বর্ধিত সময়েও বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি ৪০ ব্যাংক। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে হিসাব চূড়ান্ত করতে না পারায় ব্যাংকগুলো প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থ হয়েছে। উল্লিখিত সময়ে মাত্র ২০টি ব্যাংক বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিতে পেরেছে। বাধ্য হয়ে আইনের লঙ্ঘন ঠেকাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় আরো দুই মাস বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪০ ধারার বিধানের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে ২০২০ সালের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিলের সময়সীমা ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ১২১ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনটি গতকালই ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪০ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক তাদের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরের বছরের প্রথম দুই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দাখিল করতে হবে। কোনো ব্যাংক এ সময়ের মধ্যে বার্ষিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আরো দুই মাস সময় বাড়িয়ে দিতে পারে। আইনের এ বাধ্যবাধকতা অনুসারে ২০২০ সালের ব্যাংকগুলোর বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিলের কথা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় বেশির ভাগ ব্যাংক তাদের হিসেব চূড়ান্ত করতে পারেনি। বর্ধিত সময়ে ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ২০টি ব্যাংক বার্ষিক প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করেছে। এখনো ৪০টি ব্যাংক আর্থিক বিবরণী চূড়ান্ত করতে না পারায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, করোনার কারণে বেশির ভাগ ব্যাংকই আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগের ধাপগুলো সম্পন্ন করতে পারেনি। যেমনÑ বহিঃনিরীক্ষক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরীক্ষকরা মোট ঋণের ৮০ ভাগ নিরীক্ষা করতে পারেননি। আবার অনেক ব্যাংকের সাথে বহিঃনিরীক্ষক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বৈঠক করতে পারেনি। আবার যারা এ দুইটি ধাপ সম্পন্ন করতে পেরেছে তারা পর্ষদের বৈঠক করতে পারেনি। সাধারণত কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে পর্ষদ বৈঠক ডাকতে হয়। সে অনুযায়ী ২৩ তারিখের মধ্যে পর্ষদ বৈঠক ডাকতে হবে। কিন্তু করোনার কারণে বেশির ভাগ ব্যাংক কর্মকর্তা ঠিকমতো অফিস করতে পারছেন না। এসব কারণে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘনের দায়ে ব্যাংকগুলোকে জরিমানা গুনতে হবে। তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করছেন। বেশির ভাগই বিকল্প উপায় বের করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অনুরোধ করছেন।
এ দিকে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ব্যাংকগুলো তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি। এ দিকে আইনের লঙ্ঘন হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১২১ ধারা মতে, জনস্বার্থে সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে আইনের যেকোনো ধারা পরিপালন থেকে রহিত বা অব্যাহতি দিতে পারে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোচ্য ধারার ক্ষমতাবলে গতকাল ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪০ ধারার বিধানের পরিপালনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে আর্থিক প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা দুই মাস বাড়িয়ে অর্থাৎ ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরো দুই মাস সময় পেল।