২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ৩:৫০
২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ৩:৫০

ব্যক্তিগত আক্রমণ সামাল দিতে পারবেন না

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ করলে সামাল দিতে পারবেন না। কার কোথায় কত বাড়িঘর আছে, কত টাকা সরিয়েছেন, কীভাবে সরিয়েছেন, দেশের মানুষ সব জানে এবং তা প্রকাশিত হবে।’ রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রসঙ্গত, শনিবার বিকালে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল টাকার বস্তার ওপর শুয়ে আছেন। ফখরুল এখন চাঙা হয়ে গেছেন। টাকা পাচ্ছেন তো। টাকারে টাকা! আরব আমিরাতের টাকা, দুবাইয়ের টাকা। ফখরুল মহাখুশি।’

ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা নিজের উপার্জনের টাকা ও পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে রাজনীতি করি। আমরা আশা করি না এত বড় দলের সাধারণ সম্পাদক তার মুখ থেকে এ ধরনের অশালীন বক্তব্য আসবে।’

রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে ওবায়দুল কাদের এমন মন্তব্য করেছেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমাকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছেন। সে আক্রমণে তিনি বলেছেন আমরা নাকি দুবাই থেকে টাকা পাই। আর আমি নাকি টাকার ওপর শুয়ে আছি। ওবায়দুল কাদেরকে এটুকু বলতে চাই-অযথা বেশি ঘাঁটাবেন না। ঘাঁটাতে গেলে কেঁচো বের হয়ে আসবে। আপনারা কী করেন, না করেন, গোটা বাংলাদেশের মানুষ জানে। কীভাবে অর্থ উপার্জন করেন সবাই জানে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে রাজনীতি করি। আমরা কারও পয়সায় রাজনীতি করি না। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা চাঁদা দিয়ে প্রতিটি সমাবেশ করছে। এটাই হচ্ছে আমাদের বৈশিষ্ট্য। আমরা কারও কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়ে রাজনীতি করি না। আপনারা কী করেন, এটা বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে সবাই জানে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা কে কোথায় হাজার হাজার কোটি টাকার বাড়ি করছেন। কে কোথায় ব্যাংকের লোন নিয়ে পাচার করে দিচ্ছেন। আপনারা কানাডায় বেগমপাড়া, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করলেন, সব খবর রাখি। কে কয়টা ব্যাংকের মালিক হলেন, কারা আমেরিকায় কতগুলো বাড়ি করেছেন, আর দেশের মানুষের ৪৩ কোটি টাকা দিয়ে সচিবদের জন্য বাড়ি করছেন। এগুলো মানুষের টাকা। এগুলো মানুষের করের টাকা। আপনাদের চেহারার দিকে তাকানো যায় না।’

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কত লোক হয়েছে, তা দেখতে মির্জা ফখরুলকে আহ্বান জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা সরকারি গাড়িঘোড়ার সঙ্গে টাকা ব্যবহার করে যে লোকজন নিয়ে এলেন বিশাল নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে, সরকারি জায়গার মধ্যে, সেখানে চেয়ার পর্যন্ত পূরণ করতে পারেননি। ২২ হাজার চেয়ার ছিল পত্রিকায় এসেছে। তো সেই ২২ হাজার চেয়ার যদি পূর্ণ না হয়, তাহলে কত লোক হয়েছে, আপনারা রিপোর্ট করুন।’

মির্জা ফখরুল সরকারের মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এতই যদি শক্তিশালী হোন, জনগণের প্রতি এতই যদি আস্থা থাকে। এই যে উন্নয়ন, মেগা উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে, আর কিছুদিন হলে উন্নত দেশ হয়ে যাবে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া তো হয়েই গেছে। তাহলে এত ভয় পান কেন? বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেন না কেন? কেন পরিবহণ বন্ধ করে দেন? সভামুখী মানুষের ওপর গুন্ডাদের লেলিয়ে দিয়ে তাদের আঘাত করেন কী কারণে? একটাই মাত্র কারণ, জনগণ যদি ভোট দিতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলো যদি কাজ করতে পারে, তাহলে কোনোদিনই ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবেন না।’

‘খেলা হবে’-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি ‘খেলা হবে, খেলা হবে’ কথায় বিশ্বাস করি না। এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে চাই না। সবাই দেখছেন আমরা কেমন প্রস্তুত হচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর নেওয়াজ আলী, এবিএম মোশাররফ হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদার, তাঁতীদলের আবুল কালাম আজাদ, মজিবুর রহমান, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, লিয়াকত আলী, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।

৭ নভেম্বরের কর্মসূচি : সংবাদ সম্মেলনের আগে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে যৌথ সভা করে বিএনপি। ওই সভার সিদ্ধান্তও জানান মির্জা ফখরুল। বিএনপির মহাসচিব বলেন, মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ৭ নভেম্বর বেলা ২টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উন্মুক্ত আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলোয় দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বেলা ১১টায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতিহাপাঠ করবেন। এছাড়া জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে সারা দেশে জেলা ও মহানগরের পোস্টার পাঠানো হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল।

Facebook
Twitter
LinkedIn