২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ১১:৪৯
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ১১:৪৯

দুঃসময় আগে আসেনি কখনো। পর্যাপ্ত পশু আনা হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাটে। নেই শুধু ক্রেতা।

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। কোরবানি উপলক্ষে সারা দেশের মতো রাজধানীতেও বসেছে পশুর হাট। তবে নেই উৎসব। বেচা-বিক্রিতে যেন ভাটা পড়েছে। এমন দুঃসময় আগে আসেনি কখনো। পর্যাপ্ত পশু আনা হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাটে। নেই শুধু ক্রেতা। প্রতিবছর কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করলেও এ বছর উল্টো চিত্র।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে এ বছর পশুর হাটের সংখ্যা কমেছে। রাজধানীতে দু’টি স্থায়ী গরুর হাটের পাশাপাশি ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। ঈদের বাকি আর মাত্র দুইদিন। এই সময়েও জমেনি কোরবানির পশুর হাট। গাবতলী পশুর হাটে ক্রেতার উপস্থিতি বাড়লেও অন্যান্য হাটগুলোই অনেকটা ক্রেতাশূন্য। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু, ছাগল নিয়ে আসা বিক্রেতারা চিন্তিত। করোনার কারণে ক্রেতারা হাটে আসছে না। হাটে আনা এসব গরু বিক্রি করতে না পারলে ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, বাঁশের খুঁটির সঙ্গে সারি সারি বাঁধা আছে একের পর এক গরু। মাথার উপরে টানানো আছে শামিয়ানা। গরুর মালিক গামছা দিয়ে মুছে দিচ্ছেন তাদের শরীর। কেউ আবার খাবার খাওয়াতে ব্যস্ত। গরুর শরীরে বসা মাছি তাড়াচ্ছেন কেউ কেউ। শেষ সময়েও পরম যত্নে পালন-পালন করছেন তারা।
ভাটারা সাইদনগর পশুর হাটে মানিকগঞ্জ থেকে ৭টি গরু নিয়ে এসেছেন সুমন ভূঁইয়া। কথা হলে তিনি জানান, হাট শুরুর ২ দিন আগে এখানে গরু নিয়ে এসেছি। ৫ দিন এই হাট চলবে। এর মধ্যে ৩ দিন শেষ হয়ে গেছে। একটি গরুও বিক্রি হয়নি। ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। মাঝে মধ্যে দু’একজন আসলেও দাম জিজ্ঞেস করে চলে যায়। দরদাম কিছুই বলে না। একটা বছর অনেক কষ্ট করে এই গরুগুলো কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছিলাম। ঢাকায় আনতেও বহু টাকা খরচ হয়েছে। গরু বিক্রি করতে না পারলে আর্থিকভাবে বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। আরেক ব্যবসায়ী রতন শীল জানান, হাটের সংখ্যা কম হওয়াতে অনেক গরু উঠছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু আসছে। হাটে এখনো গরু কেনার কাষ্টমার নাই। দুঃশ্চিন্তা রয়েছে বিক্রি নিয়ে। এছাড়া ক্রেতারা যে দাম বলছে, তাতে বেচার মতো দাম বলে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসে হাটে ক্রেতা এখনো আসছে না। অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে কোরবানির পশু কিনছেন। ঢাকার আশপাশের খামারে গরু বেচাকেনা চলছে। এতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসার গরুর মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। এছাড়া করোনার এই দুঃসময়ে অনেকের হাতে টাকা পয়সা নেই, এতে কোরাবানি দেয়া লোকের সংখ্যাও কমবে। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ক্রেতা বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, প্রতিবছর শেষ সময়ে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি থাকে। তখন যার যেটা পছন্দ হয়, নিয়ে যায়। দামাদামিও কম করে। আর দূরের ব্যবসায়ীরাও হাটের শেষ সময়ের কারণে একটু কমদামে বিক্রি করে চলে যায়।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম পশুর হাট পরিদর্শন করেন। এ সময় ব্যবসায়ীদের খোঁজ খবর নেন। পশুর হাটে ক্রেতা, বিক্রেতা, ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনাও দেন তিনি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) এলাকার পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি এবং অন্যান্য শর্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটি আহ্বায়ক ও ১৯নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এখনো পশুর হাট জমে ওঠেনি। তবে আমার বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ঈদের আগের ২ দিন ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়বে। এতে ক্রয়-বিক্রয় বাড়বে। আশা করি ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটবে। এছাড়া পশুর হাটে করোনার সংক্রমণ রোধ করতে আমাদের মনিটরিং সেল কাজ করছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে এ বছর ২৬টি পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। পরে হাটের সংখ্যা কমিয়ে ১৭টি করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে ছয়টি এবং দক্ষিণে ১১টি হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয় গত সোমবার থেকে। উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় হাটগুলো হচ্ছে- গাবতলী, উত্তরা ১৭নম্বর সেক্টরে বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ ভবন পর্যন্ত খালি জায়গা, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদনগর) পশুর হাট এবং উত্তরখান মৈনারটেক হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা। ঢাকা দক্ষিণের হাটের স্থানগুলো হলো- শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজ মাঠ, পোস্তগালা শ্মশানঘাট, কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠসংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ, আফতাবনগর ব্লক-ই, এফ, জি’র সেকশন ১ ও ২ নম্বর এলাকা, মেরাদিয়া বাজার, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠ, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আমুলিয়া মডেল টাউনের খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।

Facebook
Twitter
LinkedIn