২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ৬:২২
২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ৬:২২

তিন পাত্তি গোল্ডের আড়ালে কোটি টাকা সরিয়েছে ভারতীয় গেমিং প্রতিষ্ঠান

ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মুনফ্রগ ল্যাব তিন পাত্তিসহ অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন গেমসের আড়ালে দেশ থেকে ২০০ কোটি টাকা সরিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশী প্রতিনিধি জামিলুর রশিদসহ ৬ জনকে গ্রেফতারের পর আজ সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানায় র‍্যাব।
কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ২০১৭ সালে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মুনফ্রগ ল্যাবের সাথে যোগাযোগ ও পরিচয় হয় জামিলুর রশিদের। এরপর ২০১৮ সালে দেড় লাখ টাকা বেতনে তিনি মুনফ্রগ ল্যাবের বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি শুরু করেন। মুনফ্রগ ল্যাবের অনলাইন জুয়া অ্যাপ ‘‌তিন পাত্তি গোল্ড’ এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় গেমটিকে আরো ছড়িয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে উল্কা গেমস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি গেমিং ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেন জামিলুর রশিদ।
র‍্যাব জানায়, দেশে গেম ডেভেলপমেন্টের অনুমোদন থাকলেও অনলাইন জুয়া/ক্যাসিনোর অনুমোদন না থাকায় উল্কা গেমস বিভিন্ন ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে আইনি বৈধতা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করে। এভাবেই তিন পাত্তি গোল্ডের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। তিন পাত্তি গোল্ডসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে অন্তত ২০০ কোটি টাকা দেশের বাহিরে পাঠান উল্কা গেমস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জামিলুর রশিদ।
এর আগে, রোববার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ এর অভিযানে রাজধানীর মহাখালী ও উত্তরা এলাকা থেকে জামিলুর রশিদসহ অন্য গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন সায়মন হোসেন (২৯), মো. রিদোয়ান আহমেদ (২৯), মো. রাকিবুল আলম (২৯), মো. মুনতাকিম আহমেদ (৩৭), কায়েস উদ্দিন আহম্মেদ (৩২) নামে  ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ, সিপিইউ, সার্ভার স্টেশন, হার্ডডিস্ক, স্ক্যানার, ডিভিডি ড্রাইভ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেভিট ও ক্রেডিট কার্ড, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও নগদ টাকাসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচারের বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিন পাত্তি গোল্ড মূলত একটি অ্যাপ যা মোবাইলে ডাউনলোড করে খেলা যায়। এই অ্যাপের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ মুনফ্রগ ল্যাবের কাছে রয়েছে। এই অ্যাপে তিন পাত্তি গোল্ড ছাড়াও রাখি, আন্দার বাহার ও পোকার নামে কয়েকটি অনলাইন জুয়ার গেমস রয়েছে। যে কোনো কাজের পাশাপাশি এই গেম খেলতে পারায় তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে এটি জনপ্রিয়তা পায়। প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশনের পর একজন গ্রাহককে গেমস খেলার জন্য কিছু চিপস ফ্রিতে দেয়া হয়। পরে গেমস খেলার জন্য অর্থের বিনিময়ে চিপস কিনতে হয়। মূলত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চিপস কিনে অর্থের লেনদেন করা হতো বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

গেমটিতে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার কোটি চিপস বিক্রি হয় এবং প্রতি কোটি চিপস বিভিন্ন পর্যায়ে ৪৬-৬৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন বট প্লেয়ার/রোবট প্লেয়ারের মাধ্যমে মূল গেইমারদের কৌশলে হারিয়ে আরো চিপস কিনতে উৎসাহিত করা হয়। বাংলাদেশে তিন পাত্তি গোল্ডের চিপস বিক্রির কাজটি পরিচালনা করা হতো ১৪টি অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে। তাদের আবার সাব-ডিস্ট্রিবিউটরও ছিল বলেও জানতে পেরেছে র‍্যাব।
এছাড়াও, প্রাইভেট টেবিল অপশনের মাধ্যমে অন্য প্লেয়ারদের কাছ থেকেও চিপস কেনা যায়। বর্তমানে তিন পাত্তি গোল্ডে প্রায় ৯ লাখ নিয়মিত গেইমার রয়েছে এবং প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ টাকার চিপস বিক্রি হয়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানতে পারে, অর্থের বিনিময়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হয় ভার্চুয়াল চিপস। মূলত বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চিপস বিক্রির টাকা ডিস্ট্রিবিউটরদের থেকে সংগ্রহ করা হত। বর্তমানে উল্কা গেমসের ৪টি অ্যাকাউন্টে প্রায় ৮০ কোটির অধিক টাকা রয়েছে। এছাড়াও গত দুই বছর তারা মুনফ্রগ ল্যাবকে ব্যাংকের মাধ্যমে ২৯ কোটি টাকা দিয়েছে। উল্কা গেমসের মোট ৩৬ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী ছিল। তাদের বেতনসহ অফিস পরিচালনার জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হত।
ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন জামিলুর রশিদ। পরে প্রাচ্যের একটি দেশ থেকে ২০১২ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ছোটকাল থেকেই মোবাইল গেমসের প্রতি আসক্ত হওয়ায় ২০১৫ সাল থেকে মোবাইল গেমস তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। হিরোজ অফ ৭১ ও মুক্তি ক্যাম্প নামক ২০১৭ সালে দুইটি গেমস নির্মাণের জন্য সরকারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন তিনি।
২০১৮ সালে তিনি মুনফ্রগ ল্যাবের গেমস ডিজাইন কনসালটেন্ট ও বাংলাদেশে নিযুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি নেন। পরে ২০১৯ সালে উল্কা গেমস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিইও হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তিনি মুনফ্রগ থেকে মাসিক প্রায় ৪ লাখ টাকা বেতন নিতেন। বিভিন্ন একাউন্টে তার বেশকিছু টাকা, একটি দামি গাড়ি এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে বলে জানায় র‍্যাব।
জামিলুর রশিদসহ গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

Facebook
Twitter
LinkedIn