রাশিয়ার জ্বালানি তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে জার্মানিতে নিজেদের মূল গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করে দেয়া হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছে মস্কো। সোমবার রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক বলেছেন, রাশিয়ার তেল প্রত্যাখ্যান বৈশ্বিক বাজারের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
‘রাশিয়ান তেলের প্রত্যাখ্যান বিশ্ব বাজারের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ঘটাবে। সরবরাহ ব্যাহত হলে ইউরোপীয় বাজারে দ্রুত রাশিয়ার তেলের বিকল্প খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। যার ফলে দাম দ্বিগুণেরও বেশি অর্থাৎ প্রতি ব্যারেল প্রতি ‘‘তিনশো’’ ডলার বেড়ে যাবে। সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আলেক্সান্ডার নোভাক আরো বলেন, ‘পশ্চিমাদের রাশিয়ার তেলের বিকল্প খুঁজে পেতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে এবং সেটি ইউরোপীয় ক্রেতাদের জন্য অনেক ব্যয়বহুলও হবে। আর নিষেধাজ্ঞার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হলে শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর নর্ড স্ট্রিম ২ নামে রাশিয়া-জার্মানির মধ্যে সংযোগকারী একটি নতুন গ্যাস পাইপলাইনের অনুমোদন স্থগিত করেছিল বার্লিন। জার্মানির সেই সিদ্ধান্তের দিকে ইঙ্গিত করে রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে এর প্রতিশোধ হিসেবে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে মস্কো।
পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলা আর পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত একের পর এক নিষেধাজ্ঞা বেড়েই চলছে। কঠোর সব নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত মস্কোর পিছু হটার কোনো লক্ষণ নেই। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা করার খবর সামনে আসে।
আর এরপরই বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। অপরিশোধিত তেলের দাম সোমবার এশিয়ার বাজারে ব্যারেল প্রতি ১৩৯ মার্কিন ডলারে পৌঁছায়। সর্বশেষ ২০০৮ সালে তেলের দাম এই পর্যায়ে উঠেছিল।
বিবিসি বলছে, ইউরোপেীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তার মোট গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং মোট তেলের ৩০ শতাংশ রাশিয়া থেকে পেয়ে থাকে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কোনো কারণে এই তেল-গ্যাসের সরবরাহ ব্যাহত হলে এর কোনো সহজ বিকল্প নেই।
এদিকে, রাশিয়ার তেলের ওপর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা আরোপে মিত্রদের নিয়ে উপায় খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সোমবার এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাস এবং ৩০ শতাংশ তেল পায় রাশিয়া থেকে।ইউক্রেনে রুশ অভিযান ও নিষেধাজ্ঞার জেরে বিশ্ববাজারে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম।
সোমবার লেনদেন শুরু হতেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম এক লাফে প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এই সময়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১৩৯ ডলার পৌঁছায়।