২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সন্ধ্যা ৬:৫২
২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সন্ধ্যা ৬:৫২

নিত্যপণ্যের দামে বেসামাল সাধারণ মানুষ

শহরের ঘোনারপাড়ার বাসিন্দা রেজাউল করিম চাকরি করেন একটি আবাসিক হোটেলের রিসিপসনিস্ট হিসাবে। তিনি জানান, বর্তমানে সব কিছুর দাম বাড়ছে কিন্তু মানুষের কোন দাম বাড়ছে না। আমার বেতন ১১ হাজার টাকা, বাড়িতে স্ত্রী সহ ৩ ছেলে মেয়ে আছে। আগে কোন প্রকার সংসার চালাতে পারলেও বর্তমানে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। বাজারে গেলে কোন কিছুই ভালমত কিনতে পারিনা। তার উপর বর্তমানে পর্যটক নেই সেই কারণে বেতন পেতেও মাসের অর্ধেক সময় পার হয়ে যায়। ফলে অনেকটা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছি। কাউকে দেখাতে পারছি না বলতেও পারছি না।

গত কয়েক মাসের ব্যবধানে চাল, তেল, সবজি, গ্যাস সহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। একই সাথে বিদ্যূৎ বিল থেকে শুরু করে সব কিছু বেড়েছে। কিন্তু আমাদের দাম বাড়েনি। আগে ১২ হাজার টাকা বেতন পেলেও বর্তমানে কমিয়ে ১১ হাজার টাকা এনেছে কর্তৃপক্ষ।টেকপাড়ার বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, আমি একটি বেসরকারী প্রতিষ্টানে চাকরি করি। সত্যি কথা বলতে অনেক সময় ছেলে মেয়ের সামনেই পড়িনা। কারণ তাদের আবদার রক্ষা করতে পারি না তাই। আমার ২ মেয়ে। এখনো এক মেয়ের স্কুলের বই কিনে দিতে পারিনি।যা বেতন পাই তা সব বাজার খরচের পেছনে চলে যায়। তার উপর গাড়ি ভাড়া, চিকিৎসাতো আছেই। মাঝে মাঝে জীবনের প্রতি অনীহা চলে আসে। কিন্তু ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার জীবন সংগ্রামে নেমে পড়ি। একটা ভাল মাছ খেতে পারছি না কয়েক মাস হবে। প্রায় সময় ভালো খেতে সর্বোচ্চ ব্রয়লার মুরগী দিয়ে ভাত খাই। এক কথায় মধ্যবিত্বদেরর সংসার চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
রুমালিয়ারছড়া এলাকার টমটম চালক নজির হোসেন বলেন, আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। দৈনিক ৬০০/৭০০ টাকা আয় করতাম।সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরার সময় চাল, তেল, মাছ, তরকারি কিনতেই টাকা সংকুলান হতো না। পরে কিস্তি নিয়ে একটি টমটম কিনেছি এখন রাস্তা ঘাটের কারণে রাস্তায় ভাড়াও কমে গেছে। তবুও হাজার বারশ টাকা আয় হয়। তবে গ্যারেজ ভাড়া সহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে সংসার চালাতে বেশ কষ্ট হয়। তিনি অভিমান করে বলেন, এদেশে অবৈধ ইনকামকারী ছাড়া কেউ ভাল নেই। সৎ পথে থেকে খাওয়া দাওয়ার বাইরে কিছু করাই অসম্ভব। যাদের অবৈধ আয় আছে তারাই একমাত্র ভাল আছে। তাদের বাহারী খাবার এবং রকমারি পোষাকের কাছে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেতেই পারে না।তিনি বলেন, সরকারের উচিত মধ্যবিত্বদের দিকে নজর দেওয়া। এক কেজি চাল যদি ৬০ টাকায় কিনতে হয়, এককেজি তেল ১৭০ টাকা, কোন তরকারি ৫০ টাকার নীচে নেই, নি¤œমানের মাছও ৩০০ টাকা কেজি তাহলে কিভাবে আমাদের সংসার চলে। কেউকি খবর রেখেছে?এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এড. মোহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, আমার বাসা কালুর দোকান, সকালে বা সন্ধ্যায় কিছুক্ষণ রাস্তার পাশে দাড়ালে অন্তত ২০ জন ভিক্ষুক আসে সাহায্য চাওয়ার জন্য। এই অবস্থা থেকে বুঝা যায় মানুষ কি অবস্থায় আছে।আলহামদুলিল্লাহ আমরা কোন মতে খেয়ে পড়ে বেচে আছি। কিন্তু আমার দেখা অনেক প্রতিবেশী ঠিকমত অসুস্থ ছেলেমেয়েদের ডাক্তারও দেখাতে পারছে না টাকার অভাবে। আমার মতে অন্তুত চাল, ডাল, তেল,গ্যাস সহ কিছু পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা দরকার।খুরুশকুল ইউপির মেম্বার জানে আলম, মোহাম্মদ এহসান উল্লাহ সহ অনেকে বলেন, এক সময় গ্রামের মানুষের খাবার দাবার নিয়ে সমস্যা ছিল না। ক্ষেত খামার করে কোন মতে খাবার যোগাড় হয়ে যেত। কিন্তু এখন গ্রামের মানুষেরও দৈনিক খাবার নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। আগের মত গ্রামের মানুষ আর ভাল নেই। তাই এসব বিষয়ে সরকারের চিন্তা করা দরকার।

Facebook
Twitter
LinkedIn