কিন্তু নিরব প্রশাসন। সিটি কর্পোরেশন। ও প্রত্যেকটি এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ঢাকা শহরের উন্নত অনুন্নত এমন কোন এলাকা চোখে পড়বে না, যেখানে আপনি ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল দেখবেন না ? প্রায়ই এলাকার রাস্তাঘাটে দেখবেন, ম্যালহোল আছে কিন্তু ঢাকনা নাই ! বিষয়টা তুলে ধরতেও আমাদের লজ্জা পেতে হয়। আমরা কতই না সভ্য ও উন্নত দেশের মানুষ হিসেবে নিজেদের পরিচয়ই দেই?
সেদিন এমনই একটা ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল পেরিয়ে আরেকটা ম্যানহোলের সামনে যাই। ভাগ্যিস পেছনেরটার ঢাকনা ছিল না। কিন্তু এটার ঢাকনা ছিল। এবং একটি ছোট্ট শিশু রাস্তার এপার ওপার আসতেই এই ম্যানহোলটার ওপর দিয়ে সে পাড় হয়েছে। কল্পনা করুন, একটু পেছনের ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলটা হলে কি ঘটত? সে যে দেখে যাবে? সেই বুঝ থাকলে তারা কি শিশু থাকত? ঢাকার পথে ঘাটের আছে পাশের স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর ছেলেপুলেগুলো প্রকৃতই অবুঝ শিশু । রোজই এরা মজা কেনার জন্য বাসা থেকে দোকান অবধি দৌঁড়ঝাঁপ করে রাস্তাঘাটে। এই ঘটনাটা মাদারটেক এলাকার আদর্শপাড়ার হলেও, শুধু চোরেরাই আদর্শ মানুষ হতে পারল না?
বলা চলে, প্রায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডেই ঘটছে- ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির সেই আদি আমলের ছিচকে ও ছেচড়া চোরদের দাপট। যা সমাজের সবচেয়ে জঘন্য ও ঘৃনিত একটি অমার্জনীয় অপরাধ। এলাকার সবাইকেও এসব চুরি চামারী রোধ কল্পে এগিয়ে আসতে হবে। শুধুই আইন প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। ঢাকার এক মাথা থেকে আরেক মাথা অবধি ঢু মেরেছি। যতগুলো ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি ঘটেছে। চলাচলের পথ ঝুঁকিপূর্ণই দেখেছি। কবে পুনরায় সড়কগুলোর ম্যানহোলের ঢাকনা লাগানো হবে। পথের মানুষ পাড়াপাড়ে কবে নিরাপদ সড়ক পাবে। সেই প্রত্যাশার পানেই দিন গুনছে নগরবাসী ! ‘চোর শুনে না ধর্মের কাহিনী’ বলেই আমরা খ্যান্ত। কিন্তু প্রচারণার মাধ্যমে সত্যি কি আমরা সমাজের বখে যাওয়া এসব চোরদের ধর্মের কাহিনী শুনাতে পারছি?
সরজমিন প্রতিবেদনটি তৈরিতে যতগুলো এলাকায় ঘুরেছি। বেশিরভাগ এলাকাবাসীই জানিয়েছেন; “যারাই ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির মত এমন অমানবিক কাজটি করছে এরা বেশিরভাগই হয়তো নেশাখোর। নয়তো, বখে যাওয়া যুবক। পরিবারগুলো ওদের মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেনি। নিরিবিলি রাস্তার লোহার ম্যানহোলের দিকেই এদের নজর থাকে বেশি।” জনসমাগম ফেলে গ্রামীন ছোঁয়া সমৃদ্ধ এলাকায় যাবেন। দেখবেন, সেখানের রাস্তাঘাটও আজ নিরাপদ নয়। ভেতরের এলাকার অনেক যুবকও এখন নেশার টাকা জোগাতে ভাংগারীর দোকানে, রাতের আঁধারে- ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করে বিক্রি করে, নেশার টাকা জোগায়। এটা স্পষ্টই প্রমাণিত- শহরের প্রতিটি ভাংগারীর দোকানগুলোতে তল্লাশী ও তদন্ত করলে এই শ্রেণীর ঘাতক চোরদের চিহ্নিত করা সহজ হবে। এমনই একটি ভিতরের এলাকা- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল ৬ ডেমরা ৭০ নং ওয়ার্ড । ঠুলঠুলিয়া নতুন মসজিদ, পুরাতন মসজিদ দুইদিকে দুটো রোড চলে গেছে ডেমরার দিকে। (আলোচ্য প্রতিবেদনের ছবিটি দ্রষ্টব্য) দুটি রাস্তার ওপর প্রায় ম্যানহোলগুলোতেই কিন্তু ঢাকনা নাই ! কি যে অবাক করার বিষয়, আমরা দিনকে দিন কোন লেভেলে পৌঁছে যাচ্ছি ? আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছি আমাদের বিবেককে … ডেমরার রাজাখালি, কাচারির কাউন্সিলর হাজী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান (আতিক) সাহেবের এলাকার ম্যানহোলগুলো সাংঘাতিক ভয়ংকর ও বিপদসংকুল। এই এলাকারই নাজির আহমেদ খান জানালেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচুর রিক্সা, হোন্ডা ও অটো চলাচল করে। সেদিনও একটি হোন্ডা রাতের আঁধারে এই ঢাকনা খোলা ম্যানহোলের রাস্তায় একটি ভয়ানক দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে। আর রোজই বহু শিশু বাচ্চারাও এই দুটি রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে। তিনি আরও জানালেন, ডেমরা বস্তি থেকে নেশাখোর চোরেরা রাতের অন্ধকারে সিএনজি নিয়ে এসে ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করে নিয়ে যায়। এতে বোঝা যায়, ছিচকে চোরদের সাথে আরও বড় কোন গ্যাং জড়িত থাকতে পারে।
ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল চোখে পড়লে দয়া করে কেউ পথ এড়িয়ে চলে যাবেন না। একটি খুঁটিতে লাল কাপড় অথবা একটি গাছের বড় ডাল দিয়ে- “সাবধান চিহ্ন” দিয়ে রাখলেও অনেক উপকার। এড়ানো সম্ভব বড় কোন বিপদ। এতে কোন পথচারি ভয়ংকর দুর্ঘটনা কিংবা মৃত্যুর হাত থেকেও হয়ত রক্ষা পেতে পারেন। কাউন্সিলর অফিসে গিয়েও এলাকার ঢাকনাছাড়া ম্যানহোলগুলোর কথা বলে আসা উচিত। কেননা-প্রত্যেক কাউন্সিলরই আমার-আপনার মহল্লার অভিভাবক। সর্বোপরি, পথচারীদের সাবধানতার সাথে প্রতিটি সড়কের ওপর দিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। লোহা ভারী শিল্প হওয়ায় ম্যানহোলের ঢাকনা- চোরদের কাছে বেশ দামে বিক্রি করার মত একটি অবৈধ ইনকাম। অনেকে সুপারিশ করেছেন, “প্রয়োজনে সুরক্ষিত উপায় সমৃদ্ধ ম্যানহোলের ঢাকনার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অথবা সিমেন্ট, রড দিয়েও স্লাপ নির্ভর কোন ম্যানহোল পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে হবে। এমন কিছু আবিস্কার করতে হবে, যেন কোন ঢাকনা চুরির ক্ষেত্রে কোন চোর আর আগ্রহী হতে না পারে।”
তবেই যদি বন্ধ হয় ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির মত মারাত্মক এই সামাজিক ব্যাধি।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি