২০২০ সালের শ্লথ কাটিয়ে ইতিবাচক ধারায় এখন দেশের পুঁজিবাজার। এ সময়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ার কথা। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে বিপরীত। চলতি মাসে দুই লাখের ওপরে বিও হিসাব কমে গেছে। এর আগে জুন মাসে এক লাখের ওপরে বিও হিসাব কমে যায়। এতে দেড় মাসের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ বিও হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিও হিসাব কমার মূল কারণ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) নতুন নীতিমালা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন আইপিওতে আবেদন করতে প্রতিটি বিওতে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। এ কারণে আগে যেসব বিনিয়োগকারী শুধু আইপিও করার জন্য বিও হিসাব খুলতেন, তারা তা বন্ধ করে দিয়েছেন।
বাজার বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, বিও হিসাবের ভিত্তিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী কমলেও প্রকৃত বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে। আগে অনেকেই শুধু আইপিও আবেদন করার জন্য নামে-বেনামে বিও হিসাব খুলতেন। এসব বিও হিসাব থেকে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ হতো না, শুধু আইপিও আবেদন হতো। কিন্তু এখন যেহেতু আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সে কারণে শুধু আইপিও’র জন্য খোলা হিসাবগুলো বিনিয়োগকারীরা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল)- এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯ জুলাই বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৯ হাজার ৩৪৬টি, যা জুন মাস শেষে ছিল ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩১টি। অর্থাৎ চলতি মাসে বিও হিসাব কমেছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৫টি। এর আগে জুন মাসে বিও হিসাব কমে ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮৬টি। এ হিসেবে গত দেড় মাসে পুঁজিবাজার ছেড়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৭১ জন বিনিয়োগকারী।
সিডিবিএল’র তথ্য মতে, চলতি মাসে পুরুষ ও নারী উভয় ধরনের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। পাশাপাশি কোম্পানি বিনিয়োগকারীও কমেছে।
বর্তমানে (১৯ জুলাই এর হিসাব) পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ১৭ লাখ ৯ হাজার ৬০০টি। জুন মাস শেষে এই সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৯টি। অর্থাৎ চলতি মাসে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব কমেছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৯টি।
অপরদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৬৭টি। জুন মাস শেষে এই সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৫২ হাজার ২৭৫টি। এ হিসাবে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে ৬৭ হাজার ২০৮টি।
এদিকে বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৪ হাজার ৬৭৯টি। জুন মাস শেষে এই সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৭০৭টিতে। সে হিসেবে কোম্পানি বিও হিসাব কমেছে ২৮টি।
ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ২১ লাখ ৭৮ হাজার ১৮টি। যা জুন মাস শেষে ছিল ২৩ লাখ ৮০ হাজার ৮৭৪টি। অর্থাৎ চলতি মাসে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন ২ লাখ ২ হাজার ৮৫৬ দেশি বিনিয়োগকারী।
অপরদিকে বর্তমানে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৪৯টি। জুন মাস শেষে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৫০টিতে। অর্থাৎ প্রবাসী ও বিদেশি বিও হিসাব কমেছে ২৪ হাজার ২০১টি।