সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে (পিপিপি) মাতারবাড়ি-মদুনাঘাট ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের উদ্যোগ ভণ্ডুল হয়ে গেছে। বলা হয়েছিল, ‘মাতারবাড়ি-বাঁশখালী-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ’ প্রকল্পটি পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু এই নির্মাণের জন্য বেসরকারি কোনো উদ্যোক্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে এই সিদ্ধান্ত বাতিল হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আজকের বৈঠকে বাতিলের এ প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হতে পারে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকায় নির্মাণাধীন এসএস পাওয়ার লিমিটেড বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিতব্য বিদ্যুৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ইভাকুয়েশনের জন্য পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) হাতে নেয়। এর আওতায় ‘কনস্ট্রাকশন অব মাতারবাড়ি-বাঁশখালী-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মান’ শীর্ষক প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২০ সালে ১৫ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী) নীতিগত অনুমোদন দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ) প্রকল্পটি পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয়।
জানা গেছে, অনুমোদনের সময় উল্লেখ করা হয় বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পাঠানো এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে বলা হয় ছয় মাস অর্থাৎ ২০২০ সালের মে মাসের মধ্যে প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু করা সম্ভব না হলে বিকল্প অর্থায়নের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পিপিপি-জিটুজি পদ্ধতি থেকে প্রকল্পটি ফেরত আনতে পারবে। এখানে আরো বলা হয়, ওই সময়ের মধ্যে জিএস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোরিয়া, প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু করতে পারেনি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৮ মে তারিখে পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পিজিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২০ সালের মে মাসের মধ্যে প্রকল্পটির মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। ফলে নির্মাণাধীন এসএস পাওয়ার লিমিটেড-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওয়ার ইভাকুয়েশনের জন্য জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ‘মাতারবাড়ি-মদুনাঘাট-৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন’ শীর্ষক সঞ্চালন লাইনকে এসএস পাওয়ার লিমিটেড-১ এর ৪০০ কেভি সুইচ বোর্ডে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার লাইন ইন লাইন আউট (এলআইএলও) করার মাধ্যমে ইভাকুয়েশন করার বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনের জন্য পিজিসিবি কর্তৃক প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদনের নির্দেশনা দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, পিজিসিবির প্রাক সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, মাতারবাড়ী এলাকায় একটি ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্র এবং মহেশখালী থেকে মদুনাঘাট হয়ে ভুলতা পর্যন্ত ৭৬৫ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনাধীন ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্র ২০২৬ সাল নাগাদ তৈরি হবে এবং ৭৬৫ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন ২০২৮ সালের মধ্যে নির্মিত হবে বিধায় মাতারবাড়ী, মহেশখালী পাওয়ার হাব এলাকায় উৎপাদিত প্রায় ৯,৮৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উক্ত ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ইভাকুয়েশন করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া পিপিপি পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে নির্মাণাধীন এসএস পাওয়ার-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওয়ার ইভাকুয়েশন কমার্শিয়াল অপারেশন ডেট (সিওডি) অনুযায়ী ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে করা সম্ভব হবে না।
এ জন্য পিজিসিবি বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে উক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাওয়ার ইভাকুয়েশনের ব্যবস্থা নিয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং আর্থিক দিক বিবেচনায় ২০৩০ সালের আগে আলোচ্য প্রকল্পটি পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের প্রয়োজন নেই বলে পিজিসিবি জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও পিপিপি নির্বাহী বোর্ডের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে পিপিপি প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন থেকে ফেরত আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এতে বলা হয়, পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন না হলে সিসিইএ থেকে অনুমোদন নেয়া হবে। আলোচ্য প্রকল্পটি ছাড়া অন্য যেকোনো একটি ট্রান্সমিশন লাইন প্রকল্প দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি পিপিপির ভিত্তিতে বাস্তবায়নের যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা বাতিল করার জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।