করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বেশিরভাগ দেশ ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করায় প্রবাসে কর্মরত বিপুল সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক ইতোমধ্যে চাকরি হারিয়ে বাধ্য হয়েছেন দেশে ফিরে আসতে।
বাংলাদেশে লকডাউনের কারণে আটকে পড়ায় নতুন করে আবার বিদেশ গিয়ে চাকরি করতে পারবেন কিনা সেটা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। খবর বিবিসির।
এখন এই অভিবাসী শ্রমিকদের দেশে ফেরত আসা ঠেকাতে সরকারকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দুইভাবেই সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে দুই লাখ অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন বলে জানা গেছে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তথ্য থেকে।
এছাড়া ২১ মার্চ আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হওয়ার পর এ পর্যন্ত চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন আরও অন্তত ১৮ হাজার শ্রমিক।
সম্প্রতি সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, বিপুল সংখ্যক শ্রমিক চাকরি হারাতে পারেন।
তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে সামনের দিনগুলোয় অভিবাসীদের ফেরত আসার এই স্রোত আরও বাড়বে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগেই এই প্রাদুর্ভাব হানা দিয়েছিল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইতালিসহ আরও নানা দেশে। যেখানে বহু বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন।
ওই দেশগুলোয় বছরের শুরুর দিকেই লকডাউন শুরু হওয়ায় বেকায়দায় পড়ে যান প্রবাসী শ্রমিকরা
বিশেষ করে যারা অবৈধভাবে আছেন, তাদেরকে এখন জোর করে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার বৈধ শ্রমিকদের অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও বেশিরভাগের সেটা নবায়ন করা হচ্ছে না। আবার চুক্তির মেয়াদ যাদের আছে, তাদের অনেককেই ছুটির নামে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ঢাকার দনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রাশেদুল হাসান রুমি গত তিন বছর ধরে সিঙ্গাপুরে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। সেখানকার কোম্পানির সঙ্গে তার আরও দুই বছর কাজের চুক্তি ছিল।
কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর গত ১১ই মার্চ তাকে ছুটির কথা বলে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখন তার ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে আসছে অথচ লকডাউনের কারণে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা হয়নি।
তিনি আদৌ সিঙ্গাপুরে ফিরে গিয়ে কাজ করতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এখন বিদেশ যাওয়ার ঋণ কিভাবে শোধ করবেন, তার আয়ের ওপর নির্ভরশীল সাত সদস্যের পরিবারকেই বা কিভাবে সামলাবেন এমন নানা দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরেছে তাকে।
রুমি বলেন, অনেকের চাকরি চলে গেছে। আমাদের কাজের পারমিট ক্যান্সেল করে দিয়েছে। বলেছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কাটলে দেখা যাবে। কোম্পানি নিতে চাইলে নিবে, না চাইলে নিবে না। কোন গ্যারান্টি নাই।
অভিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুটি উপায়ে সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রবাসীদের বেসরকারি সংস্থা রামুরুর চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী।
অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা নিয়ে ২০১৬ সালের যে আন্তর্জাতিক বিধিমালা আছে সেখানে বলা হয়েছে, যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে অভিবাসী শ্রমিকরা যেই দেশে অবস্থান করবেন, তাদের দায়িত্ব সে দেশের ওপরই বর্তায়।
অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলো সেটা তোয়াক্কা করছে না বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ফোরামের সামনে উপস্থাপন করে সমাধান করতে হবে।
তবে যেসব শ্রমিক করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের ফিরে এসেছেন তাদের দ্রুত দেশের ভেতরেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন তাসনিম সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় এই শ্রমিকরা পুনরায় কবে বিদেশ যেতে পারবেন, সেটা বলা যাচ্ছে না। কেননা ওই দেশগুলোয় সব কিছু স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। এখানে সরকারকে অভিবাসীদের পেছনে বিনিয়োগ করতে হবে।