ডেঙ্গু লার্ভার উৎস নিধনে আগামীকাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
আজ নগর ভবনের মেয়র হানিফ অডিটোরিয়ামে ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদারকরণ’ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র একথা জানান।
ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘উৎস নিধন ছাড়া এডিস মশা নির্মূল করা সম্ভব না। আমরা এখন সে উৎস নিধন করব, ঘরে ঘরে যাবো। উৎস নিধন করব।’
ডেঙ্গু মশার প্রজননস্থল সম্পর্কিত তথ্য দিতে ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, ডেঙ্গু মশার প্রজননের ফলে মশার বিস্তৃতি লাভ করেছে।
তিনি এডিসের লার্ভার প্রজননস্থল সম্পর্কে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে তথ্য দিতে ০১৭০৯-৯০০৮৮৮ ও ০২-৯৫৫৬০১৪ নম্বরে ফোন করারও অনুরোধ জানান।
এদিকে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ‘আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এডিস মশা নির্মূল করে ডেঙ্গু সহনীয় পর্যায়ে আনতে’ সিটি কর্পোরেশনের সকল কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন,‘রাজধানীবাসীকে মশামুক্ত রাখতে মন্ত্রণালয় এবং সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার লক্ষ্যেই আজকের সভার আয়োজন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করে একটি সন্তোষজনক জায়গায় পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’
এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বারবার সচেতন করার পরেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। সরকারের কাজ হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা এবং সেই কাজ সরকার প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে। এখন মানুষ যদি সচেতন না হয়ে এডিস মশার প্রজননে ভূমিকা রাখেন, সেই মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবেন। নানা সমস্যায় ভুগবেন আর চিৎকার করে সরকারকে দোষ দিবেন। এটি সমীচীন হবে না। আপনারা নিজে সচেতন না হলে সরকার আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না।’
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সারাবিশ্বেই স্বীকৃত পন্থা হলো সোর্স রিডাকশন তথা উৎস নিধন। এখন প্রত্যেকটা উৎসস্থলে আমরা হানা দেবো। প্রত্যেকটা উৎসস্থল আমরা ধ্বংস করব। সেজন্য আগামীকাল থেকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হচ্ছে। আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে কাউন্সিলররা স্বয়ং সেসব উৎসস্থল পরিদর্শনে যাবেন, মহিলা কাউন্সিলররা যাবেন, আমাদের মশক সুপারভাইজাররা যাবেন, আমাদের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা যাবেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা যাবেন। সেখানে যার যা প্রয়োজন হবে তার প্রয়োজনও আমরা মেটাবো এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তা সমন্বয় করা হবে।’
এ সময় দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু রোগী বেশি শনাক্ত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘ঢাকা মানে আসলে পুরান ঢাকা, আসল ঢাকা। এখানে জনঘনত্ব বেশি। এখানে সরকারি আবাসন বেশি। আমরা এপ্রিল মাস থেকেই বলে আসছি – কলোনিগুলো, আবাসনগুলোর ব্যাপারে যেন সরকারি সংস্থাগুলো ব্যবস্থা নেয়। সে জায়গায় আমরা লক্ষ্য করছি যে, এখানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেই প্রেক্ষিতেই আজকের এই কার্যক্রম। তাই কোথায় বেশি, এটা আসলে সেভাবে দেখার বিষয় না। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি, গতবছর যেভাবে সফল হয়েছিলাম, যাতে করে এই অগাস্টের মধ্যেই তা শুন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে পারি।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদের সঞ্চালনায় সভায় কাউন্সিলররা তাদের মতামত উপস্থাপন করেন।
সূত্র : বাসস