২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ১১:৫২
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ১১:৫২

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে ৬.৯ ডিগ্রি

সকালে সূর্যের দেখা মিললেও এখনও কনকনে শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা গতকাল থেকে কমেছে শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সোমবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুদিন ধরে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের এ জনপদে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দুদিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ায় এ জেলায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তাপমাত্রা ৯.৬, ৯.৫ ও ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল। সোমবার তাপমাত্রা কমে ৭ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রি কমে ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।

এর আগে, এই জেলায় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে স্মরণকালের সবচেয়ে কম ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। 

সকাল থেকেই দেখা মিলেছে সূর্যের। তবে অনুভূত হচ্ছে প্রচন্ড শীত। সুর্যের মুখ দেখা গেলেও মিলছে না রোদের উষ্ণতা। শীত দুর্ভোগে পড়েছে নানান শ্রমজীবী-কর্মজীবী গরিব অসহায় মানুষ। পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে ছোটখাটো যানবাহন ভ্যান চালক মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে। তীব্র শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকে। তবে জীবিকার তাগিদে কাউকে নদীতে পাথর তুলতে, কাউকে চা-বাগানে আবার কাউকে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে। শীতের দুর্ভোগ বেড়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। এসব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার যে ত্রাণ দিয়েছে তা একেবারে অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

চা শ্রমিক জামাল, জাহেরুল ও নাসির জানান, সকালে বরফের মতো ঠান্ডা। চা বাগানে কাজ করতে গেলে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। কিন্তু জীবিকার তাগিদে কাজে বের হতে হয় আমাদের।

পাথর শ্রমিক ইমরান, আরশাদ আলী ও আবু তাহের জানান, ঠান্ডায় নদীর পানি বরফের মতো মনে হয়। তারপরেও আমাদের পাথরই জীবিকা। তাই কাজে বেড়িয়েছি। কয়েকদিন ধরে নদীর ঠান্ডা পানিতে কাজ করে জ্বর-সর্দিতে ভুগলাম। ক্ষুধার্ত পেটতো ঠান্ডা বুঝে না। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে সকালেই পাথর তোলার সরঞ্জাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছি। একই কথা জানান কয়েকজন দিনমজুর ও নারী পাথর শ্রমিকরা।

নারী পাথর শ্রমিকরা জানান, তীব্র শীতের কারণে তাদেরও কাজে যেতে কষ্ট হচ্ছে। ঘর সংসার সামলে জীবিকার তাগিদে কাজে যেতে হচ্ছে। শীতের কারণে কাজে যেতে দেরি হলে মহাজনরা অনেক সময় কাজে নিতে চান না।

বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরাও। তারা জানান, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতের কারণে ক্ষেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। দেরিতে মাঠে যেতে হচ্ছে। এখন বোরো মৌসুম। ভুট্টা, মরিচ, গমসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ বপন করতে হচ্ছে। শীতের কারণে দেরি করে জমিতে গিয়ে কাজ এগুচ্ছে না বলেও জানান তারা।

শীতের কারণে পড়ালেখা স্থবির হয়ে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও। সকালে স্কুল শিক্ষার্থী তানিয়া, কাজল ও নাইমা খাতুন জানায়, কনকনে শীত। রাতেও শীতের কারণে পড়তে পারি না। রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। সকালে কুয়াশা আর বাতাসের কারণে প্রাইভেট পড়তে ও স্কুলে যেতে কষ্ট হচ্ছে।  

এদিকে শীতে প্রকোপে বেড়েছে নানান শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।

চিকিৎসকরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, জেলায় গতকালের চেয়ে তাপমাত্রা কমে আজও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। সকাল ৯টায় ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ভোর ৬টায় রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সোমবার রেকর্ড করা হয়েছিল ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। আজ কুয়াশা না থাকায় তাপমাত্রা কমেছে ও জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো.জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে এ পর্যন্ত চল্লিশ হাজার শীত বিতরণ করা হয়েছে। এ জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn