মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীকে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ‘শূন্য র্বজ্য ও শূন্য র্কাবন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন, যা একটি নতুন পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে তিনটি শূন্য ভিত্তিক উনার র্দীঘ দিনের স্বপ্নের উপস্থাপন। আমাদের অন্তর্বতী সরকার প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ বিশ্ববাসীর কাছেও সাদরে গৃহিত হয়েছে। যা খুব গভীর, ও সুক্ষ্ম উপস্থাপনা।
১১ নভেম্বর , ২০২৪ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ২৯-এর ওর্য়াল্ড লিডার্স ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনের ভাষণে ড.ইউনূস বলেন: “ টিকে থাকার জন্য আমাদের আরেকটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। একটি ভিন্ন জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে আরেকটি প্রতি-সংস্কৃতি গড়তে হবে। এর ভিত্তি হবে শূণ্য বর্জ্য। এ সংস্কৃতি নৈমিত্তিক ভোগ সীমিত করবে, কোনো বর্জ্য অবশিষ্ট রাখবে না।” ড. ইউনূস আরও বলেন-“ এই জীবনযাত্রা হবে শূণ্য কার্বনের ওপর ভিত্তি করে, যেখানে কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি থাকবে না। থাকবে শুধু নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এতে এমন একটি অর্থনীতি গড়ে উঠবে যার ভিত্তি হবে- সামাজিক ব্যবসার মতো ব্যক্তিগত পর্যায়ে শূণ্য মুনাফা। সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা একটি অলাভজনক ব্যবসার মতো। এর বিশেষ পরিবেশ মানবজাতির সুরক্ষায় নিবেদিত।” তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের প্রেক্ষিতে বলেন; “ সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবন কেবল সুরক্ষিতই হবে না, গুণগতভাবে উন্নতও হবে। এটি যুবকদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সহজতর করবে। উদ্যোক্তা হওয়ার নতুন শিক্ষার মাধ্যমে তরুণরা প্রস্তুত হবে। চাকরিপ্রার্থী তৈরির শিক্ষার স্থলে উদ্যোক্তা-কেন্দ্রিক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। পরিবেশের সুরক্ষায় তাই একটি নতুন জীবনধারা প্রয়োজন। নতুন জীবনধারা চাপিয়ে দেয়া হবে না। তরুণরা সেই জীবনধারাকে পছন্দ হিসেবে বেছে নেবে। প্রতিটি যুবক তিন শূণ্য ভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে। তা হলো- শূণ্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শুধু সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে শূণ্য সম্পদ পুঞ্জীভবন ও নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে শূণ্য বেকারত্ব।” ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পদক বিজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনূস এই প্রেক্ষাপটে সুন্দর একটি থিউরী পেশ করেন, “ প্রত্যেক মানুষ তিন শূণ্য ভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠবেন এবং সারাজীবন তিন শূণ্য ভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে থাকবেন। এটি নতুন সভ্যতা রচনা করবে। এটি সম্ভব। আর সেজন্য আমাদের যা করতে হবে; আামাদের এই গ্রহ এবং এতে বসবাসরত সকলের নিরাপত্তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারা গ্রহণ করতে হবে। বাদবাকি কাজ আজকের তরুণ প্রজন্মই করবে। ওরা ওদের গ্রহকে ভালোবাসে। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক ও যুব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আত্ম-সুরক্ষায় একটি সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে। ‘‘
অধিবেশনের ভাষণের শেষপ্রান্তে তিনি বলেন: “আমি আশা করি আপনারা এই স্বপ্ন দেখায় আমার সাথে যোগ দেবেন। আমরা যদি একসঙ্গে স্বপ্ন দেখি তবে তা সম্ভব হবে। বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে এবং সে কারণে মানব সভ্যতা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মানুষ আত্ম-বিধ্বংসী মূল্যবোধের প্রচার করে যাচ্ছে। এই গ্রহের মানব বাসিন্দারা এই গ্রহের ধ্বংসের কারণ। মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করছে এবং তারা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছে যা পরিবেশের প্রতিকূলে কাজ করে। তারা এটিকে একটি অর্থনৈতিক কাঠামো দিয়ে ন্যায্যতা দেয়ার প্রয়াস পাচ্ছে। আর এই অর্থনৈতিক কাঠামো সৌরজগতের মতই প্রাকৃতিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই অর্থনৈতিক কাঠামো সীমাহীন ভোগের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যতো বেশি ভোগ ততো বেশি প্রবৃদ্ধি। আর যতো বেশি প্রবৃদ্ধি ততো বেশি মুনাফা। মুনাফা সর্বাধিকীকরণকে সিস্টেমের সবকিছুকে আমাদের ইচ্ছামাফিক কাজ করানোর কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।”
সূত্র: বাসস