২০০৭ সালে কাজের সন্ধানে বাহরাইনে যান কুমিল্লার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক ওরফে মনির (৪৩)। সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার সুবাদে বিভিন্ন উগ্রবাদী লেখা ও ভিডিও দেখা শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে এসব দেখে ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’এ উদ্বুদ্ধ হন তিনি। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও বিচারকদের উপর হামলার পরিকল্পনা করেন আব্দুর রাজ্জাক।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বাহরাইন থেকে পরিবারের কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন আব্দুর রাজ্জাক। উদ্দেশ্য হামলা চালিয়ে আবারও বিদেশে ফিরে যাবেন। এজন্য পরিবারের কাছে না গিয়ে ঢাকায় আত্মগোপনে থাকেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ণের আগেই শনিবার রাতে মতিঝিলের ফকিরাপুল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরিরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
রবিবার (৬ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
সিটিটিসির প্রধানের দাবি, মনিরের সঙ্গে কোনো জঙ্গি সংগঠনের যোগসাজস পাওয়া যায়নি। সাইবার স্পেসে বিভিন্ন কন্টেন্ট দেখে নিজেই উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে হামলার পরিকল্পনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আব্দুল রাজ্জাক ২০০৭ সালে প্রথমে বাহরাইনে গমন করে এবং একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানীতে লেবার হিসেবে কাজ করে। প্রবাসে থাকা অবস্থায় সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্র মতবাদপুষ্ট বিভিন্ন পোষ্ট-ভিডিও দেখে রেডিক্যালাইজড হয়। পরে সে ফেক ফেসবুক আইডি খুলে নিজের পরিচয় গোপন রেখে গাজওয়াতুল হিন্দ নামক একটি ধর্মীয় উগ্র মতবাদী সংগঠনে যোগ দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে পোষ্ট দেয় এবং অন্যদেরকেও এই জিহাদে যোগদানের আহবান করে।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ সে বাহরাইন থেকে ২০১৮ সালে দেশে আসে এবং সে বছর ২ মাস পরে পুনরায় প্রবাসে গমন করে। প্রবাসে বসে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদপুষ্ট উস্কানিমূলক পোষ্ট দিয়ে অনলাইনে জঙ্গীবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছিলো এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিলো। ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন গাজওয়াতুল হিন্দে যোগদানের বিষয়ে সকলের দোয়া কামনা করেন যাতে “গাজওয়াতুল হিন্দ” এর এই যুদ্ধে যেন আল্লাহ তাকে কবুল করেন। তার এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিজ্ঞ বিচারক এবং পুলিশ বাহিনীকে টার্গেট করে ফেসবুকে পোষ্ট দেয় এবং তাঁদের উপর হামলার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে বাহরাইন থেকে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশে আসে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ঢাকায় এসে সে ধর্মীয় উগ্র জিহাদী মতবাদ বাস্তবায়নে সুযোগের সন্ধানে ঢাকায় ছদ্মবেসে অবস্থান করছিলো। তাছাড়া সে নিজে বাহরাইনে তার সহকর্মী পাকিস্তানী নাগরিকের পরামর্শে পাকিস্তানী সেজে ফেসবুকে একটি ফেক আইডি খুলে। যেখানে সে নিজে পাকিস্তান উর্দু স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশুনা করেছে মর্মে স্টাটাস দেয়, যাতে অন্যরা তার আইডি দেখে তাকে পাকিস্তানী মনে করে এবং সেই আইডিতে সে রাষ্ট্রবিরোধী ও ষড়যন্ত্রমূলক পোষ্ট দেয়।
তিনি বলেন, তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ণের আগেই আমাদের অত্যধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তার সংগে বেশ কিছু সহযোগীর নাম আমরা পেয়েছি। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে সিটিটিটি অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক বিভিন্ন সময় ফেসবুকে দেওয়া যেসব পোস্টের জন্য গ্রেফতার হয়েছেন সেগুলো হুবহু দেওয়া হলোঃ
‘গাজওয়াতুল হিন্দ ডাকছে আমায়। জিহাদের ডাকে নিজেকে কোরবানি করলে তার সকল হিসাব সহজ হয়ে যায়। সকলের দোয়া কামনা করছি, গাজওয়াতুল হিন্দ এর এই যুদ্ধে যেন আল্লা আমারে কবুল করেন। আপনারাও দলে দলে গাজওয়াতুল হিন্দ এর পতাকাতলে আসেন। এই যুদ্ধে আমাদের জয় হবেই হবে।’
‘দেশকে কে না ভালোবাসে? দেশের ভাল কে না চায়? এই ভালোবাসার খাতিরে দেশকে ভালোবেসে প্রয়োজনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে, জুলুম হতে দেশ আবার স্বাধীন করতে হবে। তাই আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে। আর এই যুদ্ধ শুরু হোক সুষ্ঠু বিচার পরিচালনার জন্য। কয়েকটা বিচারক আর পুলিশ নিধন করলেই আমাদের সোনার বাংলা আবার ফিরে পাবো।’
‘দেশকে মুক্ত করতে হলে জানোয়ার পুলিশ ও শুকরের বাচ্চা বিচারকদের উপর হামলা করো। দেশ স্বাধীন করো।’
‘দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকার দলীয় হুজুর গুলাকে আগে ইসলামী ফাউন্ডেশন ছাড়াতে হবে। প্রথমে নিজেদের ভিতরের জিহাদ দরকার। অতপর দেশ। তাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ অপরিহার্য।’
‘সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের টার্গেট করেন। তাদের পরিবার ও পুলিশের উপর হামলা করেন। ১০/১২ টা মরলেই কেল্লা ফতেহ।’
‘সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের ও বিচারকদের টার্গেট করেন। তাদের পরিবার ও তাদের উপর হামলা করেন। ১০/১২ টা মরলেই কেল্লা ফতেহ। বিচারকরা তখন জামিন দেবে। জেল কমে যাবে। দেশ ভালো হবে।’