‘বইমেলার দিনলিপি
২৯৮ টি বইয়ের সর্বোচ্চ সংখ্যার বই এসেছে গতকাল। যা পনের দিনের ভেতরও অধিক বই প্রকাশের রেকর্ড। নতুন ও সংস্করণকৃত বই থাকছে। তবে এবার কবিতার বই বের হচ্ছে খুব। কবিদের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে কবিতার প্রতি পাঠকের ভাললাগা ভালবাসা। এটাও ভাল দিক। তবে গায়ের ওপর বইয়ের মূল্য নিয়ে পাঠক ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এ বছর বইয়ের মূল্য খুব বেশি ধরা হয়েছে। প্রকাশকদের কথা, কাগজে ও ছাপার জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি। তবে কোন প্রকাশকই সুন্দর মলাটে ঝঁকঝঁকে বই পাঠকের হাতে তুলে দিতে কার্পণ্য করছেন না। শুক্রবারের বইমেলা ছিল মেলার ১৬তম দিন। মেলা শুরু হয় সকাল ১১ টায় এবং চলে রাত ৯ টা পর্যন্ত। সকাল ১০ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অমর একুশে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩০জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। ক-শাখায় ১ম হয়েছেন ফারহিনা মোস্তাক আযওয়া, ২য় হয়েছেন অংকিতা সাহা রুদ্র এবং ৩য় হয়েছেন ফাবলিহা মোস্তাক আরওয়া। খ-শাখায় ১ম হয়েছেন সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ, ২য় হয়েছেন সুবহা আলম এবং ৩য় হয়েছেন অন্বেষা পন্ডিত এবং গ-শাখায় ১ম হয়েছেন সিমরিন শাহীন রূপকথা, ২য় হয়েছেন আবদুল্লাহ আল হাসান মাহি এবং ৩য় হয়েছেন তাজকিয়া তাহরীম শাশা। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন আবৃত্তিশিল্পী ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ এবং ড. মোঃ শাহাদাৎ হোসেন। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হারিসুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী, ফজিলাতুন নেছা মালিক এবং এস এম মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ।
প্রাবন্ধিক বলেন, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক যে সময়টিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তখন এদেশের মানুষ যক্ষা, ম্যালেরিয়া, বসন্ত ও পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণ করত। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল ডা. আব্দুল মালিকের কর্মদক্ষতা, মেধা ও যোগ্যতা প্রদর্শনের অনুপম ক্ষেত্র। তিনি যে দেশমাতৃকার সুযোগ্য সন্তান সেটি তাঁর কাজের ব্যাপ্তির মাধ্যমেই প্রমাণ করে গেছেন। জাতিকে নিরোগ রাখতে, বিশেষ করে হৃদরোগের ক্ষেত্রে তিনি বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর চিন্তায় সবসময় জাগরুক থাকতো এদেশের মানুষের সুস্বাস্থের বিষয়টি। তিনি মনে করতেন ধনী-গরীব উভয় পরিবারের সন্তানদের জন্যই ন্যূনপক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃত জাতীয় অধ্যাপক আব্দুল মালিকের ভেতর উচ্চশিক্ষা অর্জনের প্রবল আকাক্সক্ষা ছিল। চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত ও আধুনিক করে তোলার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তবে তিনি কেবল স্বপ্নদ্রষ্টাই ছিলেন না, একজন রূপকারও ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি গণমানুষের স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর প্রবল আগ্রহ, দৃঢ় প্রচেষ্টা ও দূরদর্শিতার কারণেই বাংলাদেশের হৃদরোগ চিকিৎসা আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, দেশের মানুষের হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক আব্দুল মালিক আজীবন কাজ করে গেছেন। তিনি কেবল ভালো চিকিৎসকই ছিলেন না, একজন অসাধারণ শিক্ষক ও জনদরদী মানুষও ছিলেন। তাঁর কীর্তির মধ্য দিয়েই তিনি গণমানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন গবেষক ড. এম আবদুল আলীম, কথাসাহিত্যিক নাহার মনিকা, কবি স্নিগ্ধা বাউল এবং শিশুসাহিত্যিক অপু বড়ুয়া। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন সুজন বড়–য়া, মৌলি আজাদ, মাসরুরা লাকী, রিপন আহসান ঋতু এবং মমতাজ রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সোহরাব হোসেন, সাধন কুমার দাশ, দেবাশীষ রুদ্র, ফারহানা পারভীন হক তৃণা এবং নূরননবী শান্ত। এছাড়াও ছিল ফয়জুল্লাহ সাঈদের নির্দেশনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শিল্পবৃত্ত’ ও ‘ঢাকা স্বরকল্পন’-এর পরিবেশনা এবং তাপস মজুমদারের পরিচালনায় ‘ইলা মিত্র শিল্পী সংঘ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মোঃ জাকির হোসেন হাওলাদার, শফি মন্ডল, আরতি রানী সেন, দেবোরাহ জান্নাত, নিজাম উদ্দিন লালনী, রাজিয়া সুলতানা এবং মোসাঃ নিপা আক্তার। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন আব্দুল আজিজ (তবলা), মো. বজরুল ইসলাম বিজু, (কী-বোর্ড), মো. হাসান আলী (বাঁশি), মো. হাসান মিয়া (বাংলা ঢোল) এবং শাওন আহমেদ (দোতারা)। আজ ৪ঠা ফাল্গুন ১৪৩০/১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার। অমর একুশে বইমেলার ১৭তম দিন। আজও মেলা শুরু হয়েছে সকাল ১১ টায় এবং চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত। সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : আগামীকাল সকাল ১০ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : শহীদ সাবের এবং স্মরণ : পান্না কায়সার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে মনির ইউসুফ এবং মামুন সিদ্দিকী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন গিয়াস উদ্দিন, সুভাষ সিংহ রায়, রতন সিদ্দিকী এবং শমী কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি
তথ্যসেবাঃ সমীর কুমার সরকার,
পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ, বাংলা একাডেমি।
ছবি: অনলাইন