বাংলাদেশে ১ অক্টোবর থেকে অধিকাংশ বিদেশী টিভি চ্যানেল প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যাবার পর এখনো সমস্যাটির সমাধান হয়নি। তবে ভারতীয় চ্যানেলগুলো পুনরায় সম্প্রচারে ফিরতে শুরু করেছে। সারা দেশে ক্যাবল অপারেটর গ্রাহকরা এখন ‘জি বাংলা’ ও ‘স্টার জলসা’ দেখতে পাচ্ছেন। ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) খবরটি নিশ্চিত করেছে।
কোয়াব সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ এ সম্পর্কে বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর গত শুক্রবার রাত থেকে ‘জি বাংলা’র সম্প্রচার শুরু হয়েছে। পরদিন শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ‘জি টিভি’ ও ‘স্টার জলসা’র সম্প্রচার।
চলতি মাসের শুরুতে বিদেশী চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেয়ার সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিদেশী চ্যানেল বাংলাদেশে দেখাতে হলে তা বিদেশী বিজ্ঞাপনমুক্তভাবে দেখাতে হবে, কিন্তু স্থানীয় কেবল টিভি পরিবেশক ও অপারেটররা এর বিরোধিতা করে তখন বলেছিলেন, তাদের পক্ষে এটা করা প্রায় অসম্ভব।
তবে এখন কিভাবে এটা সম্ভব হলো জানতে চাইলে এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘জি বাংলা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ‘ক্লিন ফিড’ পেয়ে পরিবেশকরা পরীক্ষামূলকভাবে সম্প্রচার শুরু করেছেন। যদি ফলাফল আমাদের পক্ষে আসে তবে বাকী চ্যানেলগুলোও পর্যায়ক্রমে সম্প্রচারে ফিরবে।’ তবে চ্যানেগুলো থেকে কিভাবে বিদেশী বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিচ্ছে সে বিষয়ে আনোয়ার পারভেজ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বাংলাদেশে জি বাংলাসহ জি নেটওয়ার্কের সব চ্যানেলের পরিবেশক মিডিয়া কেয়ার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমীত রেজার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
বাংলাদেশে ডিজিটাল কেবল টিভি সেবা দিয়ে থাকে জাদু ডিজিটাল। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কুণাল দেশমুখিয়া বলছিলেন, ব্রডকাস্টাররা যদি বাংলাদেশের জন্য একটা ক্লিন ফিড করে দেয় তাহলে সব চ্যানেলই প্রচার সম্ভব। কিন্তু ব্রডকাস্টাররা এ বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী নন। তারা বলেছে বাংলাদেশের সাবস্ক্রিপশন রেভিনিউ এত কম যে তাদের জন্য স্যাটেলাইট, ব্যান্ডউইডথ, ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া নিয়ে এটা করা প্রায় অসম্ভব। তবে এখন ভিন্ন উপায়ে এটা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। কারণ গ্রাহকদের ধরে রাখতে হবে, আবার সরকারের নিয়মও মেনে ব্যবসা করতে হবে। আশাকরি আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যে এর যুক্তিক একটা সমাধান হবে।
তবে এখন পর্যন্ত যে চ্যানেলগুলো প্রচারে ফিরে আসছে বলে শোনা যাচ্ছে তার প্রায় সবই ভারতীয়। এ সম্পর্কে কোয়াবের সাবেক মহাসচিব নিজাম উদ্দিন মাসুদ জানান, বাংলাদেশের দর্শক ভারতীয় চ্যানের বেশি দেখতে চান। তাই ব্যবসায়িক দিক বিবেচনায় ভারতীয় চ্যানেলগুলো বেশি আলোচনায় থাকে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ভারতের কালারস গ্রুপের (কালারস বাংলা) চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে আসার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।
জি বাংলা ও স্টার জলসা ছাড়াও বর্তমানে সম্প্রচারে থাকা বিদেশি চ্যানেলগুলোর মধ্যে রয়েছে-বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা এইচডি, ডিডাব্লিউ, কেবিএস ওয়ার্ল্ড, এআরআই র্যাংগ টিভি, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড, সিজিটিএন, রাশিয়া টুডে, ফ্রান্স ২৪, লোটাস, ট্রাভেল এক্সপি এইচডি, আল কুরান, আল সুন্না, ট্রাভেল এক্সপি ও দূরদর্শন।
২০০৬ সালের ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনের ১৯(১৩) ধারায় বলা হয়েছে, বিদেশী কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বা সঞ্চালন করা যাবে না। বাংলাদেশের কেবল টিভি সম্প্রচারের বর্তমান কাঠামো সম্পর্কে যারা অবহিত তারা বলেন, এই আইনটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য এবং সমস্যা মোকাবিলার জন্য ডিজিটাল টিভি সম্প্রচারের বর্তমান যে নীতিমালা রয়েছে তাকে যুগোপযোগী করতে হবে।