২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৫:৫৯
২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৫:৫৯

নিত্য পন্যসামগ্রী বনাম বাজার সিন্ডিকেট

বাজার। গরম। মানুষের মাথা আরও বেশি গরম। দিশেহারা দেশের মানুষ। নাভিশ্বাস উঠে গেছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে খেতে। পেটের তাড়নায় তো বাজারে যেতে হয়। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের অবস্থা বেশ শোচনীয়। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমল থেকেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এক অদৃশ্য সিন্ডিকেট। এখনও বিরাজ করছে ভোগ্যপণ্যে। প্রতিটি ব্যবসাকেন্দ্রে। প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রীর দাম ক্রয়ের সাধ্যে নেই মানুষের। এক কথায় বাজার ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা! গত সরকারের মদদ পুষ্ট এক শ্রেণীর সিন্ডিকেট এখনও পুরো বাজার ব্যবস্থা কব্জা করে রেখেছে। অন্তবর্তী সরকারও চাপে আছে। এই সুযোগে সিন্ডিকেটের লেজ ধরে বসে আছে খারাপ কিছু বাণিজ্যিক চক্র। গোপনে আঁতাত ও চক্রান্ত করছে। অহেতুক নিত্য পণ্যের দাম বাড়ানোর তালে থাকে এরা। এদের এই হীন চক্রান্ত তো অন্তবর্তী সরকারকে বিপদে ফেলছে না, তার চারগুণ বিপদে ফেলছে বাজার করতে আসা ক্রেতাকে। বিগত প্রায় একবছর ধরেই ডিমের দাম আকাশ ছোঁয়া। এখনও হালি প্রতি ৬০ টাকা! কতটা অমানবিকতা প্রদর্শন করছে এই ডিমের সিন্ডিকেটারেরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই এখন বলছে ‘পানির দামে ১ টা ডিম!’ মানুষ মজা করে বলছে। কেননা একটা ছোট পানির বোতলও এই দেশে ১৫ টি টাকা? আলুর দামও কেজি প্রতি ৬০ টাকা। পেয়াজ ১২০ টাকা। আর কাচা লংকার ঝাল? ৩৪০ টাকা। এই মরিচের দাম গত রোজা মাস থেকেই এখনও এত ঝাল। আমরা হাত দিতে পারছি না। চাল, ডাল, চিনি, আটা, ময়দাসহ অন্যান্য প্রধান খাবারেও থেমে নেই- বাজার নিয়ন্ত্রণকারী অসাধু গ্রুপের কারসাজি! অথচ দেখুন- ১৩ সেপ্টেম্বর ১২ হাজার টন আলু আসল ভারত থেকে। ডিম আসল, পেয়াজ আসল, কাচামরিচ আসল। সব কিন্তু আমরা যেই চারগুণ দামে ক্রয় করে থাকি। সেই তুলনায় অনেকাংশে কমে আমদানী হচ্ছে। ইচ্ছে করলে তো দাম সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়। প্রশ্ন হচ্ছে- তবে কেন দাম কমছে-ই না। কেন কমানো হচ্ছে না। কাদের ইশারায় চলছে এই বাজার ভেলকী ? আগে বারো মাস যেটা ছিল, দেশের জনগণের বিরুদ্ধে । এখন সেটা যুক্ত হয়েছে এই অন্তবর্তী সরকারের সাথে। এবং একযোগে চলছেই ! বাজার করতে গিয়ে দেশ জনতার পিঠ ঠেকেছে অক্ষমতার দেয়ালে। এ যেন জনগণকে ঘায়েল করে, সরকারকে কোনঠাসা করা? প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। ঢিমেতালে বাজার মনিটরিং দিয়ে হবে না। মোটা দাগে এক কথায় – ভেঙে দিতে হবে দুষ্টুচক্রের আসল আস্তানা! ভেঙে দিতে হবে সিন্ডিকেটের কালো হাত! ডিম আসে ভারত থেকে। দাম সাড়ে ৬-৭ টাকা। দেশে এসে সিন্ডিকেটের কবলে পরে ডিমের দাম হয়ে যায় ১৫ টাকা! আমদানী মূল্য আর খুচরা মূল্যের পুরো একটা লেজেগোবরে অবস্থা! এইতো ঐদিন ২ লাখ ৩১ হাজার ডিম আসছে। আরও আসবে ৩ কোটি ডিম! অবিশ্বাস্য! এত পণ্য শুধু আসছেই। তবু পণ্যের দাম সহনীয় হয়নি কোনকালে…..বাণিজ্য সচিব বলে দিয়েছেন-নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে আমদানীতে কোন প্রকার বাধা নেই। এর রেষ থেকেই ভারত থেকেই দুই কিস্তিতে পেয়াজ এসেছে ১৯৮ টন। সর্বশেষ কাচামরিচ আমদানী হয়েছে ভারত থেকে ৯ দিনে ৬২০ টন। তবু দেখুন- দামের হিসেবে সব পণ্যকে ছাড়িয়ে কাঁচামরিচ উঠে গেল দামের তালিকায় সবচেয়ে উর্দ্ধে! একদিনে দাম কাঁচামরিচ ১০ টাকা কমে। এরপর হুট করে আবার হয়ে যায় ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা! এ এক মগের মুল্লুকের বাজারে আনাগোনা করছে জাতি?
ছাত্রদের নিয়ে বাজার মনিটরিংয়েও ফায়দা আসেনি। আসবে কোথা থেকে ? বাজারের বিক্রেতা যদি একটা পন্য ১০ টাকা দিয়ে কিনে আনে। তাকে তো সেটা ১৩ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করতে হয়। তারা যেখান থেকে ক্রেতা সাধারণের জন্য ভোগ্যপণ্য সংগ্রহ করছে, সেখানেই ঘাপলা? এই অন্ধকারেই সবচেয়ে বেশি আলো প্রয়োজন। তবেই জিনিসের দাম কমবে। অথচ ঐ জিনিসটা তো আমদানী হচ্ছে মাত্র ৫ থেকে ৬ টাকায়! তো বাজারের ঔ বিক্রেতার কাছে দামের হাঁক উঠিয়ে বেশি দামে কে বা কারা পণ্যটি বিক্রি করছে? এর পেছনের গডফাদার কারা? কাদের ইশারায় চলছে এই সিন্ডিকেড বাণিজ্য? সরকারকে আসল জায়গায় হাত দিতে হবে। কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। এক কথায় নজরদারি বাড়ানো দরকার। বড় বড় পণ্য আমদানী কারক কর্পোরেট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানদের নিয়ে বসতে হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেয়া হোক। সামরিক দেশ্রপ্রেমীরা এগিয়ে আসলে হয়ত বাজার মনিটরিং কমিটির কাজ আরও সহজ হবে। বাজার করতে এসে মানুষকে রোজ সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে দেখাতে হবে না অসহায় মুখবয়….। জনগণ দ্রব্যমূল্যের এই আগুন খেলা থেকে শুধু মুক্তি চায়। চায় বাজারে এসে- হাফ ছেড়ে বাঁচতে।

মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি

ছবি : নেট থেকে

Facebook
Twitter
LinkedIn