্যায়ে অনেক ত্রুটি খুঁজে পেয়েছি আমরা। এ মামলার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী (আই উইটনেস) নেই। এ ঘটনার কেউ প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য দেননি। কেবল তদন্ত কর্মকর্তা যা শুনেছেন, তাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। ঘটনার সময় তিনি উপস্থিতও ছিলেন না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ফর্মাল সাক্ষী বলা যায় মাত্র। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। আশা করছি আসামিরা খালাস পাবেন।
নথি থেকে জানা যায়, ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ২৭ ফেব্রুয়ারি অভিজিতের বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। ১১ এপ্রিল ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান ছয় আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) গ্রহণ করেন। ১লা আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।