বিভাগীয় গণসমাবেশ করার জন্য বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক) চেয়ে আবেদন করেছে বিএনপি। ২৩ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছে দলটি। ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও সেই আবেদনের বিষয়ে শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি প্রশাসন। আগামী ৫ নভেম্বর বিএনপি সমাবেশ করতে চায়। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন হায়দারের বক্তব্য হলো, ‘জনসভা করার জন্য স্থানের অনুমতি অবশ্যই পাবে বিএনপি। তবে সেই স্থানটি কোথায় হবে সেটি চূড়ান্ত হয়নি। পুলিশ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব আমরা।’
জানা যায়, আগামী ৭ নভেম্বর একযোগে দেশের ১০০টি সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ১৪টি সেতুর অবস্থান বরিশালে। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বরিশালের রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে পানি জমে কর্দমাক্ত হওয়া মাঠে বালু ফেলাসহ অন্যান্য কাজও চলছে। ফলে বিএনপি সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি চাইলেও শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু উদ্যান তাদের দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘৫ নভেম্বর বিএনপি সমাবেশ করার পর হাতে থাকবে একদিন। এ একদিনে মাঠ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত করা প্রায় অসম্ভব। এছাড়া ৭ নভেম্বরের কর্মসূচি সামনে রেখে মাঠ তৈরির কাজও অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। এ অবস্থায় তাদের জন্য অন্য ভেন্যু নির্বাচনের চিন্তাভাবনা চলছে।’
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন হায়দার বলেন, ‘এটি তো আসলে জেলা প্রশাসনের একার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় নয়। বিএনপি তাদের সমাবেশ করার জন্য স্থানের অনুমতি অবশ্যই পাবে। সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে আমাদের। এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয় রয়েছে, নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। উনারা বঙ্গবন্ধু উদ্যান চেয়েছেন। সেখানে আমাদের একটা কর্মসূচির প্রস্তুতি চলছে। তারপরও তাদের আবেদন নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। বিকল্প হিসাবে ৪টি স্থান নিয়েও ভাবছি আমরা। আউটার স্টেডিয়াম, জিলা স্কুল মাঠ, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ এবং নগরভবনের সম্মুখস্থ সড়ক। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।’
জনসভাস্থল নির্ধারণ বিষয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘বেলস পার্ক (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) মাঠে জনসভা করার অনুমতি চেয়ে ৭ দিন আগে আবেদন করেছি আমরা। একই আবেদন পুলিশ কমিশনারের কাছেও করা হয়েছে। উনারা যদি ৭ দিনেও সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন তা দুঃখজনক। এতবড় একটা জনসভার ব্যাপারে দলীয় নেতাকর্মীদের আগেভাগে জানিয়ে দিতে হয়। আমরা এখনো তাদের বলতে পারছি না জনসভা কোথায় হবে।’
বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সেতু উদ্বোধন উৎসব আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন আবেদন করেছি তখন এই কর্মসূচি ঘোষিত হয়নি। উনারা (প্রশাসন) চাইলেই আমাদের বেলস পার্ক (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) দিয়ে অন্য কোথাও তাদের কর্মসূচি করতে পারতেন। কেন তারা সেটা করলেন না এটাই প্রশ্ন। আমাদের এই গণসমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে। বেলস পার্ক (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) মাঠই সমাগমের জন্য উপযুক্ত।’
সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির উপদেষ্টা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কোনো গোলমাল গোলযোগ চাইছি না আমরা। শান্তিপূর্ণ একটি সমাবেশ করতে চাই। প্রশাসন যেখানে অনুমতি দেবে সেখানেই সমাবেশ হবে। আমরা একটি পছন্দের কথা বলেছি। তারা (প্রশাসন) দিতে পারলে দেবে নয়তো অন্য কোনো জায়গা নির্বাচন করবে। আমরা অনুমতি পেলেই হবে। আমাদের টার্গেট এ গণবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে যে মানুষ জেগেছে তা শান্তিপূর্ণভাবে দেখাতে। আর কিছু নয়।’
এদিকে বিএনপির এই সমাবেশকে ঘিরে জনমনে ব্যাপক আগ্রহ আর কৌতূহল থাকলেও বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন এখানকার আওয়ামী লীগ নেতারা। যদিও এরই মধ্যে সমাবেশের আগের দিন থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা বাস ধর্মঘট ডেকেছে এখানকার দুটি বাস মালিক সমিতি। লঞ্চ বন্ধ রাখারও আভাস মিলেছে। মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ রাখার দাবিতে ধর্মঘট ডাকা দুই বাস মালিক সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদধারী নেতাদের প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের।
এদিকে মহাসড়কে চলাচলে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশালে ধর্মঘট ডেকেছে থ্রি-হুইলার শ্রমিক ইউনিয়ন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থ্রি-হুইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাস। বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগের দিন থেকে শুরু হবে এ ধর্মঘট। বাসের পর থ্রি-হুইলার শ্রমিক ইউনিয়নেরও ধর্মঘট ডাকা প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘এর আগে খুলনা এবং রংপুরে বাস বন্ধ থাকলেও চলেছে থ্রি-হুইলার। বরিশালে তাও বন্ধ করা হলো। সমাবেশ ঠেকাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করছে ক্ষমতাসীন দল। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। বরিশালে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো মানুষ আসবে।’
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, ‘আওয়ামী ঘরানার নেতৃত্বে থাকা মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকে তাদের সত্যিকারের চরিত্রটা প্রকাশ করেছে। একই ঘটনা খুলনা-রংপুরে ঘটলেও যেমন জনসমুদ্র ঠেকানো যায়নি, তেমনি বরিশালেও ঠেকানো যাবে না।’
বাস ধর্মঘটের বিষয়টিকে পেশাজীবী দুই সংগঠনের গণতান্ত্রিক অধিকার উল্লেখ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সদ্যনির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিএনপির জনসভা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা তাদের মতো জনসভা করবে। তবে পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি আমরা। রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে।’ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘পুরো বিষয়টি দেখভালের জন্য প্রশাসন রয়েছে, পুলিশ রয়েছে। জনসভার নামে বিএনপি যদি কোনো বিশৃঙ্খলা করে, নাশকতা চালায় তবে তা তারাই দেখবে। এখানে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই।’
বরিশালের পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব রকম প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের। সমাবেশ কোথায় হবে সেই সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আমরা এখনো পাইনি। সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এলাকার নিরাপত্তা বিধানে কাজ শুরু করব। সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে হলে আমাদের তো কিছু করতে হবে না। আমরাও চাই শান্তিপূর্ণভাবে সবকিছু হোক। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য সব পক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’