বইমেলার দিনলিপি
অমর একুশে বইমেলার ১১তম দিন শেষ হলো। নতুন বই এসেছে ৯২টি। তবে বইমেলার পরিবেশে বই কেনার সাথে বেমানান বিষয় উঠে আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সুন্দর সাজানো নিয়মের সুশৃঙ্খলতায় যেন কিছুটা ম্লান বলা চলে। প্রসংগ আর না তোলাই ভাল। তবে- শ্রদ্ধেয় প্রকাশক সমীপে এটুকুই বলা, যারা প্রকৃত লেখক। তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের তুলে আনুন পাঠক হৃদয়ে। এমন কাউকে বইমেলার স্টলে লেখকের মর্যাদায় এনে বসানো উচিত নয়। কেননা, টাকা পয়সায় বই ছাপানো যায়। টাকায় লেখক হয়ে পাঠক হৃদয় দখল হয় না। যাকে নিয়ে লোকসমাজের ধুয়ো ধ্বনি বইমেলার পরিবেশের বিসুদ্ধ বাতাস সব ফিকে করে দিয়ে যায় …
আসি গতকালের মূল আলোচনায় –
বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : কলিম শরাফী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরওয়ার মুর্শেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাহমুদ সেলিম এবং গোলাম কুদ্দুছ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রূপা চক্রবর্তী। প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে কলিম শরাফী প্রাতিস্বিক এক নাম। কেবল একজন সংগঠক বা শিল্পীই নন, তিনি ছিলেন প্রগতিশীল সংস্কৃতিচর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বিশ শতকের অখÐ বাংলা, দেশ-বিভাগোত্তর পূর্ববঙ্গ এবং বাংলাদেশের সকলপর্বের সব ধরনের সংকট-উত্তরণে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা সবিশেষ স্মরণযোগ্য। তাঁর যাপিত জীবন ও সংগ্রামের মূলে ছিল গণ-মানবচেতনা, মুক্তবুদ্ধি এবং প্রগতিকামিতা। তিনি ছিলেন মানুষের সামষ্টিক কল্যাণপ্রত্যাশী।
আলোচকবৃন্দ বলেন, আজীবন সংগ্রামী শিল্পী কলিম শরাফী ছিলেন আপসহীন একজন মানুষ। দেশ ও জাতির সংকটে সম্মুখ সারিতে দাঁড়িয়ে তিনি প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেছিলেন। খুব বৈরিতা সত্ত্বেও গণমানুষের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা, মানবতাবাদী সংস্কৃতিবোধ, কল্যাণমুখী, অসাম্প্রদায়িক এবং প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের আকাক্সক্ষা তিনি কখনো ত্যাগ করেননি। সমাজ-সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রেই তিনি তাঁর সৃজনশীল প্রতিভার প্রমাণ রেখেছেন। মানবতাবাদী কলিম শরাফী বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোকেই তাঁর জীবনের আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক রূপা চক্রবর্তী বলেন, বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব কলিম শরাফী তাঁর দীর্ঘ কর্মময় জীবনে অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। তাঁর দ্যুতিময় ব্যক্তিত্ব, অকুতোভয় চিত্ত এবং লড়াকু জীবনাদর্শ আমাদের প্রত্যয়ী করে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সরকার মাসুদ, কথাসাহিত্যিক নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন এবং নাট্যগবেষক মাহফুজা হিলালী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আসলাম সানী, তপন বাগচী, মারুফ রায়হান, জাহিদ মুস্তাফা, স্নিগ্ধা বাউল এবং শাহিদা পারভীন রেখা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সোহরাব হোসেন, তামান্না তিথি এবং ফয়জুল আলম পাপ্পু। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুথি পাঠ করেন লাল মাহমুদ। এছাড়াও সিদ্দিকুর রহমান পারভেজের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র’ দলগত আবৃত্তি পরিবেশন করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল সুরাইয়া পারভীনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং সবুজ শামীম আহসানের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কৃষ্টিবন্ধন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আলম দেওয়ান, আজগর আলীম, পাগলা বাবলু, আজমল শাহ, শিলা দেবী এবং ফারজানা আফরিন ইভা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন দীপক কুমার দাস (তবলা), ইফতেখার হোসেন সোহেল (কী-বোর্ড), মো. শহিদুল ইসলাম (বাঁশি), রনজিৎ কুমার বৈরাগী (দোতারা) এবং মো. হাসান মিয়া (বাংলা ঢোল)। আজ ২৯শে মাঘ ১৪৩০/১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সোমবার। অমর একুশে বইমেলার ১২তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩ টায় এবং চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত। বিকেলের বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : হেনা দাস শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জোবাইদা নাসরীন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ঝর্না রহমান এবং ফওজিয়া মোসলেম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শিরীণ আখতার।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি
সমীর কুমার সরকার,
পরিচালকঃ জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ, বাংলা একাডেমি।
ছবিঃ সৌজন্যে- প্রাণের ব্যাচ-৯৩ মাহফুজুর রহমান’র ওয়াল থেকে