পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল (অব.) পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন। বিরল রোগ অ্যামিলোইডোসিসের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মারা গেছেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
পারভেজ মোশাররফের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে রোববার (৫ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে তার মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে পরিবার।
জানা গেছে, বিরল রোগ অ্যামিলোইডোসিসে আক্রান্ত ছিলেন মোশাররফ। এই রোগের রোগীদের দেহে অ্যামিলোইড নামের এক প্রকার প্রোটিন অস্বাভাবিক মাত্রায় তৈরি হতে থাকে।
সীমিত মাত্রার অ্যামিলোইড মানবদেহের জন্য তেমন ক্ষতিকারক নয়, তবে মানবদেহে অস্বাভাবিকভাবে এ প্রোটিন বাড়তে থাকলে দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের কোষ ও টিস্যুতে মরিচার মতো এটি জমতে থাকে এবং তার ফলে একসময় কার্যকারিতা হারাতে থাকে এসব প্রত্যঙ্গ।
শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গত মে মাসের মাঝামাঝি দুবাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মোশাররফ। ভর্তির তিন সপ্তাহের মধ্যেই অসুস্থতা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল তার।
চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, যকৃত, কিডনিসহ অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে গেছে মোশররফের এবং বর্তমানে যে শারীরিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে তিনি যাচ্ছেন, তা থেকে আর সুস্থ হয়ে তার জন্য অসম্ভব। পরিবারের সদস্যরাও তার সুস্থতার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুতে আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তার বিদেহী আত্মাকে জান্নাতবাসী করুন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের মানসিক শক্তি দিন।’
পারভেজ মোশাররফ ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের পর তার পরিবার পাকিস্তানে পাড়ি জমায়। পারভেজ মোশাররফ করাচির সেন্ট প্যাট্রিক হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও করাচির ফোরম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন ও ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনড কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। পারভেজ মোশাররফ ১৯৯৮ সালে জেনারেল পদে উন্নীত হন ও পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান।
১৯৯৯ সালে রক্তাক্ত এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের ক্ষমতা দখল করেন তিনি; তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে দেশের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন ২০০১ সালে।
২০০৮ সালে অভিশংসন এড়াতে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অব্যাহতি নেন মোশাররফ। তারপর দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান।
তারপর গত ছয় বছর ধরে তিনি সপরিবারে দুবাইয়ে বসবাস করছেন বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডন।
পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালে নিহত হয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, এ ঘটনায় মোশাররফের হাত ছিল এবং তার নির্দেশেই গুপ্তহত্যার শিকার হন বেনজির।
২০১৩ সালে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডও ঘোষণা করেছিল পাকিস্তানের একটি আদালত। পরে অবশ্য সেই দণ্ড প্রত্যাহার করা হয়।