বইমেলার দিনলিপি
২০ বন্ধুর ২০ গল্পের ভালবাসায় অফুরান স্বপ্নমেঘ। ভালবাসা দিবসের একটি নতুন বই। সংকলিত গল্পের বই। ব্যতিক্রমী বিষয় হলো- ২০ জন তুখোড় লেখকের প্রত্যেকেই ১৯৯৩ সালের এসএসসি ব্যাচের ছাত্র ! সারা দেশের ৯৩’র লেখক থেকে বাছাইকৃত এই গল্প সংকলনটি প্রকাশ করেছে ‘শব্দশিল্প’। আরও অবাক হওয়ার মতো বিরল বিষয়- এই প্রকাশকও একজন ৯৩ ব্যাচের ছাত্র। এবং “স্বপ্নমেঘ” বইটির সম্পাদনাও মানুষটির নিপুণ হাতে করা। বন্ধুদের নিয়ে অমর একুশে বইমেলার মতো একটি পাঠক সমাবেশে ‘৯৩ পরিবারের’ লেখকদের এক মলাটে তিনি তুলে এনেছেন। যা মৌলিক সাহিত্য প্রসারে সুন্দর একটি কাজ। বইটির প্রকাশক ও সম্পাদক মো. শরিফুর রহমান অবশ্যই পাঠক মহলের শুভেচ্ছা পাবেন। এভাবেই বই প্রকাশের দ্বার উন্মুক্ত হবে। প্রকাশকদের এই ধরণের আরও নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। “স্বপ্নমেঘ” সংকলনটি অবশ্যই প্রসংশনীয়। আসি মূল আলোচনায়-
গতকাল ভালবাসা দিবস। মেলা প্রাঙ্গণ ছিল পাঠকের জন্য ঈদের খুশির আমেজে। যেমনটা বিজয় দিবসে আমরা দেখি। সারাদিন উৎসব আমেজে পাঠক ও দর্শণার্থীরা বাংলা একাডেমি ও বইমেলা প্রাঙ্গণে কাটিয়েছে। মূলমঞ্চের অনুষ্ঠানও উপভোগ করেছে সবাই। বইমেলার ১৪তম দিনটি বলা যায় খুব চমৎকারই কেটেছে সবার। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩ টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। স্বপ্নমেঘ ছাড়াও নতুন বই এসেছে ৯১টি। বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাফাত আলম মিশু। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুজাতা হক এবং মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ছিল জনমানুষের সামূহিক আন্দোলন-সংগ্রামের পরম্পরাগত বহুমাত্রিক ঘটনাপুঞ্জের একটি দৃশ্যমান রূপ। আর এই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যাঁরা ব্যক্তি থেকে সময়ের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন, ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। আশি বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি ছিলেন একাধারে মেধাবী ছাত্র, রাজনৈতিক কর্মী, লেখক, গীতিকার, সুবক্তা, এবং আইনজীবী। তবে সব কিছু ছাপিয়ে তাঁর বড়ো পরিচয় তিনি একজন ভাষাসংগ্রামী এবং মুক্তিযোদ্ধা। গাজীউল হক নিজে লেখক ছিলেন, তাই তাঁর জীবনপাঠের ক্ষেত্রে তাঁর রচনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব। পারিবারিকভাবে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা গাজীউল হক ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্ব থেকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন স্বদেশ, ভাষা ও মানুষের জন্য নিবেদিত-প্রাণ। আপসহীনতা, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের কারণে কোনো অপশক্তি তাঁকে আদর্শচ্যুত করতে পারেনি। শুধু ভাষা আন্দোলনই নয়, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও শোষণবিরোধী আন্দোলনে তাঁর সংগ্রামী অভিযাত্রা অব্যাহত ছিল।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক আমৃত্যু তাঁর দুঃসাহসী ও দৃঢ় মানসিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাসে তাঁর কর্ম ও আদর্শ চিরঅম্লান হয়ে থাকবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, কবি শাহেদ কায়েস, লেখক ও সংগীতজ্ঞ তানভীর তারেক এবং কথাসাহিত্যিক মাজহার সরকার।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মারুফুল ইসলাম, মাসুদুজ্জামান, ইসমত শিল্পী এবং সাহেদ মন্তাজ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, মাসুদুজ্জামান এবং চৈতালী হালদার। পুথিপাঠ করেন মো. শহীদ এবং মো. কুদ্দুস মিয়া। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রফিকুল আলম, খুরশীদ আলম, মামুনুল হক সিদ্দিক, মুর্শিদুদ্দীন আহম্মদ, মো. রেজওয়ানুল হক, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, আঞ্জুমান আরা শিমুল, চম্পা বণিক, শরণ বড়–য়া এবং অনন্যা আচার্য। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার (তবলা), সুমন রেজা খান (কী-বোর্ড), মো. আকবর হোসেন (লীড গীটার), আনোয়ারুল হক (বেস গীটার) এবং মনির হোসেন (অক্টোপ্যাড)।
আজ ২রা ফাল্গুন ১৪৩০/১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার। অমর একুশে বইমেলার ১৫তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩ টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : আবদুল হালিম বয়াতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জোবায়ের আবদুল্লাহ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং মোঃ নিশানে হালিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাইদুর রহমান বয়াতি। অর্ধেক মাত্রা শেষ হবে আজ। আর মাত্র ১৫ টি দিন। অবশ্যই বইমেলায় আসা ও বই সংগ্রহ চলবেই। চলবে বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান আয়োজন উপভোগ। ধন্যবাদ বাংলা একাডেমি।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি
তথ্যসেবাঃ সমীর কুমার সরকার,
পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ, বাংলা একাডেমি।